
নিউজ ডেক্স
আরও খবর

‘হুঁশিয়ারির সময় শেষ, এবার শাস্তির পালা’: ইরানি সেনাপ্রধানের হুঁশিয়ারি নেতানিয়াহুকে

ইসরাইলের আকাশসীমা দখলে নেওয়ার দাবি ইরানের

ধ্বংসযজ্ঞে অনড় ইরান-ইসরায়েল

ইরান চায় “যুদ্ধবিরতি”; ডোনাল্ড ট্রাম্পের লক্ষ্য “প্রকৃত সমাপ্তি”

জি-৭ নেতাদের ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগ: শান্তির আহ্বান

ইসরাইলের পারমাণবিক সক্ষমতা নিয়ে বিশ্বকে সতর্ক থাকার আহ্বান পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর

গাজায় আরও ৫৯ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করল ইসরাইল
দেশে দেশে নতুন জামা, গাজায় কাফনের কাপড়

ঈদ আসছে। মুসলিম বিশ্বের ঘরে ঘরে আনন্দ। দেশে দেশে খুশির ঢেউ। ছেলে-মেয়েদের মাঝে নতুন জামা-কাপড়ের বাহার। পবিত্র ঈদুল আজহা ঘিরে কুরবানির আমেজে মৌ মৌ করছে বিশ্ব-মুসলিম প্রাণ। উৎসবের উসখুশ আনন্দে অস্থির আরব-ইউরোপ, ল্যাটিন-এশিয়ার ধনী-গরিব সবাই। শুধু গাজা ছাড়া। প্রতিবেশী আরব দেশগুলোর আকাশে আঁতশবাজি।
গাজায় ইসরাইলের বিমান হামলার গর্জন। স্বজন হারানোর হাহাকার; প্রিয়জন হারানোর বেদনা। মায়ের কোলে সন্তানের লাশ। একমুঠো খাবারের জন্য ছোট্ট শিশুর কান্না। ঘুম ভাঙতেই কাফনের কাপড় দেখতে দেখতে ভুলে গেছে ঈদের নতুন জামা-কাপড়ের রং! জাতিগত বিদ্বেষে উন্মাদ ইসরাইলের বর্বর হামলায় পুরো উলটো চিত্র গাজায়। টানা ২০ মাসের নৃশংসতায় পালটে গেছে গাজার জনজীবন।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ঈদ মানে এখন আর আনন্দ নয়। অথচ ঈদ উৎসবে সেখানেও আত্মীয়দের মিলন, বারবিকিউ, আর শিশুর ঝলমলে হাসি। এখন শুধু ধ্বংসের স্তূপ, শোক আর নিঃসঙ্গতা। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ভেসে আসা মানুষের কান্না আর ক্ষুধার্ত শিশুর আর্তনাদ। ঈদে কুরবানি দেওয়া তো দূরের কথা একবেলা পেট ভরানোর মতো খাবারও নেই ফিলিস্তিনিদের কাছে। আলজাজিরা, মিডল ইস্ট আই।
কুরবানির ঈদ সম্পর্কে হৃদয়ভাঙা অনুভূতি প্রকাশ করেছেন গাজার একেবারে উত্তরাংশের বাসিন্দা নুহা আল-নাজ্জার। ভারাক্রান্ত স্বরে বলেছেন, ‘নিজেদের ছাড়া কুরবানি দেওয়ার মতো আর কিছুই নেই।’ আরও বলেছেন, ‘ঈদের আগে তাদের চারপাশে শুধু ধ্বংসস্তূপ আর ক্ষুধার চিৎকার। প্রতিদিন পাশের ঘর থেকে বাচ্চারা ক্ষুধায় কাঁদে। কিন্তু কেউ কিছু করতে পারে না।’
ইসরাইল গত কয়েক মাস ধরে গাজায় খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশ নিষিদ্ধ করে রেখেছে। দুই মিলিয়নের বেশি মানুষ ন্যূনতম খাদ্য সহায়তা পাচ্ছে না। প্রতিদিন কেবল একটুখানি ময়দা কিংবা সামান্য ডালের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকার লড়াই চলছে গাজায়। ২৭ মে থেকে গাজায় ত্রাণ প্রবেশ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে কম। এরই মধ্যে আবার মার্কিন সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে বেড়েছে ইসরাইলি হামলা।
মঙ্গলবার পর্যন্ত গত ৮ দিনে ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে হামলায় ১০২ ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এরই মধ্যে বুধবার আলজাজিরা জানিয়েছে, অনাহারের মধ্যে সারা দিন খাদ্য বিতরণ বন্ধ রেখেছে ইসরাইল। ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বিতরণ পয়েন্টগুলোতে সংগঠন ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য পুনর্গঠন ও সংস্কার কাজ চলবে। বৃহস্পতিবার থেকে আবারও ত্রাণ বিতরণ শুরু হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। গাজায় চলমান মানবিক সংকটের মধ্যে তথাকথিত এই ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছে ইউনিসেফ। সংস্থাটির মুখপাত্র জেমস এল্ডার বলেছেন, জিএইচএফ আসলে ত্রাণের আড়ালে ভান ধরে আছে। তিনি আরও বলেছেন, ‘ত্রাণ দিতে বিশ্বের বড় ও নির্ভরযোগ্য সংস্থাগুলোকে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এই সংস্থাগুলোর প্রতিদিন ৫০০-৬০০ ট্রাক গাজায় প্রবেশ করার কথা ছিল। অথচ এখন সেখানে পৌঁছায় মাত্র ৫০০-৬০০ বাক্স।’
চলমান এ পরিস্থিতিতে বুধবার বিকালে (বাংলাদেশ সময় রাত ২টা) গাজায় যুদ্ধবিরতির নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবের ওপর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ভোট দেওয়ার কথা রয়েছে। বৈশ্বিক এসব উদ্যোগের মধ্যেও গাজাজুড়ে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলি বাহিনী। মঙ্গলবার মধ্যরাতে গাজার দক্ষিণ-পশ্চিমের খান ইউনিসে একটি স্কুলের আশ্রয়কেন্দ্রে হামলা চালায় বর্বর সেনারা। এতে ১৮ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারী দল ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। আহত হয়েছেন ২০-এর বেশি মানুষ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বুধবার পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৪৪০ জন। দেশে দেশে যেখানে নতুন জামা কেনার ধুম পড়েছে সেখানে কাফনের কাপড় কিনতে ব্যস্ত গাজা।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় মোট ৫৪,৬০৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,২৫,৩৪১ জন আহত হয়েছেন।
বর্ণমালা টেলিভিশন এর সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।