অত্যধিক তাপমাত্রায় দ্রুত পেকে ঝরে পড়ছে আম

অত্যধিক তাপমাত্রায় দ্রুত পেকে ঝরে পড়ছে আম

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৬ জুন, ২০২৫ | ১১:১৭ 23 ভিউ
সহায়ক প্রকৃতি ও অনুকূল আবহাওয়ায় চলতি মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলে আমের ভালো ফলন হয়েছে। মৌসুমের শুরু থেকে পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত স্বল্প বিরতিতে প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত হওয়ায় এ বছর আমের আকার বড় ও পুষ্ট হয়েছে। আমের গুণগত মানও বেশ ভালো। এ বছর রাজশাহী অঞ্চলের বাগানগুলোতে গাছে গাছে আম ঝুলতে দেখে চাষিরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। আম বিক্রি করে ভালো পয়সা পাবেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এবার আমের কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। চাষি, বাগান ও মোকাম পর্যায়ে গত বছরের তুলনায় এবার সব ধরনের আমের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। এতে চাষিদের পাশাপাশি মৌসুমি বাগান ব্যবসায়ীরাও বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আম চাষি, বাগান ব্যবসায়ী ও মোকাম আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চলে চলমান তাপপ্রবাহ ও বিদ্যমান উচ্চ তাপমাত্রার কারণে সব শ্রেণি ও জাতের আম গাছে পেকে ঝরে পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে চাষিরা গাছে আম রাখতে পারছেন না। সব জাতের আম একসঙ্গে মোকামে আসায় দাম কমে গেছে। ঈদের দীর্ঘ ছুটির কারণেও চালান ও পরিবহণে অচলাবস্থার শিকার হয়েছেন আমচাষিরা। পাশাপাশি রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরে মানুষ ঈদ উদযাপনে গ্রামে চলে যাওয়ায় ক্রেতা সংকট আমের দাম বিপর্যয়ের আরও একটি কারণ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফল গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে বিদ্যমান উচ্চ তাপমাত্রা ও বৃষ্টিহীনতার কারণে আমের ক্ষেত্রে ‘ফোর্স রাইপেনিং’ সিনড্রোমের ঘটনা ঘটেছে। বৃষ্টিহীনতার কারণে আমের বোঁটায় থাকা ফ্লুইড শুকিয়ে আপনা-আপনি গাছ থেকে ঝরে পড়ছে আম। তিনি আরও বলেন, নামলা জাতের আমগুলোও নির্ধারিত টাইম লাইনের দুই সপ্তাহ আগেই গাছে পেকে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে চাষিরা পাকা আম দ্রুত গাছ থেকে নামিয়ে মোকামে তুলছেন। আমরাও খবর নিয়ে দেখেছি এবার অন্য বছরগুলোর তুলনায় মোকামগুলোতে আমের দাম কিছুটা কম। তবে দু-একদিনের মধ্যে যদি বৃষ্টি হয় সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের আমের স্থায়িত্ব আরও কিছুদিন বাড়বে। গত বছর এই সময়ে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের মোকামগুলোতে ক্ষিরসাপাতি আম মানভেদে প্রতিমন ১ হাজার ৮০০ থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু শনিবার পর্যন্ত রাজশাহী অঞ্চলের প্রধান প্রধান মোকামে ক্ষিরসাপাতি আম মানভেদে প্রতিমন সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আবার চাষি ও বাগান পর্যায়ে ক্ষিরসাপাতি আম বিক্রি হচ্ছে প্রতিমন ১ হাজার ২০০ টাকায়। আগাম জাতের গোপালভোগ ও লখনা জাতের আম বিক্রি হচ্ছে প্রতিমন ৮০০ থেকে হাজার টাকা মনদরে। ন্যাংড়া জাতের আম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা প্রতিমন। রাজশাহী অঞ্চলের জেলাগুলোতে বিভিন্ন ধরনের আম আহরণে প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া ক্যালেন্ডারের সময়সীমা প্রায় ভেঙে পড়েছে। চাষিরা বলছেন, আম সংগ্রহ সময়ে বৈরী আহবাওয়া ও উচ্চ তাপমাত্রার কারণে গাছে পরিপক্ব সব আম দ্রুত পেকে যাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাছের আমে রঙ ধরছে। বোঁটা নরম হয়ে পাকা আম গাছ থেকে ঝরে পড়ছে। ফলে চাষিরা বাধ্য হয়ে আম নামিয়ে মোকামে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না। রাজশাহী অঞ্চলের প্রধান মোকামগুলোতে এখনো চালানি ব্যাপারীর সংখ্যা কম। ফলে ক্রেতার অভাবে চাষিরা অনেক কম দামে আম বিক্রি করে দিচ্ছেন। যে যে দাম পাচ্ছেন সেই দামেই বিক্রি করছেন। কারণ পাকা আম ঘরে রাখলে এক-দুদিনের মধ্যে সব পচে নষ্ট হয়ে যাবে। রাজশাহীর উপকণ্ঠ হরিয়ান গ্রামের আম চাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, ১৫ মে ছিল গুঁটিজাত ও ২২ মে ছিল গোপালভোগ আম আহরণের দিন। এছাড়া ৩০ মে থেকে ছিল ক্ষিরসাপাতি ও ১০ জুন থেকে ছিল ন্যাংড়া ও বানানা আম আহরণের সময়। ১৫ জুন থেকে আম্রপালি ও ফজলি আম আহরণ শুরুর কথা ছিল। বহুল প্রচলিত সব আমই একযোগে পেকে গেছে। এই চাষি আরও জানান, অত্যধিক গরমে সব আম একসঙ্গে পাকছে। ন্যাংড়া আম প্রশাসনের নির্ধারিত সময়ের এক সপ্তাহ আগেই পেকে বাজারে এসেছে। এমনকি বিলম্বে পাকে যে ফজলি আম তাও নির্ধারিত সময়ের আগেই গাছে পাকতে শুরু করেছে। চাষিরা পাকা আম গাছে রাখতে পারছেন না। ৫ জুলাই থেকে বারি-৪ জাতের আম আহরণের সময়সীমা থাকলেও ১৩ জুন থেকেই এ জাতের আম বাজারে উঠেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের হরিণগর গ্রামের আমচাষি মহসিন আলী বলেন, অঞ্চলভেদে রাজশাহীর আম আগে পাকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম দুই সপ্তাহ পরে পাকে। আবার নওগাঁর হাইব্রিড জাতের আমগুলো আরও দুই সপ্তাহ পরে বাজারে আসে। কিন্তু এ বছর সব জেলার আম প্রায় একই সঙ্গে পেকে মোকামে উঠেছে। ফল গবেষণা কর্মকর্তাদের পরামর্শে শেষ সময়ে কিছু গাছে পানি স্প্রে করা হচ্ছে। এতে বোঁটা শক্ত হলে আরও কিছুদিন গাছে থাকতে পারবে আম। বিশেষ করে যাদের গাছে ফজলি আম আছে তারা হয়তো কিছুটা দাম পাবেন। মর্দানা গ্রামের আমচাষি ইয়াসিন আলী বলেন, এবার আমচাষি ও বাগান ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতি। ঈদের ছুটিতে টানা এক সপ্তাহ কুরিয়ার বন্ধ ছিল। ঈদের তিন দিন পর ১১ জুন চার মন আম তুলেছিলাম কানসাট মোকামে। চালানি ব্যাপারী নেই। ক্ষিরসাপাতি আম বিক্রি করেছি ১ হাজার ২০০ টাকা মনদরে। গত বছর এসব আম বিক্রি করেছি ২ হাজার ৫০০ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা মনে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ম্যাঙ্গো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব ও বাণিজ্যিক আমচাষি আহসান হাবিব বলেন, অত্যধিক তাপমাত্রা ও গরমের কারণে সব শ্রেণির আম একসঙ্গে পেকেছে। দ্বিতীয়ত, ঈদের দীর্ঘ ছুটির কারণে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় নগর-শহরের মানুষ একটানা ১০ থেকে ১৫ দিন গ্রামে অবস্থান করেছেন। এ সময়ে কুরিয়ার সার্ভিসহ পরিবহণ চলাচল সীমিত ছিল। প্রতিবছর ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলো থেকে দলে দলে চালানি ব্যাপারীরা আম কিনতে বৃহৎ আমের মোকাম চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট বা রাজশাহীর বানেশ্বরে আসতেন। এবার চালানি ব্যাপারীর সংখ্যা খুবই কম। শনিবার থেকে বাইরের চালানি ব্যাপারীরা দু-একজন করে আসছেন এবং তারা আম কিনছেন। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে দেশে ২৮ লাখ টন আম ফলনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী অঞ্চলের চার জেলায় ১২ লাখ ৫৫ হাজার টন আম ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলাভেদে এবারও আম উৎপাদনে শীর্ষস্থানটি রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার। এ জেলায় চলতি মৌসুমে ৪ লাখ ৫৮ হাজার টন আম ফলনের আশা করা হচ্ছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আম উৎপাদনের জেলা নওগাঁয় ৩ লাখ ৭৮ হাজার টন আমের ফলন হওয়ার আশাবাদ থাকলেও হাইব্রিড জাতের আম্রপালির ফলন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছু কম উৎপাদন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া রাজশাহীতে ২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৪৩ টন ও নাটোর জেলায় ১ লাখ ৪৩ হাজার টন আম ফলনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ড. আজিজুর রহমান বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে এবার আমের ফলন বেশ ভালো। তবে তাপপ্রবাহ, অত্যধিক গরম ও একটানা কিছুদিন বৃষ্টিহীনতার কারণে আম দ্রুত পেকে যাচ্ছে। ঈদের লম্বা ছুটির কারণে আম চালান ও পরিবহণে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। এতে আমের দাম কিছুটা কমেছে। এরপরও ফলন যেহেতু ভালো হয়েছে ফলে চাষিরা সেই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটি, রানওয়ে দুই ঘণ্টা পর সচল দ্বিতীয় ম্যাচে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে ক্যালিফোর্নিয়ায় মালয়েশিয়াকে ‘সন্ত্রাসবাদ তদন্তে’ সহায়তার আশ্বাস ঢাকার ‘পুরানো খেলায় নতুন প্লেয়ার নয়, খেলার নিয়ম পাল্টাতে এসেছি’ বিয়ের আসরে বরের মাদক সেবনের অভিযোগ, বন্ধ হয়ে গেলো বিয়ে ‘গাজা চুক্তি হতে পারে আগামী সপ্তাহে’ ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব’ শুল্ক-কর জমা অনলাইনে: চালু হলো ‘এ-চালান’ সেবা সাবেক সিইসি এটিএম শামসুল হুদা আর নেই টেক্সাসে ‘বিধ্বংসী’ বন্যায় মৃত্যু বেড়ে ২৪, নিখোঁজ ২৫ শিশু ভূমি ধসের কারণে ঝুঁকিতে ‘নান্দনিক’ সিন্দুকছড়ি-জালিয়াপাড়া সড়ক নির্বাচনের প্রচারে পোস্টার বাদ দেওয়ার প্রস্তাবে বিএনপি–এনসিপির দ্বিমত মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ঢাকায় বৃষ্টি, চলবে ৯ জুলাই পর্যন্ত বিগ, বিউটিফুল বিলকে আইনে রূপ দিলেন ট্রাম্প টিভিতে মোবাইলে কোন খেলা কোথায় দেখবেন ক্লাব বিশ্বকাপে সবার আগে সেমিফাইনালে ব্রাজিলের ক্লাব টেক্সাসে বন্যায় ১৩ জনের মৃত্যু চুয়াডাঙ্গায় তেলবাহী ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ৩, আহত ৫ গোলকিপারের ভুলে চারে দুই হলো না ব্রাজিলের