নিহতের ফোনের ভিডিওতে মিলল ৫ আগষ্ট হত্যাকাণ্ডের চিত্র

নিহতের ফোনের ভিডিওতে মিলল ৫ আগষ্ট হত্যাকাণ্ডের চিত্র

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১০ জুলাই, ২০২৫ | ৬:১৪ 14 ভিউ
গত ৫ আগস্ট ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত এলাকা যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে কমপক্ষে ৫২ জন নিহত হন। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ পুলিশি সহিংসতার ঘটনাগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিবিসি আই-এর এক অনুসন্ধানে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল সেদিন, যেদিন শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে টানা ৩৬ দিনের বিক্ষোভের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। গত বছর সরকারবিরোধী বিক্ষোভের শেষ দিনে ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ ঘটনার বিস্তারিত জানতে বিবিসি শত শত ভিডিও, ছবি, প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য বিশ্লেষণ এবং ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে নানা খবর প্রকাশিত হলেও, নির্বিচারে হত্যার ঘটনাটি কীভাবে শুরু ও শেষ হয়েছিল এবং তাতে কত মানুষ হতাহত হয়েছিল, সে সম্পর্কে বিবিসির অনুসন্ধানে এমন কিছু তথ্য ও বিবরণ উঠে এসেছে, যা আগে সেভাবে সামনে আসেনি। আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচার গুলি ও হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ পুলিশের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে তৎকালীন পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে লিপ্ত হয়েছিলেন এবং আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণে অপেশাদার আচরণ করেছিলেন।’ যাত্রাবাড়ীতে হত্যাকাণ্ড যেভাবে শুরু হয়েছিল অনুসন্ধান চলাকালে ঘটনার এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও বিবিসির হাতে আসে, যেখানে ৫ আগস্ট বিকেলে যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিবর্ষণ শুরুর কিছু মুহূর্ত দেখা যায়। ভিডিওটি এমন একজন আন্দোলনকারীর মোবাইল ফোন থেকে বিবিসি সংগ্রহ করেছে, যিনি নিজেও সেদিন পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান। নিহত ওই আন্দোলনকারীর নাম মিরাজ হোসেন। পুলিশ যখন বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে, সেই সময়ের ভিডিও ধারণ করেছেন মিরাজ হোসেন। মর্মান্তিকভাবে মোবাইল ক্যামেরায় ওই ভিডিওতে তার জীবনের শেষ মুহূর্তও ধরা পড়েছে। মিরাজের মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যরা তার মোবাইল ফোনটি খুঁজে পান এবং ফোনে সংরক্ষিত ভিডিওটি বিবিসিকে দেন। ভিডিওর মেটাডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেদিন নির্বিচারে গুলিবর্ষণের ঘটনাটি শুরু হয়েছিল দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে। ভিডিওটিতে যাত্রাবাড়ী থানার মূল ফটকে বিক্ষোভকারীদের সামনে সেনাবাহিনীর একটি দলকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এরপর হঠাৎ করেই তারা ওই এলাকা থেকে সরে যান। এ ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই যাত্রাবাড়ী থানার ভেতরের পুলিশ সদস্যরা ফটকের সামনে অবস্থানরত বিক্ষোভকারী জনতার ওপর আকস্মিকভাবে গুলিবর্ষণ শুরু করেন। থানার উল্টো দিকে অবস্থিত একটি ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ গুলি চালানো শুরু করার পর প্রাণ বাঁচাতে গলির ভেতর দিয়ে ছুটে পালাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। ওই সময়ের আরেকটি ভিডিওতে আহতদের শরীরে লাথি মারতেও দেখা যায় পুলিশকে। ভাইরাল হওয়া ভুল ভিডিওর সত্যতা উন্মোচন মিরাজের ধারণ করা ভিডিও থেকে হত্যাকাণ্ডটির সূত্রপাতের বিষয়ে স্পষ্ট একটা ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। সেই সঙ্গে এই ভিডিওতে আরও দেখা গেছে, যাত্রাবাড়ীর অন্য আরেক দিনের একটি ভাইরাল ভিডিওকে ভুলভাবে ৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ভিডিও বলে দাবি করা হচ্ছিল। যাত্রাবাড়ী থানার ভেতর থেকে ধারণ করা এই ভিডিওটি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী কয়েক মাসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। অনলাইনে ভিডিওটি লাখ লাখ বার দেখা হয়েছে। গণমাধ্যমের অনেক খবরেও ভিডিওটিকে ৫ আগস্টের যাত্রাবাড়ী হত্যাকাণ্ডের ভিডিও বলে প্রচার করা হয়েছে। তবে ৫ আগস্টের যাচাইকৃত ভিডিওগুলোর সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিবিসি নিশ্চিত হয়েছে, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি আসলে সেদিনের পুলিশি সহিংসতার নয়, বরং অন্য কোনো দিন ধারণ করা হয়েছিল। ৫ আগস্ট ধারণ করা ভিডিওগুলোতে পুলিশকে যখন গুলিবর্ষণ করতে দেখা যায়, তখন যাত্রাবাড়ী থানা প্রাঙ্গণে তাদের একাধিক যানবাহন রাখা ছিল। ৫ আগস্টের ভিডিওতে সেখানে একটি সবুজ এবং সাদা রঙের গাড়ি দেখা যায়। কিন্তু ভাইরাল ভিডিওটিতে গাড়িগুলো নেই। এ ধরনের দৃশ্যমান আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, ভাইরাল ভিডিওটিতে ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলি চালানোর সময়ের নয়। বস্তুত ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছিল আগের দিন, অর্থাৎ ৪ আগস্ট। ওই দিন বিক্ষোভকারীরা যাত্রাবাড়ী থানার সামনে একত্রিত হলে পুলিশ তাদের ওপর হামলা চালায়। ৪ আগস্টের ওই ঘটনার কিছু ভিডিও বিবিসি সংগ্রহ করেছে, যেখানে পুলিশকে থানা থেকে বেরিয়ে মহাসড়কের দিকে গুলি চালাতে যেতে দেখা যাচ্ছে। এ সময় আন্দোলনকারীদের একজনের ধারণ করা ভিডিওর গুলির শব্দের সঙ্গে ভাইরাল হওয়া ভিডিওর গুলির শব্দের মিল খুঁজে পেয়েছে বিবিসি। দুটি ভিডিওতেই মেশিনগান থেকে ছোড়া তিনটি গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে এবং থানার বাইরে একটি ট্রাক থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যাচ্ছে। ৪ আগস্টের আরেকটি ভিডিওতে থানা প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশের বের হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। এই ভিডিওতে থানা প্রাঙ্গণের গাড়িগুলোর অবস্থান ও রঙের সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওটির গাড়িগুলোর অবস্থান ও রং পুরোপুরি মিলে যায়। হত্যাকাণ্ড কতক্ষণ চলেছিল? অনুসন্ধানে বিবিসি দেখেছে, ৫ আগস্ট বিকেলে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল। ঘটনার সময়ের কিছু ড্রোন ভিডিও বিবিসির হাতে এসেছে। ভিডিওর মেটাডেটার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিকেল ৩টা ১৭ মিনিটেও যাত্রাবাড়ী থানার সামনের মহাসড়কে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাচ্ছিল পুলিশ। এরপর তাদের বড় একটি দলকে থানার উল্টো পাশে অবস্থিত একটি অস্থায়ী সেনা ব্যারাকে আশ্রয় নিতে দেখা যায়। ড্রোন ভিডিওতে মহাসড়কের ওপর হতাহতদের একাধিক মৃতদেহ পড়ে থাকতেও দেখা গেছে। ভ্যান-রিকশা এবং বাইকে করে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা। পরবর্তী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ শাহবাগের দিকে চলে যান। আর যারা তখনো যাত্রাবাড়ীতে ছিলেন, তাদের মধ্যে বিক্ষুব্ধ একটি অংশ থানায় আগুন দেন। এ ঘটনায় পুলিশের কমপক্ষে ছয়জন সদস্য নিহত হন। ৫ আগস্ট বিকেলে পুলিশের নির্বিচার গুলির ঘটনার পর আহতদের আশপাশের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা বহু ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করেন। সেদিন যাত্রাবাড়ীতে অন্তত ৩০ জন বিক্ষোভকারী নিহত হন বলে প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছিল। কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত তখনকার খবর, নিহতদের পরিবারের সাক্ষাৎকার, হাসপাতালের নথি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন পোস্টের সত্যতা যাচাই করার পর বিবিসি দেখেছে, ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে কমপক্ষে ৫২ জন সাধারণ মানুষ নিহত হন। এর বাইরে সেদিন আরও অন্তত ছয়জন পুলিশ নিহত হন। ৫ আগস্টের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা হয়েছে। এর মধ্যে থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসানের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হয়েছে, যিনি হত্যাকাণ্ড চলাকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ বাহিনী জানিয়েছে, তারা ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছেন। ‘বাংলাদেশ পুলিশ ইতিমধ্যেই পুঙ্খানুপুঙ্খ ও নিরপেক্ষভাবে বিষয়টির তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। গণ-আন্দোলন সংক্রান্ত যাবতীয় ফৌজদারি মামলা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে, যাতে ঘটনার সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হয়, ’ এক ই-মেইল বার্তায় বিবিসিকে এ কথা বলেছে বাংলাদেশ পুলিশ। ওই ঘটনার সময় সেনা সদস্যদের ভূমিকার বিষয়ে মন্তব্য জানতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যোগাযোগ করা হলে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

