শত বছর ধরে জেগে আছে সদরঘাট

শত বছর ধরে জেগে আছে সদরঘাট

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৩ মে, ২০২৫ | ৫:৫৪ 41 ভিউ
সদরঘাট ঢাকার একটি নদীবন্দর। বুড়িগঙ্গার তীরে এই বন্দরকে ঘিরে উনিশ শতকে ব্যবসায়িক জনপদ গড়ে ওঠে। এই নদীর পাড়েই বই প্রকাশনার ঘাঁটি বাংলাবাজার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, আহসান মঞ্জিল, মাছ ও ফলের সুবিশাল সব আড়ত। সদরঘাটের এমন একটি অবস্থা-যেখানে দিন-রাত সব সময় সক্রিয় থাকে মানুষ। তাই লোকমুখে প্রচলিত আছে সদরঘাট কখনো ঘুমায় না। শত বছর ধরে ব্যস্ত এই নদীবন্দর। ‘উপরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট’-কথাটি কার না জানা। বাইরে থেকে সবকিছু স্বাভাবিক মনে হলেও ভেতরে চরম বিশৃঙ্খলা বোঝাতে এটি বলা হয়ে থাকে। ছিঁচকে চোর, হকার-কুলিদের হাঁকডাক, টানাটানি, যাত্রীদের তাড়াহুড়ো, লঞ্চ-স্টিমারের শব্দ সব মিলিয়ে এখানে যেন হ-য-ব-র-ল অবস্থা। পকেটমার আর সুযোগসন্ধানী হকার-কুলিদের দৌরাত্ম্যে যাত্রীরা ডানে ব্যাগ রেখে বামে তাকাতেই উধাও হয়ে যায় সেই ব্যাগ। তবে বর্তমানে সেসব অপকর্মের পরিমাণ অনেকাংশে কমে এসেছে। কিন্তু ব্যস্ততা কমেনি কোনো অংশে। ভোর ৪টা থেকে পরের দিন ভোর ৪টা পর্যন্ত টানা জেগে থাকে সদরঘাট। প্রতিদিন ভোরের আলো ফোটার আগেই সদরঘাটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাত্রী ঠাসা লঞ্চগুলো ভিড়তে থাকে। এখানে যাত্রীদের মালামাল বহন করে এক শ্রেণির মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। যারা কুলি নামে পরিচিত। ভোর থেকে আশপাশের হোটেলগুলোতে নাস্তা বিক্রি শুরু হয়। পন্টুন ও ঘাট এলাকায় হেঁটে হেঁটেও অনেকে নাস্তা বিক্রি করেন। মাঝিরা নদীতে নৌকা ভাসান। সদরঘাট, শ্যামবাজারসহ বিভিন্ন ঘাটে প্রতিদিন এপার-ওপার ছোটে অগণিত নৌকা। প্রায় দুই হাজার মাঝির জীবিকা জোগায় এই বুড়িগঙ্গা। তবে মাঝিদের অভিযোগ, দিন দিন তাদের উপার্জন কমছে। ইজারাদারের টাকা, মালিকের টাকা, পাহারা ও সিরিয়ালের টাকা-সব দাবি মিটিয়ে নিজের থাকে খুব সামান্য। পরিস্থিতি এমন যে, নৌকা চলে ঠিকই, কিন্তু তাদের পেট চলে না। নদীবন্দরের পন্টুন ও তীর দখল করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অস্থায়ী দোকান। নদীর বুকেও ছুটে চলছে বহু অবৈধ ইঞ্জিনচালিত নৌকা, যেগুলো থেকে বহু পক্ষ মাসোহারা পেয়ে থাকে। রাত-বিরাতে দূরদূরান্ত থেকে বেড়িবাঁধের রাস্তা দিয়ে সদরঘাটে আসা যাত্রীরা নিয়মিতই ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন। সদরঘাটের পন্টুন বা যাত্রী বিশ্রামাগার রাত ১০টার পর থেকে টোকাই ও পতিতাদের দখলে চলে যায়। জানা যায়, বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে বহু শতাব্দী আগে রেল ও সড়ক যোগাযোগবিহীন যে নগরীর পত্তন ঘটেছিল সেই নগরীতে প্রবেশের সদর দরজা ছিল সদরঘাট। ১৬১০ সালে ‘ঢক্কা বৃক্ষবহুল’ এ নগরীকে জাহাঙ্গীরনগর নাম দিয়ে রাজধানী ঘোষণা করেন সুবাদার ইসলাম খান। কিন্তু সে নাম কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। সাধারণ মানুষ এ নগরীকে ঢক্কা বা ঢাকা নামেই ডাকতে থাকেন। নদী বিধৌত এ বাংলায় যত দিন যায় ততই গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দর হতে শুরু করে সদরঘাট। যাতায়াত, পণ্য পরিবহণ আর বাণিজ্যিক স্থান হিসাবে সদরঘাট হয়ে যায় অসংখ্য মানুষের জীবন ও জীবিকার উৎস। চলার পথে এখানে মিশে আছে বহু মানুষের অজস্র স্মৃতি ও প্রেম। রচিত হয়েছে গান-‘যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম, সদরঘাটের পানের খিলি তারে বানাই খাওয়াইতাম।’ কিন্তু কালের বিবর্তনে লোহা-লক্কড় আর জঞ্জালের এই শহরে সদরঘাট তার জৌলুস ধরে রাখতে পারেনি। ধীরে ধীরে সদরঘাট হয়ে উঠল অসৎ আর দালালদের আড্ডাখানা। সদরঘাট গিয়ে কুলিদের খপ্পরে বা পকেটমারের শিকার হননি এমন মানুষও কম আছেন। কিছুদিন আগেও টার্মিনালের মূর্তিমান আতঙ্ক ছিল ‘কুলি’। সদরঘাটে ২৪ ঘণ্টাই হকার-কুলিদের শোরগোল লেগে থাকত। কিন্তু বর্তমানে পদ্মা সেতু হয়ে যাওয়ার পর থেকে সদরঘাটে যাত্রী খুব কম। যার ফলে কুলিদের কাজ কমে গেছে এবং অনেকেই পেশা বদলে ফেলেছেন। বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৭ সালে সদরঘাট নৌ-টার্মিনাল নির্মাণ করার পর থেকে টার্মিনালের ইজারার মাধ্যমে কুলি ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হয়ে আসছিল। কুলিদের পরিশ্রমের টাকায় ভাগ বসাতেন ইজারাদাররা। অন্যদিকে মধ্যস্বত্বভোগী এ ইজারাদারদের যোগসাজশে টার্মিনালে নিয়মিত চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটত। হকার, কুলি, পকেটমারের অত্যাচারে যাত্রীদের নাভিশ্বাস উঠেছিল। এই চরম অরাজকতাপূর্ণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সুষ্ঠু বন্দর ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেয় বিআইডব্লিউটিএ। সদরঘাট থেকে অবৈধ কুলি ও হকার উচ্ছেদ করে যাত্রীদের উন্নত ও আধুনিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে টার্মিনালে ‘শ্রম যার মজুরি তার’ নীতিতে শ্রম ব্যবস্থাপনা চালু করা হয়। সম্প্রতি টার্মিনালে অপেক্ষারত বরগুনাগামী যাত্রী ওমর ফারুক প্রিন্স বলেন, আমি ১২ বছর ধরে ঢাকায় আসা-যাওয়া করি। আগে লঞ্চ থেকে নামলেই কুলিরা এসে সামনে দাঁড়াত। নিজের মাল নিজে বহন করতে চাইলেও তাদের হাত থেকে নিস্তার পেতাম না। তাদের দিয়েই মালামাল টানাতে হতো এবং তাদের ইচ্ছেমতো টাকা দিতে হতো। বর্তমানে সেই অবস্থা নেই। ঢাকা নদীবন্দর সূত্রে জানা গেছে, যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে সদরঘাট টার্মিনালে ডিএমপি পুলিশ ফাঁড়ি ও নৌপুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৩২ জন আনসার মোতায়েন রয়েছে। লঞ্চঘাটের ১৪টি প্রবেশপথে ৩২টি সিসি ক্যামেরা ও ২২টি মাইক স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে পুরো টার্মিনাল মনিটরিং করা হয় এবং মাইকের মাধ্যমে প্রয়োজনে জরুরি ঘোষণা দেওয়া হয়। ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, টার্মিনালকে হকারমুক্ত বেশ আগে ঘোষণা করা হলেও তা পুরোপুরি কার্যকর ছিল না। বর্তমানে শতভাগ হকার মুক্ত। টার্মিনালে আগে বিভিন্ন ব্যানার-পোস্টারে ভরপুর ছিল এবং পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা ছিল। বর্তমানে আমূল পরিবর্তন হয়ে গেছে। নৌপুলিশ, পুলিশ ফাঁড়ি, আনসারদের দায়িত্ব ও সিসি ক্যামেরা চালুর কারণে টার্মিনালে চুরি-ছিনতাই কমে গেছে কিন্তু শতভাগ নির্মুল হয়নি। এখন যাত্রীরা তুলনামূলক অনেক নিরাপদে চলাচল করতে পারছেন।

বর্ণমালা টেলিভিশন এর সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
রিটার্ন জমা দিলে পাবেন যেসব ছাড় নেতানিয়াহুর ওপর খেপলেন ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী ৩২ নম্বর ভাঙার ঘটনাকে বীভৎস মববাজি বললেন রুমিন ফারহানা খোঁজ মিলল সেই ডিজিএমের, কোথায় ছিলেন তিনি সুখবর পাচ্ছেন প্রাথমিকের ৩০ হাজার প্রধান শিক্ষক সাইফ পাওয়ার টেকের অধ্যায় শেষ, চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্বে নৌবাহিনী গাজীপুর মহানগর বিএনপির চার নেতা বহিষ্কার ‘পাগল তত্ত্ব’ ব্যবহার করে বিশ্বকে বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প রকেট চালিত