আড়াইশ বছরের পুরাকীর্তি হাজী মহসিনের স্মৃতিস্মারক যশোরের মুড়লি ইমামবাড়া

আড়াইশ বছরের পুরাকীর্তি হাজী মহসিনের স্মৃতিস্মারক যশোরের মুড়লি ইমামবাড়া

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২৭ মে, ২০২৫ | ১০:২১ 43 ভিউ
দানবীর হাজী মুহাম্মদ মহসিন। উপমহাদেশের ইতিহাসে দানশীলতার কারণে কিংবদন্তি তিনি। দানের ক্ষেত্রে তুলনা করতে মানুষ তার দৃষ্টান্ত ব্যবহার করে থাকেন। শ্রেষ্ঠ এই দানবীর পুরো বাঙালি জাতির সব ধর্মের মানুষের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র। তার স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক নিদর্শন যশোরের মুড়লি ইমামবাড়া (শিয়াদের মহররম অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত ঘর)। হাজী মুহাম্মদ মহসিনের সৎ-বোন মন্নুজান খানম তার জমিদারির আমলে (১৭৬৪-১৮০৩ খ্রিষ্টাব্দে) ইমামবাড়াটি নির্মাণ করেন। আড়াইশ বছরের প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থাপনাটি বর্তমানে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি। ১৯৮৭ সালের ১৯ মার্চ এটি সরকারের প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ হিসাবে ঘোষিত হয়। সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে দানবীর হাজী মুহাম্মদ মহসিনের স্মৃতিস্মারক মুড়লির ইমামবাড়া আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। জানতে চাইলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক গোলাম ফেরদৌস বলেন, মুড়লি ইমাম বাড়াটি সংরক্ষণের জন্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের নিজস্ব জনবল নিয়োজিত আছে। প্রয়োজন অনুযায়ী স্থাপনাটি সংস্কার করা হয়। চলতি অর্থবছরেও স্থাপনায় সংস্কার করা হয়েছে। জানা যায়, যশোরের মুড়লিতে অবস্থিতি ইমামবাড়াটি মন্নুজান খানম কর্তৃক নির্মিত হলেও এটি হাজী মুহাম্মদ মহসিনের ইমামবাড়া নামে বেশি পরিচিত। আয়তাকার ইমামবাড়া একটি সভাকক্ষ। এর আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ১৮ দশমিক ২৯ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১৫ দশমিক ২৪ মিটার। ইমামবাড়ার অভ্যন্তরভাগ ১০টি স্তম্ভের দ্বারা তিন সারিতে বিভক্ত। খিলানগুলো কিছুটা খাঁজকাটা ও নকশাযুক্ত। সাধারণ পলেস্তারার ওপর ফুলের নকশা রয়েছে। ছাদ সমতল। ছাদের সিলিংয়ে ফুলের স্টাকো নকশা রয়েছে। সামনে চারধাপে সিঁড়ি রয়েছে। এটি শিয়া মুসলিম মতাবলম্বীদের পবিত্র পাদপীঠ। ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলির মন্নুজান খানমের বাবা আগা মুতাহার পারস্যের ইস্পাহান থেকে দিল্লি আসেন। পরে তিনি রাজকার্যে প্রবেশ করে নিজের যোগ্যতা বলে বাদশাহ আওরঙ্গজেবের প্রিয়পাত্রে পরিণত হন। এ সূত্রে তিনি কলকাতার কাছে জায়গির লাভ করেন। মন্নুজান খানম তার বৃদ্ধ বয়সের একমাত্র সন্তান। ১৭১৯ সালে মৃত্যুর সময় আগা মুতাহার তার জায়গিরসহ স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি মেয়েকে দিয়ে যান। আগা মুতাহারের মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রী পারস্য থেকে আগত ও হুগলিতে বসবাসকারী হাজী ফৈজউল্লাহর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের একমাত্র সন্তান হলেন দানবীর হাজী মুহাম্মদ মহসিন। তিনি ১৭৩০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে স্বাধীন বাংলার নবাব সিরাজ উদ্দৌলার মৃত্যুর পর ক্ষমতার অধীশ্বর হন বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর। শর্তানুযায়ী তিনি ২৪ পরগনার কর্তৃত্ব ইংরেজদের হাতে তুলে দেন, যার মধ্যে সালাহ উদ্দিন-মন্নুজান দম্পতির জায়গিরও ছিল। এর পরিবর্তে মীরজাফরের আদেশে যশোরের চাঁচড়া জমিদারির চার আনা সম্পত্তি সালাহ উদ্দিন ও মন্নুজানকে দেওয়া হয়। এ সম্পত্তি সৈয়দপুর জমিদারি নামে পরিচিত। মির্জা সালাহ উদ্দিন নতুন জমিদারি পাওয়ার ছয়-সাত বছর পর ১৭৬৪ সালে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর মন্নুজান মুড়লিতে একটি কাচারি ও সুন্দর একটি ইমামবাড়া নির্মাণ করেন। মন্নুজানের কোনো সন্তান ছিল না। এ কারণে মৃত্যুর আগে ১৮০৩ সালে তিনি বিপুল সম্পত্তির পুরোটাই হাজী মুহাম্মদ মহসিনের নামে লিখে দেন। হাজি মুহাম্মদ মহসিন ছিলেন অকৃতদার ত্যাগী ও ধর্মনিষ্ঠ মানুষ। সম্পত্তির মোহ তাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। মাত্র তিন বছরের মধ্যে ১৮০৬ সালে তার মালিকানাধীন যশোরের সৈয়দপুর জমিদারির সব সম্পত্তি, হুগলি ইমামবাড়া, ইমামবাজার, হাটসহ স্থাবর-অস্থাবর সবকিছু কল্যাণকর কাজে উৎসর্গ করেন তিনি। আরবিতে লেখা দানপত্রে এ সম্পত্তি থেকে আয়লব্ধ অর্থ কোথায় কীভাবে খরচ করা হবে, তাও উল্লেখ করে যান। সরকারি রাজস্ব পরিশোধ করে যে টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে, তা ৯ ভাগ করে তিন ভাগ মহররম উৎসব, ইমামবাড়া ও মসজিদ সংস্কারকাজে, দুই ভাগ মুতাওয়াল্লিদের পারিশ্রমিক এবং চার ভাগ কর্মচারীদের বেতন ও শিক্ষাবৃত্তির জন্য নির্ধারিত হয়। দানপত্রটি লিখে যান ‘সৈয়দপুর ট্রাস্ট স্টেটেট’-এর নামে, যা আজ মৌখিকভাবে মহসিন কল্যাণ ট্রাস্ট নামে পরিচিত। ১৮১২ সালের ২৯ নভেম্বর হাজী মুহাম্মদ মহসিন ইন্তেকাল করেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুলকে যেভাবে হত্যা করা হয় রাশিয়ায় ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাত, সুনামির সতর্কতা জারি ৯৮০০ কোটি টাকা খরচের পরও চট্টগ্রাম নগরী ডুবছেই ইতিহাসের সাক্ষী খাসনগর দীঘি সেই শিক্ষা সচিবের পিএসকেও সরিয়ে দেওয়া হলো পুলিশের ১১ কর্মকর্তাকে বদলি দুপুরের মধ্যে ঢাকাসহ যেসব জেলায় ঝড়বৃষ্টির আভাস ক্যারিবিয়ান দ্বীপে বাড়ি কিনলেই মিলছে পাসপোর্ট পাকিস্তানের রেস্তোরাঁয় মিলছে গাধার মাংস সন্তান কোলে নিয়েই অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে ভাষণ দিলেন নারী সিনেটর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও পড়ালেখা অনিশ্চিত ছাইনুমে মারমার রাউজানে বিএনপির দুপক্ষে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৪০ প্রথমবারের মতো খেলাপি ঋণ ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়াল এক মাসের বিদ্যুৎ বিল ১১ লাখ টাকা, দিশাহারা ঝালমুড়ি বিক্রেতা রাবি প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করছে জামায়াত, দাবি ছাত্রদল সেক্রেটারির তরুণীর প্রেমের টানে চীনা যুবক বাংলাদেশে নিজের বিয়ে ঠেকাতে যা করল স্কুলছাত্রী শাহ আমানতে আমদানি নিষিদ্ধ ক্রিম ও সিগারেট জব্দ বিরতি শেষে কাজে ফিরেছেন টেলর সুইফট নারায়ণগ‌ঞ্জে রাতে আগুন, পুড়লো ২০ বসতঘর