শেয়ারবাজারের স্বাভাবিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে

শেয়ারবাজারের স্বাভাবিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ | ১০:৪৩ 7 ভিউ
শেয়ারবাজারের স্বাভাবিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। বাজারের কোনো কিছুই কাজ করছে না। তারল্যপ্রবাহে ভাটা, অব্যাহতভাবে কমছে মূল্যসূচক এবং নতুন কোনো কোম্পানি আসছে না। অর্থাৎ, উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী-কোনো পক্ষেরই এই বাজারের প্রতি আস্থা নেই। সবকিছু মিলে বাজারের চরম অধঃপতন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই বাজার থাকার দরকার কী। বরং থাকলেই মানুষের ক্ষতি হয়। তাদের মতে, বাজারের এ অবস্থার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দুর্বল নেতৃত্ব। বাজারের বিভিন্ন অংশীজন, মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান এবং বিএসইসির কর্মকর্তাদেরও এই নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ মিলেছে রোববারের বাজার চিত্রে। ওইদিন সকাল থেকে বাজারে ব্যাপক দরপতন হয়। কিন্তু বিএসইসির চেয়ারম্যানের ছুটিতে যাওয়ার খবরে দিনশেষে ঘুরে দাঁড়ায় বাজার। ওইদিন পুরো বাজারে গুজব ছড়িয়ে পড়ে ছুটি শেষে চেয়ারম্যান আর ফিরবেন না। ফলে বাড়তে থাকে সূচক। কিন্তু পরে জানা যায়, এটি সত্য নয়। এরপর সোমবার সূচকের বড় ধরনের পতন হয়েছে। একদিকে বর্তমান কমিশনের শেয়ারবাজারের মতো টেকনিক্যাল খাতের ব্যাপারে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নেই। অপরদিকে যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলার দক্ষতা নেই। পুরো কমিশন বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন। অস্বাভাবিক এবং আদায় অযোগ্য কয়েকটি জরিমানা করে তাদের পারফরম্যান্স দেখানোর চেষ্টা করছেন। এছাড়াও রয়েছে-প্রতিষ্ঠান চালাতে অদক্ষতা, দুর্নীতির অভিযোগ, অপেশাদার আচরণ এবং অধিনস্থদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারসহ পুরো বাজার নেতৃত্বের ওপর বিরক্ত। কিন্তু প্রভাবশালী একজন উপদেষ্টার বন্ধুর মেয়ের জামাই হওয়ায় তিনি স্বপদে বহাল থাকছেন। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৫ আগস্টের পর দেশের অর্থনীতির অন্যান্য খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন এলেও ব্যতিক্রম শুধু শেয়ারবাজার। বৃদ্ধি তো দূরের কথা, উলটো প্রতিদিনই কমছে মূল্যসূচক ও বাজার মূলধন। কমছে তারল্যপ্রবাহ। গত বছরের ১১ আগস্ট ডিএসইর মূল্যসূচক ছিল ৬ হাজার ১৫ পয়েন্ট। সোমবার পর্যন্ত তা কমে ৪ হাজার ৯৫২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এ হিসাবে ৮ মাসে সূচক ১ হাজার ৬২ পয়েন্ট কমেছে। ওই সময়ে গড় লেনদেন ছিল ৭০০ কোটি টাকা। কিন্তু বর্তমানে তা ৩০০ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে। ১১ আগস্ট ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে তা কমে ৬ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ, আলোচ্য সময়ে বাজার মূলধন ৫১ হাজার কোটি টাকা কমেছে। মৌলভিত্তি সম্পূর্ণ বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম নিম্নমুখী। এ সময়ে বাজারে নতুন কোনো আইপিও আসেনি। তবে বিএসইসি বলছে ভিন্নকথা। যারা আগে বাজারে কারসাজি করেছিল, তাদের বেশকিছু লোকজনের ব্যাপারে বিএসইসি ব্যবস্থা নিচ্ছে। ফলে ওই চক্রটি বাজারে পরিকল্পিতভাবে পতন ঘটাচ্ছে। তবে রোববারের বাজার ছিল একেবারে ব্যতিক্রম। প্রতিদিনের ধারাবাহিক পতন দিয়ে বাজার শুরু হয়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ডিএসইর মূল্যসূচক ৫৫ পয়েন্ট কমে যায়। এরপর বাজারে খবর ছড়িয়ে পড়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান ছুটিতে যাচ্ছেন। সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে দাঁড়ায় বাজার। দিনশেষে সূচক আগের দিনের চেয়ে ২২ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে সোমবার আগের দিনের চেয়ে ৪২ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৯৫২ পয়েন্টে নেমে এসেছে। সংশ্লিষ্ট কোনো অংশীজনের সঙ্গে কথাও বলেন না বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান খোন্দকার রাশেদ মাকছুদ। কেউ দেখা করতে চাইলেও সাক্ষাৎ দেন না। তবে আলোচ্য সময়ে তারা বেশকিছু কোম্পানিকে বড় ধরনের জরিমানা করেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ঘটনায় মিডিয়া কাভারেজ ছাড়া তেমন কিছু অর্জিত হয়নি। কারণ, এই জরিমানার টাকা আদায় হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে বর্তমান নেতৃত্বের