গ্রেনেড দিয়ে লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ইনিংসেই ডাবল সেঞ্চুরি? এমন কীর্তি ক্রিকেট ইতিহাসে হয়েছে মাত্র তিনবার। আর এখন সে তালিকার শীর্ষে উইয়ান মুল্ডার। দক্ষিণ আফ্রিকার এই অলরাউন্ডার বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে অধিনায়কত্বের অভিষেকে অপরাজিত ২৬৪ রানে দিন শেষ করেছেন—যা এ ধরনের ম্যাচে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। এর আগে ১৯৬৮ সালে ভারতের বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চে ২৩৯ রান করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের গ্রাহাম ডাউলিং। সেটাই এতদিন ছিল অধিনায়কত্বে অভিষেক টেস্টে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড। আরও আগে ২০০৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শিবনারায়ণ চন্দরপল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে করেছিলেন ২০৩*। ২৭ বছর বয়সী মুল্ডারের এই অধিনায়কত্ব আসলে অনেকটাই আকস্মিক। নিয়মিত অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা হ্যামস্ট্রিং চোটে জিম্বাবুয়ে সফরে যাননি। সহ-অধিনায়ক এইডেন মার্করাম ও অভিজ্ঞ পেসার কাগিসো রাবাদাকেও বিশ্রামে রাখা হয়। এর ফলে প্রথম টেস্টে নেতৃত্ব পান স্পিনার কেশব মহারাজ। কিন্তু ব্যাটিংয়ের সময় কুঁচকিতে চোট পেয়ে দ্বিতীয় টেস্ট থেকে ছিটকে যান তিনিও। তখনই দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় মুল্ডারের কাঁধে। আর সেই সুযোগের সর্বোত্তম ব্যবহারই করেছেন তিনি। ৩৪টি চার ও ৩টি ছক্কার মাধ্যমে দুর্দান্ত ইনিংস গড়ে প্রথম দিন শেষ করেছেন ২৬৪* রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর দাঁড়ায় ৯০ ওভারে ৪ উইকেটে ৪৬৫। এটাই প্রথম নয়। সিরিজের প্রথম টেস্টেও দারুণ ব্যাটিং করেছিলেন মুল্ডার, করেছিলেন ১৪৭ রান। ফলে তার ফর্ম বলছে, তিনি শুধু স্ট্যান্ড-ইন অধিনায়ক নন, দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট ভবিষ্যতের অন্যতম বড় ভরসাও বটে। রেকর্ড বইয়ে নাম উঠলো যাদের অধিনায়কত্বের অভিষেকে ডাবল সেঞ্চুরি: উইয়ান মুল্ডার (দ.আফ্রিকা) – ২৬৪* বনাম জিম্বাবুয়ে, বুলাওয়ে ২০২৫ গ্রাহাম ডাউলিং (নিউজিল্যান্ড) – ২৩৯ বনাম ভারত, ১৯৬৮ শিবনারায়ণ চন্দরপল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) – ২০৩* বনাম দ.আফ্রিকা, ২০০৫ এছাড়া, মুল্ডার হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে অধিনায়কত্বের অভিষেকে সেঞ্চুরি করা দ্বিতীয় ক্রিকেটার—১৯৫৫ সালে জ্যাকি ম্যাকগ্লু প্রথম এই কীর্তি করেছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। বিভিন্ন নিয়মিত তারকার অনুপস্থিতিতে হঠাৎ নেতৃত্ব পাওয়া মুল্ডার ব্যাট হাতে যা করে দেখিয়েছেন, তা শুধু রেকর্ড নয়—একটি বার্তাও। হয়তো ভবিষ্যতের নিয়মিত অধিনায়ক হওয়ার দিকেও তাকিয়ে আছেন তিনি। আর এমন অভিষেকের পর দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বিশ্বও নিশ্চয় তার নামটি একটু আলাদা করে মনে রাখবে। অভিষেকেই ইতিহাস, ডাবল সেঞ্চুরিতে প্রোটিয়া অলরাউন্ডারের বিশ্বরেকর্ড যে রেকর্ডে ম্যাক্সওয়েলের উপরে শুধু গেইল মেয়েদের পুরস্কার দেবে বাফুফে বাবার জন্য দাবা, ছেলের কথা রাখলেন মা মা হতে চান জয়া আহসান ‘বেবিটা আমার বোনের’, গুজব নিয়ে মুখ খুললেন তানজিন তিশা ঢালিউডে ছ’মাসে ২২ সিনেমা, কতটুকু ফুটলো আশার ফুল? ১৮৫ সিনেমার মহাতারকা শবনম, ২৫ বছর ধরে ভালো গল্পের অপেক্ষায় ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে খামেনি সংসদ নির্বাচন আটকানোর শক্তি কারও নেই