পুরোনো রোগে নতুন ভয়

প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগ মেলিওডোসিস। ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে সংক্রমিত এ অবহেলিত রোগটি নীরবে ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। এরই মধ্যে ১৮টি জেলায় রোগটির সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ছড়িয়ে পড়ছে প্রান্তিক কৃষিজীবীদের মধ্যে—যারা মাটি ও পানি নিয়ে কাজ করেন তাদের শরীরে। পরে আবার তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস ও স্পর্শ থেকে ছড়িয়ে পড়ছে অন্যদের শরীরে। এ রোগে মৃত্যুহার ৪০ শতাংশের বেশি, যেখানে করোনা মহামারিতে বাংলাদেশে মৃত্যুহার ছিল মাত্র ১৩ শতাংশ। রোগটির অস্তিত্ব বহু বছর আগেই বাংলাদেশে শনাক্ত হলেও স্বাস্থ্যের নীতিনির্ধারকদের মনযোগ কাড়তে পারেনি, যে কারণে চিকিৎসা বা বিস্তার ঠেকাতে এতদিনেও নেওয়া হয়নি যথাযথ পদক্ষেপ। দেশের জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে এ রোগ শনাক্তের ব্যবস্থা নেই। এমনকি মেলিওডোসিস শনাক্ত ও চিকিৎসা সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীদের। ফলে অনির্ণীত রোগের অনুমাননির্ভর চিকিৎসায় নীরবে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকে। এমন প্রেক্ষাপটে মেলিওডোসিসের ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ নতুন করে ভয় ধরাচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশের কোথাও এ ব্যাকটেরিয়া শনাক্তের ব্যবস্থা নেই। শুধু ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিডিআর,বি) এ সংক্রান্ত গবেষণা চলমান থাকায় এ দুটি প্রতিষ্ঠানে রোগ নির্ণয়ের সুযোগ রয়েছে। এ ব্যাকটেরিয়া শনাক্তের জন্য যে রি-এজেন্ট প্রয়োজন সেটি দুর্মূল্য। ফলে সরকারি উদ্যোগ ছাড়া উন্মুক্তভাবে এ ব্যয়বহুল পরীক্ষা ও রোগ নির্ণয় সম্ভব নয়। এতে রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে এবং বিপুলসংখ্যক মানুষ এতে সংক্রমিত হবে।
আইসিডিডিআর,বির গবেষণায় বলা হয়েছে, মেলিওডোসিস একটি প্রাণহরণকারী সংক্রমণ, যার সৃষ্টি গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া বার্কহোল্ডেরিয়া সিউডোম্যালেই থেকে। এ ব্যাকটেরিয়া সাধারণত মাটিতে পাওয়া যায়। এ রোগটি ত্বকের সংস্পর্শে, খাওয়ার মাধ্যমে বা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়ায়। রোগটি শনাক্ত ও চিকিৎসার পরও আক্রান্তদের মৃত্যুহার ৪০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
এই রোগ ও রোগের সংক্রমণ নিয়ে ২০২১ সাল থেকে আইসিডিডিআর,বি গবেষণা করে আসছে। ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে গবেষণায় ৪৬ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়। এর আগে, ১৯৬১ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রায় ৮০ জন রোগী শনাক্ত করা হয়। দেশের ১৮টি জেলা থেকে এসব রোগী পাওয়া গেছে। তবে ঢাকা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও চট্টগ্রামে এ রোগীর সংখ্যা বেশি।
এ প্রসঙ্গে আইসিডিডিআর,বির গবেষক ড. সুকান্ত চৌধুরী বলেন, ‘রোগীরা প্রায়ই গুরুতর অবস্থায় আসেন। যাদের অনেকের ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দিতে হয়। আক্রান্তদের বেশিরভাগই কৃষি শ্রমিক—বিশেষ করে যারা নিয়মিত মাটি ও জলের সংস্পর্শে আসেন, তারা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ, যার বেশিরভাগ সংক্রমণ ঘটে বর্ষা মৌসুমে।’ তিনি বলেন, ‘মেলিওডোসিস রোগ নির্ণয় করা কঠিন। এর বিভিন্ন ক্লিনিকাল উপস্থাপনা, রোগ নির্ণয়ের সরঞ্জামের সীমিত প্রাপ্যতা, প্রশিক্ষিত টেকনোলজিস্টের অভাব এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। ঢাকার বাইরে রোগ নির্ণয়ের ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত। যা ভুল রোগ নির্ণয়, বিলম্বিত বা অনুপযুক্ত চিকিৎসা, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা ও মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। এ অবহেলিত রোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশে মেলিওডোসিসের প্রকৃতি বোঝা, জরুরিভাবে দেশব্যাপী নজরদারি এবং গবেষণা প্রয়োজন। দেশজুড়ে রোগ নির্ণয় পরিষেবা সম্প্রসারণ এবং রোগ শনাক্তকরণ এবং ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় এবং উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দ্রুত চিকিৎসা মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সম্ভব।’
এই রোগ ও রোগের সংক্রমণ নিয়ে ২০২১ সাল থেকে আইসিডিডিআর,বি গবেষণা করে আসছে। ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে গবেষণায় ৪৬ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়। এর আগে, ১৯৬১ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রায় ৮০ জন রোগী শনাক্ত করা হয়। দেশের ১৮টি জেলা থেকে এসব রোগী পাওয়া গেছে। তবে ঢাকা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও চট্টগ্রামে এ রোগীর সংখ্যা বেশি।
এ প্রসঙ্গে আইসিডিডিআর,বির গবেষক ড. সুকান্ত চৌধুরী বলেন, ‘রোগীরা প্রায়ই গুরুতর অবস্থায় আসেন। যাদের অনেকের ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দিতে হয়। আক্রান্তদের বেশিরভাগই কৃষি শ্রমিক—বিশেষ করে যারা নিয়মিত মাটি ও জলের সংস্পর্শে আসেন, তারা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ, যার বেশিরভাগ সংক্রমণ ঘটে বর্ষা মৌসুমে।’ তিনি বলেন, ‘মেলিওডোসিস রোগ নির্ণয় করা কঠিন। এর বিভিন্ন ক্লিনিকাল উপস্থাপনা, রোগ নির্ণয়ের সরঞ্জামের সীমিত প্রাপ্যতা, প্রশিক্ষিত টেকনোলজিস্টের অভাব এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। ঢাকার বাইরে রোগ নির্ণয়ের ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত। যা ভুল রোগ নির্ণয়, বিলম্বিত বা অনুপযুক্ত চিকিৎসা, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা ও মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। এ অবহেলিত রোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশে মেলিওডোসিসের প্রকৃতি বোঝা, জরুরিভাবে দেশব্যাপী নজরদারি এবং গবেষণা প্রয়োজন। দেশজুড়ে রোগ নির্ণয় পরিষেবা সম্প্রসারণ এবং রোগ শনাক্তকরণ এবং ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় এবং উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দ্রুত চিকিৎসা মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সম্ভব।’
বর্ণমালা টেলিভিশন এর সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।