
নিউজ ডেক্স
আরও খবর

শতবর্ষের অভিজাত অবকাশকেন্দ্র কুমিল্লার ‘রানীর কুঠি’

‘আমি কষ্ট পাচ্ছি, আমাকে বাঁচান’

মধ্যরাতে সরিয়ে দেওয়া হলো খালেদা জিয়ার ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে

টিকাদানে রোল মডেল বাংলাদেশ ; এক ডলারে ফেরত আসে ২৫ ডলার

ডায়েরিতে বাবার ছবি আঁকতেন লামিয়া, লিখেছেন নিজের স্বপ্নের কথা

আমলাতন্ত্রের জালে বন্দি জনস্বার্থ এনবিআরের দুই সচিবের পদ কি ‘সোনার হরিণ’

চলে গেলেন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দার
কাশ্মীর হলো সলতে, হিন্দুত্ব আগুন

বিশ্ব দক্ষিণ এশিয়ার দিকে ক্রমবর্ধমান ভীতি নিয়ে তাকিয়ে আছে। দুটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র-ভারত ও পাকিস্তান-একটি সংঘাতের মুখে দাঁড়িয়ে, যা ইতোমধ্যেই প্রাণহানি ঘটিয়েছে। এটি কেবল কাশ্মীর নিয়ে আরেকটি উত্তেজনা নয়। এটা শুধু নির্বাচনি বছরের রাজনৈতিক নাটকও নয়, যদিও ভারতের সাধারণ নির্বাচন, যা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, মোদির সময় নির্ধারণ ও মুখের ভাষাকে অবশ্যই প্রভাবিত করেছে। যা ঘটছে তা একটি কাঠামোগত সংকট, যার মূলে রয়েছে হিন্দুত্বের ব্যানারে ভারতের রাজনীতির আদর্শগত কঠোরতা।
হিন্দুত্ব হিন্দুধর্ম নয়। এটি একটি জাতিগত-জাতীয়তাবাদী প্রকল্প, যা ভারতকে একটি বহুজাতিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে নয়, বরং হিন্দু সংস্কৃতি, ভাষা ও বংশগতির দ্বারা সংজ্ঞায়িত একটি সভ্য রাষ্ট্র হিসাবে চিত্রিত করে। এর বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তি নিহিত বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভের চিন্তাবিদ ভি.ডি. সাভারকারের মতাদর্শের মাঝে, যিনি ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদের বিরোধিতা করে রক্ত ও বংশের ভিত্তিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ পরিচয় গড়ে তোলার পক্ষে ছিলেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি বিগত দশকে রাজনীতির প্রান্ত থেকে রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রে উঠে এসেছে।
মোদির অধীনে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নির্বাচনি গণতন্ত্রকে সাংস্কৃতিক অসন্তোষের সঙ্গে যুক্ত করেছে। তাদের সাফল্য আকস্মিক নয়। মোদির ২০১৪ সালের উত্থানের পর থেকে হিন্দুত্ব ক্রমাগত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিদ্যালয়ের পাঠক্রম, নাগরিকত্ব আইন, নজরদারি ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক সহিংসতা মেনে নেওয়ার মাধ্যমে। মুসলিম হত্যা এখন আর কোনো অসাধারণ ঘটনা নয়; বরং এটি গভীর অসুস্থতার লক্ষণ। খুব কম মানুষ এতে দণ্ডিত হয়। কেউ কেউ তা উদযাপনও করে। মোদি এসব বিষয়ে খুব কমই মন্তব্য করেন। তার প্রয়োজনও নেই। তার নীরবতা স্পষ্ট।
২০২০ সালে পাশ হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ছিল এই শাসনের অগ্রাধিকারগুলোর সবচেয়ে স্পষ্ট ঘোষণা : প্রতিবেশী দেশের অমুসলিম শরণার্থীদের দ্রুত নাগরিকত্ব দেওয়া, একইরকম নিপীড়িত মুসলিম সংখ্যালঘুদের বাদ দেওয়া। আইনটি নাগরিকদের জাতীয় নিবন্ধনের প্রস্তাবিত তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে লাখ লাখ ভারতীয় মুসলিমকে নাগরিকত্বহীন করে দিতে পারে। সমালোচকরা বলেছিলেন, এটি ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতার আনুষ্ঠানিক মৃত্যুকে চিহ্নিত করে। এখন ফিরে তাকালে, সেই মুহূর্তই হয়তো ছিল বহুত্ববাদের সমাপ্তি নয়, বরং তার সমাধি রচনার একটি সন্ধিক্ষণ।