পরিবর্তন না হলে বাজার ইতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাদের সম্মিলিত বক্তব্য হলো-অদক্ষ নেতৃত্ব এই বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তারা বলছেন, ৫ আগস্টের পর আর্থিক খাতের সব জায়গায় সংস্কার এসেছে। কিন্তু এখনো সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি শেয়ারবাজারে। তাদের মতে, এ খাতে সংস্কারে ৪টি বিষয় জরুরি। এগুলো হলো, সদিচ্ছা, জ্ঞান, চাপমুক্ত থাকা এবং গুণগতমানের নেতৃত্ব। কিন্তু বর্তমান কমিশনের সদিচ্ছা থাকলেও শেয়ারবাজারের মতো টেকনিক্যাল খাতের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নেই। সরকার ও প্রভাবশালীদের পক্ষ থেকে বড় ধরনের চাপ নেই। কিন্তু নেতৃত্বের দুর্বলতা রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হলে পরপর কয়েকদিন ইতিবাচক হয় বাজার। তবে তা ধরে রাখা যায়নি। এ সময়ে বিএসইসিতে পরিবর্তন আসে। একজন চেয়ারম্যানকে নিয়োগ দিয়ে পরের দিন আবার পরিবর্তন করা হয়। পরবর্তী সময়ে বর্তমান কমিশনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু তারা একেবারেই অনভিজ্ঞ। বাজারের ব্যাপারে তাদের কোনো ধারণা নেই। নতুন উদ্ভাবন তো দূরের কথা, অনেক পরিভাষাই তারা বুঝেন না। এছাড়াও নতুন কমিশনের বেশকিছু সিদ্ধান্ত ছিল বিতর্কিত। স্টক এক্সচেঞ্জের পর্ষদ গঠনসহ বেশকিছু সিদ্ধান্ত বাজারে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি করে। বিষয়টি বাজারসংশ্লিষ্টরা ভালোভাবে নেননি। এছাড়া কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান কোনো স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে কথা বলেন না। কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। অর্থাৎ কমিশন অনেকটাই বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন। অন্যদিকে যেসব প্রতিষ্ঠান বেশি লেনদেন করে, এ ধরনের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট বন্ধ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট বন্ধ থাকা যৌক্তিক। তবে প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট বন্ধ রাখলে বিনিয়োগকারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হন। এর ফলে ঘুরে দাঁড়ানো তো দূরের কথা, উলটো টানা পতন অব্যাহত রয়েছে। জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজারের মূল সমস্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। দীর্ঘদিন থেকে এই সংকট চলে আসছে। এর সঙ্গে অর্থনৈতিক বিভিন্ন সংকট, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং জাতীয় রাজনীতিসহ সবকিছু যোগ হয়েছে। ফলে সবার আগে আস্থার সংকট দূর করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অর্থাৎ, বিনিয়োগকারীদের এই নিশ্চয়তা দিতে হবে-কারসাজির মাধ্যমে কেউ তার টাকা হাতিয়ে নিলে বিচার হবে। পাশাপাশি ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। তবে কাজটি খুব সহজ নয়।

বর্ণমালা টেলিভিশন এর সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
ভারতকে হারিয়েই শিরোপা জিততে হবে বাংলাদেশকে প্রত্যাশা পূরণ হবে কী মন্দিরার? ‘শামীম আমাকে স্পর্শ বা এমন কিছু করেননি, রাগের মাথায় বলেছি’ নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কানে যা বললেন বর্ষা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে জুনে আন্তর্জাতিক সম্মেলন দলের নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিলেন দ. কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন উপদেষ্টাকে পানির বোতল মারা ষড়যন্ত্রের অংশ: এ্যানি মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ, ছুরিকাঘাত-মারপিটে বাবা-মা আহত সংসার বুঝে ওঠার আগেই স্বামী হারা সেতু আরব আমিরাতে আ.লীগ নেতাদের সম্পদের পাহাড়, টাকা ফেরত দিতে ইতিবাচক সাড়া ইসরাইলের হামলায় একদিনে নিহত আরও ১১৫ ফিলিস্তিনি আমিরাতে দুটি লক্ষ্যে তাকিয়ে লিটন ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে লিবিয়ায় পাঠাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ রাজধানীর বৈধ বারে অভিযানের নামে বেপরোয়া চাঁদাবাজি শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা: হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ড, খালাস ৩ বাংলাদেশের সীমান্তে কাদের ঠেলে দিচ্ছে ভারত, কেন দিচ্ছে? বাড্ডায় গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, একই পরিবারের ৫ জন দগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবল ঝড়ে নিহত অন্তত ৪ কুরবানির আগে অস্থির মসলার বাজার