গতানুগতিকতা অতিক্রম করতে পারেনি

গতানুগতিকতা অতিক্রম করতে পারেনি

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৩ জুন, ২০২৫ | ৬:৩৯ 60 ভিউ
বাংলাদেশে জুন মাস ঘনিয়ে এলে মিডিয়ায় পরবর্তী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উদ্যোগে বাজেটের অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়। সরকারি কর্তৃপক্ষ জানতে চায় অংশীজনরা বাজেটে কী পরিবর্তন কামনা করেন। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে অতীত বছরের তুলনায় খুব কমই আলোচনা হয়েছে। এর কারণ সম্ভবত বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মনোযোগ নিবদ্ধ করেছে ক্রান্তিকালীন রাজনীতির ওপর। এই রাজনীতির মূল বিবেচ্য বিষয় হলো, ফ্যাসিবাদ থেকে গণতন্ত্রে কীভাবে উত্তরণ ঘটবে। বাজেট প্রণয়নে ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজ ও কিছু সামাজিক গোষ্ঠীর সঙ্গে ডায়ালগ হলেও বাংলাদেশের বিশাল কৃষক-জনতার সঙ্গে অথবা তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনো আলোচনা অনুষ্ঠানের ঐতিহ্য গড়ে ওঠেনি। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও বেদনাদায়ক। যে কৃষক সমাজ মজুরি পণ্য (wage good) উৎপাদন করে, তাদের সঙ্গে পরামর্শহীনতার সংস্কৃতি মোটেও কাঙ্ক্ষিত নয়। বাংলাদেশে বাজেট আলোচনায় যে বিষয়টি উপেক্ষিত সেটি হলো বাজেট দর্শন। কী দর্শনের আলোকে এবং কোন ধরনের কল্যাণ অর্জনের লক্ষ্যে বাজেট প্রণীত হয় তা কদাচিৎই বর্ণিত হয়। এই অবহেলা কাকতালীয় অথবা ইচ্ছাকৃত তা বলা সহজ নয়। বস্তুত যখন কোনো কিছু লুকানোর প্রয়োজন হয়, তখনই সে বিষয়ে নীরবতা পালন করা হয়। বাজেটের আকার কত, বাজেটে ঘাটতি অর্থায়নের পরিমাণ কত, বাজেটে বিভিন্ন ধরনের করের তাৎপর্য কী, বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য কী-বিষয়গুলো নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ হলেও আমার কাছে মনে হয়, বাজেটে এসব ব্যাপ্ত উদ্দেশ্যের তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের ব্যয়ের গুণমান বাজেটে যে অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ করা হয়, তা সঠিকভাবে ব্যয় করা হয়েছে কিনা, টার্গেট গ্রুপের কাছে বরাদ্দকৃত অর্থের বেনিফিট পৌঁছেছে কিনা এবং বরাদ্দকৃত অর্থ নিয়ে কারচুপি, জালিয়াতি ও দুর্নীতি হয়েছে কিনা-এসব বিষয় বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য বিশেষভাবে বিবেচ্য। বাজেটকেন্দ্রিক সুশাসন নিশ্চিত না হলে জনগণের করের টাকার সদ্ব্যবহার নিশ্চিতকরণ সম্ভব নয়। দেশে একটি অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস বিভাগ থাকলেও এই বিভাগের পক্ষে ব্যষ্টিক পর্যায়ে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের গুণমান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। দেশে একটি সুষ্ঠু ও জনদরদি স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ছাড়া বরাদ্দকৃত অর্থের ওপর দেখভাল সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে মিডিয়া একটি ওয়াচ ডগের ভূমিকা পালন করতে পারে। এবারের বাজেটের সম্ভাব্য আকার ধরা হয়েছে সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে গত অর্থবছরের চেয়ে বাজেটের আকার কমেছে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় ঢাউস আকারের বাজেট দেওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছিল। এখন আমরা বুঝতে পারি ঢাউস আকারের বাজেট কার্যত ঢাউস আকারের দুর্নীতির শামিল ছিল। সে সময় গ্রামাঞ্চলে ক্ষুদ্র অবকাঠামো নির্মাণে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয়ের জন্য কোনো ধরনের টেন্ডার আহ্বানের প্রয়োজন ছিল না। এই নীতির মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে আওয়ামী মস্তানরা বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করে নেয়। এমন প্রেক্ষাপটে বাজেটের আকার সাত হাজার কোটি টাকা কমে যাওয়া কোনো উদ্বেগের বিষয় নয়। বাজেটের আকার রাজস্ব সংগ্রহের সক্ষমতার ওপরও নির্ভর করে। বাংলাদেশে এই সক্ষমতা লজ্জাজনকভাবে খুবই দুর্বল। এবার রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর জোগান দেবে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৮৮.৪৭ শতাংশ। এ ছাড়া অন্যান্য খাত থেকে আসবে ৬৫ হাজার কোটি টাকা বা মোট লক্ষ্যমাত্রার ১১.৫৩ শতাংশ। এখন দেখার বিষয় কতটা দক্ষতার সঙ্গে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রয়াস চালানো হবে। অতীত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা বলে, এই প্রয়াস কখনোই সফল হয়নি। বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে জিডিপির ৩.৬২ ভাগ। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ থেকে আসবে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা যা মোট ঘাটতির ৫৫.৩ শতাংশ। আর বিদেশি ঋণ থেকে আসবে এক লাখ এক হাজার কোটি টাকা বা ৪৪.৭ শতাংশ। যদিও ঘাটতি বাজেট অর্থনৈতিক বিচারে নিয়মবহির্ভূত কিছু নয়, তবুও ঘাটতি অর্থায়ন সীমিত রাখা মূল্যস্ফীতি রোধ ও প্রকৃত খরচের সংকুলান করার জন্য প্রয়োজন। প্রতিবছরের বাজেটে একটি বড় অঙ্কের টাকা চলে যায় ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করতে। এর ফলে বাজেটে উল্লিখিত বরাদ্দের একটি অংশ প্রত্যক্ষভাবে জনকল্যাণে আসে না। নতুন বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ১০ থেকে ২০ ভাগ মহার্ঘ-ভাতা ঘোষণা করা হয়েছে। বিদ্যমান অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের সময় মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার ঘোষণা অভিনন্দনযোগ্য। তবে অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ঘোষণার পরপরই বাজারে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ে। বাজেট বাস্তবায়নে লক্ষ্য রাখতে হবে মহার্ঘ-ভাতা থেকে প্রাপ্ত সুবিধা যেন মূল্যস্ফীতির তোড়ে হারিয়ে না যায়। ঘোষিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি সহনশীল পর্যায়ে রাখার ঘোষণা করা হলেও বাস্তবে তা কতটুকু সম্ভব হবে সেটি নিয়ে সন্দেহ পোষণের সুযোগ রয়েছে। ঘোষিত বাজেটে পুঁজিবাজারকে চাঙা করার জন্য বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো কাঠামোগতভাবে ভেঙে পড়া পুঁজিবাজারকে এসব প্রণোদনার মাধ্যমে কতটা চাঙা করা সম্ভব হবে। অর্থ উপদেষ্টা কালোটাকা সাদা করার সুযোগ থাকবে না আগে বললেও গত বছরের মতো এবারও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে। এ সুযোগের ব্যবহার সামান্যই হয় এবং এটি অনৈতিকও বটে। প্রকৃত মূল্যে রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিতে করহার হ্রাস করা একটি সৃজনশীল উদ্যোগ। করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ ৫০ হাজার টাকায় অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আশা করা গিয়েছিল, করমুক্ত আয়সীমা আরও বর্ধিত করে মূল্যস্ফীতির বাজারে নিম্ন আয়ের মানুষগুলোকে কিছুটা স্বস্তি প্রদান করা হবে, তা হয়নি। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকার প্রায় ৯৫ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে পারে, যা মোট বাজেটের ১২.১৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৯০ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা, যা ছিল মোট বাজেটের ১১.৩৫ শতাংশ। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় হ্রাস মোটেও অভিনন্দনযোগ্য নয়। তবে এ খাতের অন্তর্নিহিত দুর্নীতি রোধ করতে পারলে প্রকৃত অর্থেও অধিকতর কল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব। তবে এ ধরনের উচ্চাশা না করাই শ্রেয়। সবমিলিয়ে ঘোষিত বাজেটটি গতানুগতিক। সম্ভবত দেশের অর্থনৈতিক সংকট বিবেচনায় নিয়ে বৃহত্তর আকারের বাজেটের ফানুস ওড়ানো থেকে বিরত থেকেছেন অর্থ উপদেষ্টা। আশা করব, ভবিষ্যৎ দিনগুলোতে বাজেট প্রণয়নে Quality of expenditure-এর দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হবে।