এই রূপান্তরের কেন্দ্রে রয়েছে কাশ্মীর। ২০১৯ সালে মোদি সরকার আর্টিকেল ৩৭০ বাতিল করে অঞ্চলটির আধা-স্বায়ত্তশাসনের অবসান ঘটায়। এটি করা হয় কোনো পরামর্শ বা সম্মতি ছাড়া এবং মাসব্যাপী যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার মধ্যে। এরপর থেকে কাশ্মীরকে রাজ্য হিসাবে নয়, বরং নিরাপত্তা জোন হিসাবে শাসন করা হচ্ছে। সেখানে প্রতিবাদ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রকাশ্য স্থানে ঈদের নামাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যুবকরা আটকের পর গুম হয়ে যায়। ভারতীয় গণমাধ্যমে কদাচিৎ এসব খবর ছাপা হয়। দেশের অনেক অংশে কাশ্মীরিদের নাগরিকের চেয়ে বেশি মনে করা হয় বোঝা।
পেহেলগাম হামলা নৃশংস ছিল। এটি নৈতিক স্বচ্ছতা দাবি করে। কিন্তু ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়া-ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, জাতীয়তাবাদী বাগাড়ম্বর এবং উত্তপ্ত জাতীয় নির্বাচনের শেষ ধাপে ক্ষোভের মোবিলাইজেশন অন্যকিছুর সংকেত দেয়। এটি শুধু প্রতিশোধ নয়। এটি একটি বার্তা : হিন্দুত্ব দ্বারা পুনঃসংজ্ঞায়িত ভারতীয় সার্বভৌমত্বকে পূর্ণ শক্তি দিয়ে রক্ষা করা হবে। শুধু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নয়, বরং এমন সব জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে, যাদের অবিশ্বস্ত বলে মনে করা হয়।
এই বার্তার আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রতিধ্বনি রয়েছে। বিশ্বজুড়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি জাতিগত-জাতীয়তাবাদী নেতাদের ক্ষমতা সংহতকরণ। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশোধের মঞ্চ নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে এসেছেন। নেতানিয়াহু গাজায় নির্মম হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং প্রকাশ্যে ইসরাইলের বিচারব্যবস্থাকে দুর্বল করছেন। শি জিনপিং চীনে ‘পুনর্জাগরণের’ জাতিগতকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করছেন। সাধারণ পদ্ধতিটি হলো : সংখ্যালঘুদের অপবাদ দেওয়া, ভিন্নমতের অবসান ঘটানো এবং দেশপ্রেমের একচেটিয়া দাবি।
মোদিও সেই সারিতে আছেন। তবে তার অবস্থা আরও দুঃখজনক, কারণ ভারত একসময় বড় কিছু হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেছিল। আম্বেদকর ও নেহেরুর ভারত দুর্বল ছিল, কিন্তু এ রাষ্ট্রের সংবিধান একটি ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করেছিল : নাগরিকত্ব পরিচয় ছাড়িয়ে যায়, এবং রাষ্ট্র সবার জন্য সমান। সেই ধারণা এখন পিছু হঠছে। বর্তমান নির্বাচন সম্ভবত তার চূড়ান্ত অবসান নিশ্চিত করবে। অনেক বহিরাগতের কাছে এটি ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি এমন ভারতীয় অভিবাসীদের কাছে বড় হয়েছি, যারা বিশ্বাস করতেন এমন একটি দেশের, যেখানে ভিন্নতা হুমকি নয়, বরং জীবনের একটি সত্য; যেখানে জটিলতা জাতীয় চরিত্রের অংশ। সেই ভারত হারিয়ে যাচ্ছে। এর পরিবর্তে এমন একটি ভারত আসছে, যা পতাকা বা সংবিধানের প্রতি নয়, বরং সাংস্কৃতিক বিধানের প্রতি আনুগত্য দাবি করে। রাষ্ট্র আর অংশগ্রহণ চাইছে না; সম্মতি চাচ্ছে।
এখন বিপদ শুধু আরেকটি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ নয়, যদিও সেই ঝুঁকি রয়ে গেছে। আরও গভীর বিপদ হলো এমন একটি ভারত তৈরি হচ্ছে, যা নিজের এবং বিশ্বের কাছে অচেনা হয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রতিটি সংঘাত রোধ করতে পারে না। তবে বুঝতে পারে কীভাবে তা করা উচিত। দক্ষিণ এশিয়ায় যা ঘটছে, তা শুধুই ভূ-রাজনীতি নয়; এটি একটি নতুন জাতীয় কাহিনীর উন্মোচন, যা অন্তর্ভুক্তির ওপর নয়, মুছে ফেলার ওপর গড়ে উঠেছে। সামনের কাজ শুধু এই সংকট হ্রাস করা নয়, বরং সেই ভারতকে স্মরণ করা, যা এক সময় ছিল; এবং কল্পনা করা, কীভাবে তা আবার বেঁচে উঠতে পারে। এবং এর জন্য লড়াই থামানো যাবে না।
ই-ইন্টারন্যানাল রিলেশন্স থেকে ভাষান্তরিত
অ্যান্ড্রু ল্যাথাম : অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ম্যাকালেস্টার কলেজ, মিনেসোটা, যুক্তরাষ্ট্র
শ্বেতা শংকর : আইনজীবী
বর্ণমালা টেলিভিশন এর সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।