
নিউজ ডেক্স
আরও খবর

ভাঙা সড়কে ধানের চারা রোপণ, সিটি করপোরেশনকে ‘লাল কার্ড’

প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় যুবকের কাণ্ড

বাঁশের সঙ্গে ‘নৌকা’ ঝুলিয়ে আ.লীগ কর্মী গ্রেপ্তার

ইচ্ছে পূরণে হেলিকপ্টারে বউ আনলেন প্রবাসী আতিক

২১ ঘণ্টা পর লিটনের মরদেহ ফেরত দিল ভারত

মেঘনায় ডুবে গেল ৭ বাল্কহেড, ১৩ জনকে উদ্ধার

র্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমনের বাবাকে মারধর
বিচারক আছেন, এজলাস নেই আছে জনবল সংকটও

চট্টগ্রামে তিনটি অর্থঋণ আদালতের কার্যক্রম চলছে চরম জনবল সংকট ও অবকাঠামো সংকটের মধ্য দিয়ে। নতুন দুটি আদালত গঠন করা হলেও একটি অস্থায়ী কক্ষে চলছে বিচার কার্যক্রম। প্রয়োজনীয় সহায়ক কর্মী নিয়োগ না হওয়ায় এবং স্থায়ী এজলাস না থাকায় বিচারিক কার্যক্রম কাঙ্ক্ষিত গতিতে এগোচ্ছে না। এতে ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে পাওনা আদায়ের প্রক্রিয়াও ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একটি আদালত পরিচালনায় যেখানে সাতজন সহায়ক কর্মীর প্রয়োজন, সেখানে চট্টগ্রামের অর্থঋণ-২ আদালতে কাজ করছেন মাত্র তিনজন। তাদের মধ্যে দুজনকে ভাড়ায় এনে কাজ চালানো হচ্ছে। পদের বিভাজন না মেনে একজনকে একাধিক দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ একজন সেরেস্তাদারকে কখনো পিয়নের কাজ, আবার পিয়নকে কখনো টাইপিংয়ের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে, যা আদালতের কাজের মান ও গতিকে প্রভাবিত করছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জজশিপের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এনামুল হক আখন্দ বলেন, ‘অর্থঋণ আদালত-১ পুরোদমে চালু রয়েছে। ২ নম্বর ও ৩ নম্বর আদালতের বিচারক আছেন, শুনানিও চলছে। তবে স্টাফ, কক্ষ ও সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে পুরোপুরি চালু হয়নি। ভবিষ্যতে আদালত ভবনে কক্ষ বরাদ্দ হলে নতুন দুটি আদালতও পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ করবে।’
অর্থঋণ আদালতের কাজ মূলত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। চট্টগ্রামের অর্থঋণ-১ আদালতের বিচারক মো. হেলাল, অর্থঋণ-২ আদালতে হাসিবুল হাসান ও অর্থঋণ-৩ আদালতে ফরহাদ রায়হান ভূঁইয়া দায়িত্ব পালন করছেন। এ আদালতগুলোতে বেসরকারি ও সরকারি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার মামলা বিচারাধীন।
এ প্রেক্ষাপটে নতুন আদালত স্থাপন করার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল মামলাজট কমিয়ে ঋণ আদায়ে গতি আনা। এর আগে একটি আদালতে বিচারাধীন ছিল ৭ হাজারের বেশি মামলা। বর্তমানে তিনটি আদালতে মামলাগুলো ভাগ করে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
আদালতের কার্যক্রমে গতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের সাবেক বিচারক মুজাহিদুর রহমানের অবদান উল্লেখযোগ্য। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে আদালতের মামলাজট অনেকটাই কমিয়ে আনেন। তিনি যেসব খেলাপি ঋণে বন্ধকি সম্পত্তি রয়েছে, সেগুলোর রিসিভার নিয়োগ দিয়ে কর্তৃত্ব হ্রাস করেন। এতে খেলাপিরা দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে এগিয়ে আসেন। এ ছাড়া যেসব খেলাপি বিদেশে পালানোর চেষ্টা করছিল, তাদের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং পত্রিকায় সমন প্রকাশের মাধ্যমে দ্রুত কার্যক্রম এগিয়ে নেন।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য মীর শফিকুল বিজন বলেন, ‘এখন তিনটি আদালতে কাজ চলছে। বিচারকরা দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট। পুরোদমে কাজ শুরু হলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে, মামলাজট কমবে এবং ঋণখেলাপিদের চাপও বৃদ্ধি পাবে।’
তবে চ্যালেঞ্জ থেকেই যাচ্ছে। যদিও ২০২৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম ও ঢাকায় মোট পাঁচটি নতুন অর্থঋণ আদালতের জন্য বিচারক ও মোট ৩০টি পদের অনুমোদন দেওয়া হয়, তবে বিচারক নিয়োগ হলেও এখনো সহায়ক জনবল নিয়োগ হয়নি। ফলে নতুন দুটি আদালতে বিচার কার্যক্রমের গতি ব্যাহত হচ্ছে।
বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতগুলো শিগগির স্থায়ী কক্ষ বরাদ্দ পাবে। তখন তিনটি আদালতের বিচারক ও কর্মীরা নিজ নিজ এজলাসে বসে মামলা পরিচালনা করতে পারবেন।
অর্থঋণ আদালতের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে একটি পরিসংখ্যান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে: সরকারের কোর্ট ফি বাবদ শুধু চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালত থেকেই বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার রাজস্ব আসে।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় দেশের ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের জুনে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। কিন্তু ২০২৫ সালের মার্চ শেষে এ পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকায়, অর্থাৎ নতুন সরকার গঠনের ৯ মাসেই খেলাপি ঋণ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
সাবেক সরকারের সময় বিতরণ করা অনিয়মিত ঋণ, লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ ও অনুকূলে থাকা ব্যবসায়ীদের দায় মিলে বর্তমানে এ বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের সৃষ্টি হয়েছে। সেইসঙ্গে ব্যবসার মন্দা ও ঋণ শ্রেণিকরণের নতুন নীতিমালার প্রভাবও রয়েছে।
এ প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতগুলোর কার্যকর ও পূর্ণাঙ্গ পরিচালনার মাধ্যমে বিচারিক গতি ফেরানো না গেলে ঋণখেলাপিদের লাগাম টানা কঠিন হয়ে পড়বে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।