
নিউজ ডেক্স
আরও খবর

ফরিদপুর থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত যাবে ৬ লেনের মহাসড়ক

ধর্মীয় মূল্যবোধের বিরোধিতার নাম সংস্কার নয়: মিজানুর রহমান আজহারী

বাংলাদেশের ব্যবসায়িক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বিদেশী বিনিয়োগ চান প্রধান উপদেষ্টা

চার অঞ্চলে ৬০ কিমি বেগে ঝড়সহ বজ্রবৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে

টিপু মুনশির ১২ ব্যাংক হিসাব ও ১৮ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার অবরুদ্ধ

ইপিআই বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে উঠে এসেছে জনবলের ঘাটতি

বিএমইউ এবং চীনের কুনমিং মেডিকেল ইউনিভার্সিটির মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর
বদলে গেছে ঈদ উদযাপনের ধারা

‘আমাদের সময়ে ঈদের দিন নামাজ শেষে ঘরে ঘরে সেমাই ও মিষ্টি খাওয়ার হিড়িক পড়ত। পাড়ায় পাড়ায় চেনা-অচেনা সবাই কেমন একাত্ম হয়ে যেত। ছোট ছেলেমেয়েরা সালামি নিতে আসত। সন্ধ্যায় থাকত পারিবারিক বিভিন্ন আয়োজন। একে-অন্যের বাড়িতে গিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করত। সে সময় এক অন্যরকম আমেজ ছিল। কিন্তু এখন ঈদে তরুণ-তরুণীদের দিকে তাকালে কেমন জানি ছন্নছাড়া একটা অনুভূতি কাজ করে।’
ঈদের দিনের অনুভূতি জানাতে কথাগুলো বলছিলেন সত্তরোর্ধ্ব রামিজা আক্তার। তাঁর মতো অনেকেরই ভাষ্য, সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে ঈদ উদযাপনের ধারা। আগে ঈদের আনন্দ পারিবারিক পরিমণ্ডলে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন এর গণ্ডি ছাড়িয়েছে। এখনকার ঈদ মানে কে কী পরল, কোথায় ঘুরতে গেল– এসব দেখানোতেই ব্যস্ত। মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহজলভ্যতার ফলে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে উৎসবের দিনগুলোতে পারিবারিক সম্পর্ক থেকে বেশ দূরে সরে গেছে বর্তমান প্রজন্ম। ঈদের তিন থেকে চার দিন সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা ও রাতে কোন কোন পোশাক পরে, কোন ক্যাপশন দিয়ে কী পোস্ট করা হবে– এসব নিয়ে আড্ডা দিতে ব্যস্ত থাকেন তরুণ-তরুণীরা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাইয়ুম বলেন, ‘সামাজিক মাধ্যমে জয়ফুল মোমেন্ট (আনন্দের মুহূর্ত) শেয়ার না করতে পারলে নিজেকে খালি খালি লাগে।’
তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দিনা জামান বলেন, ‘স্রোতের বিপরীতে বা স্রোতের সঙ্গে তাল মিলিয়েও চলে অনেকে। আমিও সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহার করি। কিন্তু তার পরিমিতও বোঝার চেষ্টা করি। কারণ আনন্দঘন মুহূর্তগুলো হয়তো ক্ষণিকের জন্য ক্যামেরাবন্দি হবে, বাস্তবে তো আর আমি পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সেই সময়টা উপভোগ করতে পারব না। তাই চেষ্টা করি দুটো জায়গা ব্যালান্স করার।’
২০০০ সাল পরবর্তী কয়েক বছরের ঈদ নিয়ে স্মৃতিচারণ করে বেসরকারি চাকরিজীবী আনিসা চৌধুরী বলেন, ‘সেই সময়ে দিনের দিন টেলিভিশন থেকে চোখ সরাতাম না। রোজার ঈদের ইত্যাদি তো কখনই মিস করতাম না। আর সঙ্গে আনন্দ মেলা। বিটিভিতে সিনেমা দেখাত। সেগুলো ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করতে না।’
উৎসবের ক্ষেত্রে প্রজন্মের ছন্দপতনের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ফাতেমা রেজিনা ইকবাল বলেন, ‘এই পরিবর্তনটা মোটেও ভালো নয়।’ ছোটবেলার কথা মনে করে তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন আমাদের দুটো ঈদেই স্কুল ছুটি হবে, আর আমরা জাদুঘরে যাব। অথবা হয়তো একটা ঈদ নানুবাড়ি ও অন্যটা দাদুবাড়ি এবং সব ভাইবোন নিয়ে আনন্দের সঙ্গে সময় কাটাব, নতুন একটা পোশাক পরব। বর্তমান সময়ের মতো এত দামি ও বিশেষ কোনো ব্র্যান্ডের না। একেবারে সাধারণ জামা হতো। ঈদের দিন বিভিন্ন বাড়ি গিয়ে ফিরনি খেতাম। সে এক অন্যরকম আনন্দঘন পরিবেশ ছিল।’
ড. ফাতেমা বলেন, ‘এখন ঈদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুধু ঈদের শুভেচ্ছা দিতে দেখা যায়। অনেকে ঈদে এখন দেশের বাইরে যান। আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রয়োজন অবশ্যই আছে। কিন্তু এটি পড়াশোনাসহ প্রয়োজনীয় কাজের ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহার হওয়া প্রয়োজন। গ্রামের বাড়িতে রাস্তার জ্যাম ঠেলে অনেকে যেতে চান না। গেলেও সেখানেও ফোনে ডুবে থাকেন। অথচ গ্রামের ঈদের যে একটা আলাদা আবহ রয়েছে, তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। ঈদের পোশাক ও খাবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করার ফলে সমাজের অন্যস্তরের মানুষের মাঝে ঈদের আনন্দের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ে। তারা নানাভাবে হীনম্মন্যতায় ভোগে। এসব থেকে আমাদের বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে।’
বর্ণমালা টেলিভিশন এর সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।