গণমাধ্যমের কালো দিন : আর না ফিরুক অভিশপ্ত সময়

গণমাধ্যমের কালো দিন : আর না ফিরুক অভিশপ্ত সময়

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৬ জুন, ২০২৫ | ১১:০৯ 8 ভিউ
একটি কথা প্রচলিত আছে, কাউকে যখন প্রকাশ্যে স্বৈরাচার বলা যায়, তিনি আসলে স্বৈরাচার নন। কিন্তু যখন স্বৈরাচার কথাটি মুখে আনা যায় না, তখনই সত্যিকারের স্বৈরাচারের সময়। এমন অবস্থাই ছিল গত ১৫ বছর। পরিস্থিতি এমনই ভয়াবহ ছিল, গণমাধ্যমের জন্য কালো দিনটিও পালন করা যাচ্ছিল না। ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন বাকশাল সরকার মাত্র চারটি পত্রিকা সরকারি ব্যবস্থাপনায় রেখে সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়। ফলে কথা বলার স্বাধীনতার অবসান ঘটে, জনগণ সঠিক তথ্য ও বস্তুনিষ্ঠ খবর জানা থেকে বঞ্চিত হয়। গোটা দেশে যেন অন্ধকার নেমে আসে। একই সঙ্গে হাজারো সাংবাদিক রাতারাতি বেকার হয়ে পড়েন। এখানেই শেষ নয়, জবরদস্তিমূলকভাবে সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশাজীবীকে বাকশালে যোগদানে বাধ্য করা হয়। অনেক সাংবাদিক সেদিন জীবন-জীবিকার ভয়ে বাকশালের ফরম পূরণ করেন। এ কারণেই সংবাদমাধ্যম ও বাক্স্বাধীনতা হরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি কালো দিন হিসাবে চিহ্নিত। জাতীয় ইতিহাসের অন্যতম কলঙ্কজনক দিন এটি। সাংবাদিক সমাজ প্রতিবছর এ দিনটিকে ঘৃণা ও ধিক্কারের সঙ্গে ‘কালো দিবস’ হিসাবে পালন করে থাকে। ১৯৭৮ সালে অবিভক্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বার্ষিক কাউন্সিলে গৃহীত সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ দিনটিকে কালো দিবস ঘোষণা করা হয়। কালো দিবস নিয়ে দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত প্রতিবেদন (১৭ জুন ১৯৭৫) থেকে জানা যায়, ‘সংবাদপত্র সম্পর্কে সরকারের নতুন ব্যবস্থা অনুযায়ী জনাব নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক নিযুক্ত হইয়াছেন। উল্লেখযোগ্য যে, সরকার দৈনিক বাংলা ও বাংলাদেশ অবজারভার ব্যতীত সব পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করে এবং পরে ইত্তেফাক ও বাংলাদেশ টাইমসকে নতুনভাবে ডিক্লারেশন প্রদান করেন। নতুন ব্যবস্থায় জনাব নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী ইত্তেফাকের সম্পাদক, মুদ্রাকর ও প্রকাশক হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করিয়াছেন।’ দৈনিক ইত্তেফাকে (১৭ জুন ১৯৭৫) প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, “রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবাদপত্র পরিচালনাসংক্রান্ত ব্যাপারে নতুন নীতি ঘোষণা করিয়া দুইটি অর্ডিন্যান্স জারি করিয়াছেন। নতুন ব্যবস্থা অনুযায়ী আজ (মঙ্গলবার) হইতে সারা দেশে দৈনিক ইত্তেফাক, বাংলাদেশ অবজারভার, দৈনিক বাংলা এবং বাংলাদেশ টাইমস এ চারটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হইবে। জনাব নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী, জনাব ওবায়দুল হক, শেখ ফজুলল হক মনি ও জনাব এহতেশাম হায়দার চৌধুরী যথাক্রমে দৈনিক ইত্তেফাক, বাংলাদেশ অবজারভার, বাংলাদেশ টাইমস ও দৈনিক বাংলার সম্পাদক নিযুক্ত হইয়াছেন। সরকার আরও ১২২টি সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকার ডিক্লারেশন বহাল রাখিয়াছেন। এসব পত্রপত্রিকা ছাড়া সরকারের বিনা অনুমতিতে আর কোনো পত্রিকা প্রকাশিত হইবে না। বাংলাদেশ সরকার সংবাদপত্র (ডিক্লারেশন বাতিল) অর্ডিন্যান্স ১৯৭৫ জারি করিয়া ‘বাংলাদেশ অবজারভার’ ও ‘দৈনিক বাংলা’ এবং ১২২টি সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা ভিন্ন বাদবাকি সব পত্রপত্রিকার ডিক্লারেশন ১৭ জুন হইতে বাতিল করিয়া দিয়াছেন। বাসস ও এনা পরিবেশিত খবরে বলা হয় : এ অর্ডিন্যান্স জারির অব্যবহিত পরে সরকার দৈনিক ইত্তেফাক ও বাংলাদেশ টাইমস এ দুই দৈনিক সংবাদপত্রও প্রকাশের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। অতঃপর ওই চারটি দৈনিক এবং ১২২টি সাময়িকী ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি ভিন্ন আর কোনো পত্রিকা বা সাময়িকী প্রকাশিত হইবে না।” বাকশাল আমলের পরিস্থিতি কিন্তু সদ্য বিদায় নেওয়া সরকারের সময়েও ঘটেছিল। আর তা ঘোষিতভাবে না হলেও অঘোষিতভাবে হয়েছিল। প্রায় ১৫ বছরে আমার দেশ, দিনকাল, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, সিএসবিসহ জনপ্রিয় সংবাদপত্র, বেসরকারি টেলিভিশন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কয়েক হাজার সাংবাদিককে বেকারত্বের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নয়া দিগন্তসহ অনেক পত্রিকাকে বিজ্ঞাপন থেকে বঞ্চিত করে দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। বিগত সরকারের আমলে ৬০ সাংবাদিক খুন হয়েছেন। সত্য প্রকাশের অপরাধে বিগত সরকার দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে এবং ছাপাখানায় তালা দিয়ে পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়। অন্যদিকে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, রিমান্ডে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। এছাড়া মতিঝিলে অবস্থান নেওয়া হেফাজতে ইসলামের ওপর পরিচালিত গণহত্যা আড়াল করতে বিগত সরকার দিগন্ত টেলিভিশন এবং ইসলামিক টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়। সেই সরকার ক্ষমতায় আসার কিছু দিন পর বেসরকারি টিভি চ্যানেল ওয়ান এবং পরীক্ষামূলকভাবে সম্প্রচারিত যমুনা টিভি বন্ধ করে দেওয়া হয়। অথচ মানুষ জন্মগতভাবেই স্বাধীন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। মানুষ যেমন নিজের কথা বলতে চায়, তেমনই অন্যদের কথাও শুনতে চায়। এ অধিকার কেড়ে নেওয়া মানে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা থেকে বঞ্চিত করা, সমাজকে মানসিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়া। কালো আইনের ফলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার অভাবনীয় বিপ্লবের মধ্য দিয়ে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর সাংবাদিকদের লেখার ও মতপ্রকাশের সুযোগ করে দেন, সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক সব কালাকানুন শিথিল করে দেশের সব জায়গা থেকে সংবাদপত্র প্রকাশে উৎসাহ প্রদান করেন। গত ৫ আগস্ট দেশে যে পরিবর্তন হয়েছে, তাতে আশা করা যায়, ওই কালো দিবসের স্মৃতি আর ফিরবে না। বাংলাদেশের মানুষ প্রমাণ করেছে, তারা কথা বলার স্বাধীনতা হরণকে মেনে নেয় না। যে কোনো মূল্যে তারা এ স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মানুষকে বাঁচতে হবে মানুষের মতো করে, নিজে কথা বলবে, অন্যদের কথা শুনবে। সভ্য জাতি হিসাবে বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বদরবারে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করবে। আর এর মাধ্যমেই কালো দিবস চিরদিনের জন্য বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেবে। মোহাম্মদ হাসান শরীফ : গণমাধ্যমকর্মী

