
নিউজ ডেক্স
আরও খবর

চুরি হয়ে যাচ্ছে নতুন ভবনের মালামাল

সুনামগঞ্জে পুকুরে ডুবে ২ বোনের মৃত্যু

বিদেশে গেল না আম, হতাশ ব্যবসায়ীরা

টেকনাফে বিজিবির অভিযানে ১ লাখ ১০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার

প্রেমিকের খোঁজে বেরিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার তরুণী, গ্রেপ্তার ৩

পুলিশ ডেকে প্রতিবেশীকে আটকের দাবিতে আত্মহত্যার চেষ্টা, গৃহবধূ গ্রেপ্তার

কুষ্টিয়ায় কৌশলে তামাক ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন নওফেল
বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে বোরো ধানের খেত

টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় তলিয়ে গেছে রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের হাজার হাজার একর বোরো ধানের খেত। বোরো ধান পেকে আছে জমিতে। গত কয়েকদিনের একটানা বৃষ্টির কারণে কেটে তুলতে পারছেন না কৃষকেরা।
অনেক এলাকায় ধান কাটার জন্য মিলছে না শ্রমিক। নিচু জমিতে জমে গেছে হাঁটু-কোমর পানি। পাকা ধানে বীজ গজাতেও শুরু করেছে। গত চারদিনে রাজশাহীসহ আশেপাশের জেলাগুলোতে ১৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিপাত না কমলে বরেন্দ্র অঞ্চলের অর্ধেক বোরো ধান জমিতে নষ্ট হবে বলে আশঙ্কা করেছেন কৃষকেরা।
রাজশাহীর বরেন্দ্র এলাকার তানোরের কৃষকেরা জানান, বোরো ধান কাটা শুরু হতে না হতেই গত এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। এলাকার অনেক বোরো ধানের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। রোদ না থাকায় ধান কেটে মাড়াই করাও যাচ্ছে না। ফলে কাটা ধানের স্তুপে বীজ গজিয়ে উঠছে।
তানোরের গোপালপুর গ্রামের কৃষক জাহেন আলী বলেন, সাত বিঘা বোরোর মধ্যে দেড় বিঘা মতো কেটে তোলার পর থেকেই অনবরত বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ধান কেটে নাড়া শুকানোর জন্য জমিতে ফেলে রাখতে হয় দুইদিন। কিন্তু রোদ নেই। একবেলা রোদ হলে আরেক বেলায় বৃষ্টি হয়ে ধান ভিজে যাচ্ছে। আবার এই সময়ে শ্রমিক মিলছে না ধান কাটার জন্য। ফলে চরম বিপাকে পড়েছে কৃষকেরা। তানোরের অর্ধেকের বেশি বোরো ধান জমিতেই রয়েছে বলে জানান তিনি।
নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার ধানসুড়া গ্রামের কৃষক দুরুল হোদা বলেন, বোরো ধান কেটে তুলতে পারছে না এলাকার কৃষকেরা। নিচু বিলা এলাকাগুলোর ধান তলিয়ে গেছে বৃষ্টিতে। ঝড় আর বৃষ্টিতে ধান শুয়ে পড়েছে জমিতে। তার ওপর টানা বৃষ্টি চলছে। এলাকার শত শত বিঘা বোরো ক্ষেতে পানি জমে গেছে। কৃষকরা কোনোভাবেই ধান তুলতে পারছে না জমি থেকে। বোরো ধান কাটা মাড়াই বন্ধ থাকায় বরেন্দ্র অঞ্চলের হাটবাজারে নতুন ধানের আমদানি কমে গেছে। ফলে বেড়ে গেছে ধানের ধান দাম। কৃষকরাও ধান বিক্রি করতে না পেরে বিপাকে পড়েছে।
রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চলের চারজেলা নওগাঁ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোরে চলতি মওসুমে ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়। এই পরিমাণ জমি থেকে ১৬ লাখ ৭৯ হাজার ৪৫ মেট্রিক টন বোরো ধান পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ড. আজিজুর রহমান জানান, গত কয়েকদিনে বৃষ্টি হচ্ছে এই অঞ্চলে। বোরো কাটা মাড়াইয়ের জন্য রোদ দরকার। ইতিমধ্যে অর্ধেক বোরো ধানই জমিতে আছে। কোথাও কোথাও বোরোর ক্ষেতে পানি জমেছে। বিশেষ করে বরেন্দ্রের নিচু জমিতে। আবহাওয়া পরিস্কার হলে চাষিরা দ্রুত ধান কেটে তুলতে পারবে বলে আশা করছেন তিনি। তবে একটানা বৃষ্টির কারণে কিছু ক্ষতি হবে কৃষকদের। যদিও তার আশা এতে বোরোর ফলনে খুব বেশি হেরফের হবে না। বৃষ্টির পানি জমে থাকা জমিগুলির আইল কেটে দিয়ে পানি বের করার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। এতে অন্তত ধানের ক্ষতিটা কম হবে।
রাজশাহীর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২৪ মে রাজশাহীতে ১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তার আগের দিন ২৩ মে ৩১ দশমিক ৮ মিলিমিটার ও ২২ মে রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৮৪ মিলিমিটার। গত ২৫ মে ২৫ মিলিমিটার ও ২৬ মে দুপুর পর্যন্ত ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের মতে আরও এক দুইদিন রাজশাহী অঞ্চলে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
এদিকে রাজশাহীর পবা উপজেলার পরিলা ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর হাট এলাকার বোরো চাষি সাজ্জাদ হোসেন জানান চলতি মওসুমে তার ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধান রয়েছে। এরমধ্যে ২৮ জাতের ধান রয়েছে ১ বিঘা ও ২৯ জাতের ধান রয়েছে ২ বিঘা জমিতে। ২৮ জাতের ধান ও ধানের গাছে রঙ ধরেছে। ধান কেটে এখন ঘরে তুলতে হবে। কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতের কারণে ধান কাটা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে জমিতে বৃষ্টির পানি জমে গেছে। তবে বৃষ্টিপাত না হলে পানি শুকাতে ৩ থেকে ৪ দিন লাগবে। নতুবা ধানের খড় পচে নষ্ট হয়ে যাবে। ধানেও বীজ গজিয়ে উঠতে পারে।
রাজশাহীর পবার ধান চাষি মোয়াজ্জোম হোসেন বলেন, যে ধানগুলো জমিতে ন্যুইয়ে পড়েছে সেগুলো হাঁটু পানিতে ডুবে আছে। এসব ধান দ্রুত সময়ে কাটা না গেলে পচে নষ্ট হয়ে যাবে। এছাড়া যে ধানগুলো আগে কাটা ছিল সেগুলোর চারা গজাতে শুরু করেছে। এই ধানের চাল হবে না। আর হলেও ভাতে গন্ধ বের হবে। একই সঙ্গে পানি জমে পচন ধরেছে ধানের খড়ে।
তিনি বলেন, এখন জমি থেকে পানি নিষ্কাশন ছাড়া ধান কাটা যাবে না। জমি থেকে পানি সেচে বের করতে খরচ হবে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। এরমধ্যে ধান কাটতে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তার এলাকায় দুর্গাপুর উপজেলা থেকে শ্রমিক নিয়ে এসে ধান কেটেছেন এলাকার আরেক চাষি সিরাজুল ইসলাম।
ধান কাটার বিষয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ধান কাটতে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে পার্শ্ববর্তী দুর্গাপুর উপজেলা থেকে শ্রমিক এনে চার বিঘা জমির ধান কাটা হয়েছে। তবে এসব ধান মাড়াই করা যায়নি বৃষ্টির কারণে। রোদ না ফুটলে ধান চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে জানান তিনি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, যেসব বোরো ক্ষেতে পানি জমেছে সেগুলো থেকে আইল কেটে পানি বের করতে হবে। আমরা চাষিদের এমনই পরামর্শ দিচ্ছি। জমিতে যেসব ধান কাটা পড়ে আছে সেগুলো তুলে ফেলতে হবে।