বর্ণমালা টেলিভিশন এর সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
সিরিজ জয়ের পর যা বললেন লিটন এখনই ঘরে ফেরা হচ্ছে না বার্সার বাড়ি বিক্রি করলেন সালমান খান পশুপ্রেম থেকে পরিশুদ্ধ জীবনে মিমি চক্রবর্তী বিয়ে করছেন সেলেনা গোমেজ সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হবে ভারত! আলাস্কায় ৭.৩ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা গোপালগঞ্জের ঘটনায় ফেসবুকে ‘উপহাস’, এএসপি প্রত্যাহার প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ গাছের চারা পাহাড়ের মাটিতে রাম্বুটান, সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ভারত সিরিজ স্থগিত, আগস্টের সূচি পূরণে নতুন দল খুঁজছে বিসিবি ট্রাম্পের উদ্দেশ্য শান্তি না বাণিজ্য ঘরে ঢুকে ২ নারীকে কুপিয়ে হত্যা বাড়ছে জাঙ্ক কোম্পানি, শঙ্কায় ডিএসইর বিনিয়োগকারীরা দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে ঝড়বৃষ্টি খাদ্যপণ্যের মান যাচাই করেন দেশের পরমাণু বিজ্ঞানীরা আজ সারা দেশে এনসিপির বিক্ষোভ কর্মসূচি বৃষ্টিতে শিশুর যত্নে সহজ কিছু পরামর্শ এবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহস্পতিবারের পরীক্ষা স্থগিত