
নিউজ ডেক্স
আরও খবর

প্রকাশ পাচ্ছে ইউনাইটেড গ্রুপের কেলেঙ্কারি

আওয়ামী সিন্ডিকেট এখনো নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানসহ সব আসামির খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা

অপতথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জাতিসংঘের সহায়তা কামনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা

রোহিঙ্গাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনা জরুরি

আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় আজ রায় ঘোষণা
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক হওয়া উচিত নয় : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক হওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। সোমবার ভারতীয় সাংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। সোমবার প্রকাশিত ওই সাক্ষাৎকারে উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে পরীক্ষায় ফেলা বেশকিছু বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। এর মধ্যে রয়েছে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, ভারত থেকে শেখ হাসিনার বক্তব্য-বিবৃতি দেওয়া, সীমান্ত হত্যা, জেলেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং আদানির বিদ্যুৎ প্রকল্প সংক্রান্ত বিষয়। ওমানের রাজধানী মাসকাটে অষ্টম ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের ফাঁকে রোববার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সাক্ষাৎ হয়। এর পরদিন দ্য হিন্দুকে এ সাক্ষাৎকার দিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে উত্তজনাকর সম্পর্কের মধ্যে এস জয়শঙ্করের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন দ্য হিন্দুকে বলেন, ভারত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে সম্পর্কের একটি ধরনে অভ্যস্ত ছিল। হঠাৎ করেই দ্রুত তা ভেঙে পড়ে। হয়তো নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে কিছুটা সময় লেগেছে, সে কারণে সম্পর্কে অনেক বৈরী মনোভাব ও অস্বস্তি অবশ্যই ছিল। কিন্তু আমার মনে হয়, ছয় মাসের মাথায় সেটা আসলেই শেষ হয়ে যাওয়া উচিত।
তৌহিদ হোসেন বলেন, আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া উচিত, যা ইতোমধ্যে কিছু ক্ষেত্রে ঘটছে। যেমন: বাণিজ্যে অল্পসময়ের জন্য মন্দা দেখা দিয়েছিল; কিন্তু আবার তা চাঙা হয়ে উঠেছে। সুতরাং এগুলো ইঙ্গিত দেয় যে দুই দেশ, অন্তত বেসরকারি খাতে মানুষ একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায় এবং এতে প্রতীয়মান হয় যে আমাদের আগ্রহ আছে। উভয় দেশেরই একে অপরের কাছে স্বার্থ রয়েছে এবং আমাদের তার প্রতি যত্ন নেওয়া দরকার। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে ভারতের উদ্বেগের বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে বসবাসকারী হিন্দু বা অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মুসলিম বা সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মতোই সমান নাগরিক। তারা সম-অধিকার এবং একই রকম সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারসম্পন্ন নাগরিক। এটা বাংলাদেশ সরকারের কাজ, তারা এটা করছে-দেশের অন্য যে কোনো নাগরিকের মতোই তাদের (সংখ্যালঘুদের) সুরক্ষা দেওয়া। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর ভারতীয় মিডিয়ায় এ বিষয়টি নিয়ে প্রায় ব্যাখ্যাতীত উন্মাদনা সৃষ্টি করা হয়, যার বেশির ভাগই মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের পদক্ষেপ জানতে চাওয়া প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে এবং বিচারের মুখোমুখি করতে তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য আমরা ভারতকে বলেছি। যতক্ষণ ভারত সরকার সেটা না করছে, আমরা আশা করব, তারা অন্তত তার ওপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, যাতে তিনি এমন কোনো উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ও মিথ্যা বক্তব্য না দেন।
ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, একটি মব (বিশৃঙ্খল জনতা) কিছু করতে পারে; কিন্তু তাতে সরকারের সমর্থন নেই।
সীমান্তে বিএসএফ-এর বাড়াবাড়ি সম্পর্কে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ২০২৪ সালে সীমান্তে ২৪ জনকে গুলি করা হয়েছে, যার অর্ধেক বিগত সরকারের আমলে। বিশ্বের আর কোথাও এটা হয়নি। আমি মনে করি, আপনি আমার সঙ্গে এ বিষয়ে একমত হবেন। কারণ, ভারতীয় পক্ষ থেকে প্রায়ই বলা হয়, যেহেতু অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হয়, সে কারণে এটা ঘটছে। বিশ্বের প্রতিটি সীমান্তেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হয়; কিন্তু কোথাও মানুষকে এভাবে গুলি করে হত্যা করা হয় না। যদি অপরাধ ঘটে, আপনি তাদের গ্রেফতার করুন এবং আদালতে নিয়ে যান। কারাদণ্ড হোক বা আদালত যে কোনো রায় দিতে পারেন। কিন্তু আপনি তাকে হত্যা করতে পারেন না।
আদানির বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি, আমরা দুটি পর্যায়ে আলোচনা করি-একটি চুক্তি স্বাক্ষরের আগে এবং দ্বিতীয়ত চুক্তি স্বাক্ষরের পরে। আমাদের চুক্তি অনুসারে এগোতে হবে। কিন্তু যদি আমরা মনে করি, এটা সঠিকভাবে করা হয়নি, তাহলে আমরা সর্বদা পারস্পরিকভাবে এটা আবার খতিয়ে দেখার জন্য সম্মত হতে পারি। আমার মতে, আমরা আদানি গ্রুপের সঙ্গে এটা দেখব এবং এটাকে আরও যৌক্তিক করার চেষ্টা করব। আমি কোনো টেকনিশিয়ান, টেকনিক্যাল ব্যক্তি নই। তাই আমি সঠিকভাবে বিশদ বলতে পারছি না। তবে অন্যান্য চুক্তির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, বিদ্যুতের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেশি। তাই আমরা বিশ্বাস করি, এটি নিয়ে আবারও সমঝোতা আলোচনা করা উচিত, বিশেষ করে কয়লা কেনার প্রশ্নে। যে কোনো যৌক্তিক ব্যক্তিই বলবেন যে, বিশ্ববাজারে সম্ভাব্য সর্বোত্তম দামে এ প্রকল্পের জন্য কয়লা কেনা উচিত। এক্ষেত্রে তা করা হয়নি। তাই এ জায়গাগুলোয় আমরা সম্ভবত ভালো মন নিয়ে আদানির সঙ্গে আলোচনা করতে পারি এবং আমরা তা করতে চাই। আপাতত আমরা বিদ্যুৎ দিতে অনুরোধ করেছি। কারণ, আমাদের বিদ্যুৎ প্রয়োজন এবং তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহের ভিত্তিতে আমাদের পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাই আমরা চাই, তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ করুক এবং তারপর আমরা এর জন্য অর্থ প্রদান করব।
ভারত ও বাংলাদেশ সম্পর্ক আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে পারে কি না-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমরা শুধু গত ১৫ বছর কেন দেখব? এমনকি বিএনপির আমলেও (১৯৯৬-২০০১) দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছিল। আমার মনে হয় না, সম্পর্ক নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক হতে হবে। ১৯৯৬-১৯৯৭ এ আমাদের গঙ্গা চুক্তি হয়েছিল। তাই আমি মনে করি, আমাদের দুই দেশের রাজধানীতে যে সরকারই হোক, যে দলই ক্ষমতায় থাক না কেন, তা আমাদের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলা উচিত নয়। কারণ, সম্পর্ক পারস্পরিক স্বার্থ ও শ্রদ্ধার ওপর নির্ভরশীল। আমি বিশ্বাস করি, উভয় পক্ষই বুঝতে পারছে তাদের স্বার্থ কী এবং আমরা ভারতের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে পারি।
বর্ণমালা টেলিভিশন এর সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।