বর্ণমালা টেলিভিশন এর সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
রাতের আঁধারে চুপিচুপি প্রেমিকার ঘরে ঢুকে ঘুমিয়েই পড়লেন প্রেমিক! ঘুম ভাঙতেই যা ঘটল সচিবালয়ে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধসহ ৭ নির্দেশনা সুপ্রিম কোর্ট-প্রধান বিচারপতির বাসভবনের আশপাশে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ রামগতিতে ট্রলারে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ঘটনায় নিহত বেড়ে ২ নতুন আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন পুতিন, দাবি জেলেনস্কির রিয়া মনির তালাক-নোটিশ পেয়ে জানাজার দিনক্ষণ জানালেন হিরো আলম ‘আপনাকে কে বসিয়েছে তার কলিজা খুলে ফেলব’— শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানকে বিএনপি নেতার হুমকি ‘চাঁদা তুললে পুরস্কার, ধরা পরলে বহিষ্কার ও ভাইরাল হলে গ্রেপ্তার’ এইবার আর চুপ নয় সমস্ত শক্তি দিয়ে দাঁড়িপাল্লার পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাব: কৃষ্ণা বালা রানী ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক ঢাকায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মহাসমাবেশ আজ সবসময় ভেবেছি শিল্পীসত্তা যেন বিক্রি না হয়ে যায়: ঋতাভরী ইসির হারানো ক্ষমতা ফিরছে, জোট হলেও ভোট নিজ প্রতীকে আবাসন সংকটে ডিএমপি, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে আতঙ্কে রাত কাটে পুলিশের স্থলপথে বাংলাদেশের আরও ৪ পাটপণ্য আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা বেলুচিস্তানের মাজিদ ব্রিগেডকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করল যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ, খুবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি রাবি উপাচার্যের বাসভবনের গেটে তালা দিলেন সাবেক ছাত্রদল নেতা ডাকসুর মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু মঙ্গলবার আমরা দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে আছি, প্রেমের কথা স্বীকার করলেন জয়া