প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) প্রতিবেদনের পর প্রচণ্ড চাপ তৈরি হয়েছে। ভারতের মানুষও চায় না শেখ হাসিনা ভারতে থাকুক। মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচার করা অন্তর্বর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য জানিয়ে তিনি বলেন, আইসিটি খাতের দুর্নীতি নিয়ে শ্বেতপত্র তৈরি করা হবে। সরকার কমিটি গঠন করে দুই মাসের মধ্যে পুরো তথ্য উন্মোচন করবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম মজুমদার। একই দিন প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)-তে এক অনুষ্ঠানে প্রেস সচিব বলেন, তরুণরাই স্বৈরাচারী হাসিনার পতন ঘটিয়েছে। আমাদের বুড়ো লিডারশিপ যেটা পারেনি। শফিকুল আলম বলেন, কিছুদিন আগে ওএইচসিএইচআর যে রিপোর্ট দিয়েছে, তাতে স্পষ্ট শেখ হাসিনা কী ধরনের অপরাধ করেছেন। তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এটা বড় ধরনের অপরাধ। এ চাপের একটা নমুনা দেখা গেছে, ইন্ডিয়া টুডের জরিপে। ওই জরিপ বলছে, ৫৫ শতাংশ ভারতীয় নাগরিক শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চায়। কিছু শতাংশ চাচ্ছে তাকে অন্যদেশে দিতে। মাত্র ১৬-১৭ শতাংশ মানুষ চায় শেখ হাসিনাকে ভারতে রাখতে। শেখ হাসিনাকে ফেরত এনে সশরীরে বিচার করানো সরকারের প্রধান লক্ষ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। শফিকুল আলম বলেন, ১৫-১৬ বছরে শেখ হাসিনার শাসন, কতটা ব্রুটাল (নিষ্ঠুর) ছিল, তা জাতিসংঘের ১২৭ পাতার রিপোর্টে স্পষ্টভাবে এসেছে। প্রেস সচিব বলেন, আমরা তাকে বাংলাদেশে প্রত্যপর্ণের জন্য ভারতকে বলেছি। আমাদের এ চাপ অব্যাহত থাকবে। তার জন্য যত কাজ করা প্রয়োজন, তার সব আমরা করছি।’ আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে সরকারের চিন্তাভাবনা কী জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, আমরা বারবার বলেছি, এ বিষয়ে দেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আমাদের একটাই কথা-আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মী ও সমর্থক জুলাই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত, গুম-খুনে জড়িত, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের সবার বিচার হবে। এটা হওয়ার পর দেশের মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নেবে আওয়ামী লীগের বিষয়ে তারা কী ভাবছেন। প্রধান উপদেষ্টার দুবাই সফরের প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, দুবাইয়ে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ড. ইউনূস সেখানকার ৫ থেকে ৬ জন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। আশা করছি, এ নিষেধাজ্ঞা দ্রুত উঠে যাবে। তিনি বলেন, দুবাই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা দূর করা। তিনি বলেন, এখন সাংবাদিকরা যে স্বাধীনতা ভোগ করছে, তা স্বাধীনতার পর এতদিনে হয়নি। এ সরকারের সময়ে কোনো রিপোর্ট নামাতে বলা হয়নি। তরুণরাই হাসিনার পতন ঘটিয়েছে : একইদিন পিআইবিতে অপর এক অনুষ্ঠানে প্রেস সচিব বলেছেন, কোনো দল নয়, তরুণরাই স্বৈরাচার হাসিনার পতন ঘটিয়েছে। আমাদের বুড়ো লিডারশিপ যেটা পারেনি। তিনি বলেন, ‘দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো আপ্রাণ চেষ্টা করেও শেখ হাসিনার পতন ঘটাতে পারেনি। কিন্তু তরুণরা তা করে দেখিয়েছে।’ আমাদের বুড়ো লিডারশিপ পারেনি হাসিনার মতো ভয়ংকর ডিক্টেটরকে কন্ট্রোল করতে। আমরা অনেকবার চেষ্টা করেছি। আপনাদের মনে আছে বারবার বড় বড় মিছিল হয়েছে নয়াপল্টনের সামনে।’ কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সরকার বিশেষ গুরত্ব দিচ্ছে : দেশে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা গড়ে তুলতে অন্তর্বর্তী সরকার কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন শফিকুল আলম। তিনি বলেন, আমাদের সীমিত ভূমি ব্যবহার করে কৃষি খাতের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বারবার নির্দেশ দিচ্ছেন। এছাড়া সরকার খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও উপকরণের সঠিক ব্যবহারের প্রতি মনোযোগ দিয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার ভবনে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) আয়োজিত ‘টেকসই কৃষির অগ্রযাত্রায় স্টুয়ার্টশিপ’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রেস সচিব এ কথা বলেন। সাংবাদিক এসএম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যান্ট প্যাথোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু নোমান ফারুক। বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগমের সভাপতিত্বে আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সিনজেনটা বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম। সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় শফিকুল আলম : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মো. শফিকুল আলমকে সিনিয়র সচিবের পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সরকারি কর্মকমিশনে (পিএসসি) দুইজন নতুন সদস্য নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এছাড়া একজন অতিরিক্ত সচিবের দপ্তর বদল করা হয়েছে। মঙ্গলবার পৃথক আদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ফেরদৌস আরফিনা ওসমান এবং ড. মো. শরীফ হোসেনকে সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্য এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী সদস্য মো. মজিবর রহমানকে অতিরিক্ত সচিব হিসাবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে বদলি করা হয়েছে।