বর্ণমালা টেলিভিশন এর সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
১৩ ছক্কায় যুক্তরাষ্ট্রে ম্যাক্সওয়েলের ‘তাণ্ডব’ সব ছেড়ে আধ্যাত্মিকতায় জ্যাকুলিন, কে দেখালেন আলোর দিশা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম কোন কাজটি করেন আমির ‘হুঁশিয়ারির সময় শেষ, এবার শাস্তির পালা’: ইরানি সেনাপ্রধানের হুঁশিয়ারি নেতানিয়াহুকে চুরি হয়ে যাচ্ছে নতুন ভবনের মালামাল সুনামগঞ্জে পুকুরে ডুবে ২ বোনের মৃত্যু বিদেশে গেল না আম, হতাশ ব্যবসায়ীরা ভিন্নমত প্রকাশকে ‘নিরাপত্তা হুমকি’ দেখত হাসিনার সরকার সন্ধ্যায় হাসপাতালে যাবেন খালেদা জিয়া ইসরাইলের আকাশসীমা দখলে নেওয়ার দাবি ইরানের এআই যুদ্ধের সূচনা, কতটা সফল হবে ডিপসিক? শান্ত-মুশফিকের সেঞ্চুরিতে প্রথম দিনটা বাংলাদেশের ধ্বংসযজ্ঞে অনড় ইরান-ইসরায়েল তবু আপন কর্তব্যে অবিচল সেনাবাহিনী ঘাটতি বাজেটের অর্থায়নই প্রধান সমস্যা ঢাকাসহ দেশের ১৭টি অঞ্চলে ঝড়ের সম্ভাবনা শপথ ছাড়াই ‘নির্দেশনা’ দিচ্ছেন ইশরাক, সরকার নীরব তেহরান থেকে বাংলাদেশিদের সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ ঢাকায় পাকিস্তানের নতুন হাইকমিশনার ইমরান হায়দার টেকনাফে বিজিবির অভিযানে ১ লাখ ১০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার