ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আহসান মঞ্জিল

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আহসান মঞ্জিল

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৬ মে, ২০২৫ | ৮:৫৫ 40 ভিউ
বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঢাকার আহসান মঞ্জিল। পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত আহসান মঞ্জিল ঢাকার নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারির সদর কাচারি ছিল। এর প্রতিষ্ঠাতা নওয়াব আবদুল গণি তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেন ‘আহসান মঞ্জিল’। ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে শেষ হয়। নবাব পরিবারের বহুল স্মৃতিবিজড়িত এ প্রাসাদটি এখন জাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ঢাকার ৪০০ বছরের প্রাচীন ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে নবাবি আমলের শানশওকত। আর গর্বিত সেই ইতিহাসের অংশ হিসাবে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নবাবদের নিদর্শন আহসান মঞ্জিল। তবে জাদুঘরটি ঐতিহ্য বহনকারী লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও এর উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের কোনো আগ্রহ নেই বলে অভিযোগ দর্শনার্থীদের। এখানে যাতায়াতের রাস্তাটিও ভালো নয়। আহসান মঞ্জিলের ইনচার্জ এবং ডেপুটি কিপার দিবাকর সিকদার বলেন, বাংলাদেশে যত জাদুঘর আছে, সবই সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। যেখানে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয়ে থাকে। একমাত্র আহসান মঞ্জিলই একটি ঐতিহাসিক জাদুঘর, যেখানে ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি। এখানে প্রতিমাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার দর্শনার্থী টিকিট কেটে প্রবেশ করে থাকেন। এর মধ্যে থাকেন ছয় থেকে সাত হাজার বিদেশি পর্যটক। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় এখানে প্রতিদিন দুই লক্ষাধিক টাকার টিকিট বিক্রি হয়। আহসান মঞ্জিলে প্রবেশের তিনটি ফটকের মধ্যে দুটি দখল হয়ে গেছে। ফল ব্যবসায়ীদের দখলে দক্ষিণের গেট এবং উত্তরের গেট দখল করে নিয়েছেন কাপড় ব্যবসায়ীরা। পশ্চিমদিকে প্রবেশের মূল ফটকটিও হকার এবং ট্রাক পার্কিং করে দখল করে রেখেছে। এসব অব্যবস্থাপনার জন্য দূরদূরান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীরা ভোগান্তির শিকার হন। এখানে পরিদর্শনের জন্য ৩৭টি গ্যালারি রয়েছে, যা দেখাশোনার জন্য অনুমোদিত জনবল ৬৭ জন। কিন্তু বাস্তবে কাজ করছেন ২৪ জন। এত অল্পসংখ্যক লোক দিয়ে সুবিশাল এলাকার নিরাপত্তা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, বাগান পরিচর্যা করতে হিমশিম খেতে হয়। এছাড়া বাতাসের সঙ্গে ফল মার্কেট ও সদরঘাটের ময়লা এখানে প্রবেশ করে। উনিশ শতকের শেষভাগ থেকে পাকিস্তানের প্রথম পর্ব পর্যন্ত প্রায় একশ বছর ধরে এ ভবন থেকেই পূর্ব বাংলার মুসলমানদের নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে। ১৯০৬ সালে এখানে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ‘মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। পঞ্চায়েত প্রধান হিসাবে ঢাকার নবাবরা প্রায় প্রতিদিনই এখানে সালিশি দরবার বসাতেন। মুসলিম স্বাতন্ত্র্যে বিশ্বাসী নবাব আহসানুল্লাহর উদ্যোগে এখানে কংগ্রেসবিরোধী বহু সভা হয়েছে। ব্রিটিশ ভারতের যেসব ভাইসরয়, গভর্নর ও লে. গভর্নর ঢাকায় এসেছেন, তাদের সবাই আহসান মঞ্জিলে আগমন করেছেন। বর্তমানে এটি পরিচালিত হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কর্তৃক। এত ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী এ ভবনটির নিজেরও রয়েছে সুদীর্ঘ এক ইতিহাস। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে আহসান মঞ্জিলের এ জায়গায় একটি ‘রংমহল’ ছিল। যেটি নির্মাণ করেছিলেন তখনকার জমিদার শেখ এনায়েতউল্লাহ। তার ছেলে মহলটি ফরাসি বণিকের কাছে বিক্রি করে দেন। খাজা আলিমুল্লাহ ফরাসিদের কাছ থেকে আবার কিনে নেন। তার ছেলে নওয়াব আবদুল গণি ১৮৫৯ সালে আহসান মঞ্জিলের নির্মাণকাজ শুরু করেন। সেই কাজ শেষ হয় ১৮৭২ সালে। মঞ্জিলটি দুটি অংশে বিভক্ত। পূর্বপাশের গম্বুজযুক্ত অংশকে বলা হয় প্রাসাদ ভবন অথবা রংমহল। পশ্চিমাংশের আবাসিক প্রকোষ্ঠাদি নিয়ে গঠিত ভবনকে বলা হয় অন্দরমহল। প্রাসাদ ভবনটি আবার দুটি অংশে বিভক্ত। মাঝখানে গোলাকার কক্ষের ওপর অষ্টকোণবিশিষ্ট উঁচু গম্বুজটি অবস্থিত। পূর্বাংশে দোতলায় বৈঠকখানা, গ্রন্থাগার, গার্ড রুম এবং তিনটি মেহমান কক্ষ। পশ্চিমাংশে রয়েছে একটি নাচঘর, হিন্দুস্তানি কক্ষ এবং কয়েকটি আবাসিক কক্ষ। আহসান মঞ্জিলের নিকটবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে আগত শিক্ষার্থী আয়েশা সুলতানা অনি বলেন, দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার জন্য কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে জাদুঘর পরিদর্শনের ব্যবস্থা রেখেছে, যা খুবই প্রশংসনীয়। এখানে এসে গৌরবময় অতীতের অনেক কিছু জানতে পারি। বিদেশি পর্যটকদের দেখে অনেক কিছু শিখতে পারি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত পিটার নামের এক পর্যটক বলেন, দুদিন ধরে বাংলাদেশ ঘুরে ঘুরে দেখছি। আহসান মঞ্জিলে এসে খুব সুন্দর আবহাওয়া অনুভব করছি। বাংলাদেশি অনেক মানুষ দেখছি এবং বিদেশি নাগরিকদের প্রতি তাদের আগ্রহ দেখে মুগ্ধ হচ্ছি। তবে এখানে আসার রাস্তা খুবই নোংরা ও যানজটপূর্ণ।

বর্ণমালা টেলিভিশন এর সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটি, রানওয়ে দুই ঘণ্টা পর সচল দ্বিতীয় ম্যাচে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে ক্যালিফোর্নিয়ায় মালয়েশিয়াকে ‘সন্ত্রাসবাদ তদন্তে’ সহায়তার আশ্বাস ঢাকার ‘পুরানো খেলায় নতুন প্লেয়ার নয়, খেলার নিয়ম পাল্টাতে এসেছি’ বিয়ের আসরে বরের মাদক সেবনের অভিযোগ, বন্ধ হয়ে গেলো বিয়ে ‘গাজা চুক্তি হতে পারে আগামী সপ্তাহে’ ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব’ শুল্ক-কর জমা অনলাইনে: চালু হলো ‘এ-চালান’ সেবা সাবেক সিইসি এটিএম শামসুল হুদা আর নেই টেক্সাসে ‘বিধ্বংসী’ বন্যায় মৃত্যু বেড়ে ২৪, নিখোঁজ ২৫ শিশু ভূমি ধসের কারণে ঝুঁকিতে ‘নান্দনিক’ সিন্দুকছড়ি-জালিয়াপাড়া সড়ক নির্বাচনের প্রচারে পোস্টার বাদ দেওয়ার প্রস্তাবে বিএনপি–এনসিপির দ্বিমত মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ঢাকায় বৃষ্টি, চলবে ৯ জুলাই পর্যন্ত বিগ, বিউটিফুল বিলকে আইনে রূপ দিলেন ট্রাম্প টিভিতে মোবাইলে কোন খেলা কোথায় দেখবেন ক্লাব বিশ্বকাপে সবার আগে সেমিফাইনালে ব্রাজিলের ক্লাব টেক্সাসে বন্যায় ১৩ জনের মৃত্যু চুয়াডাঙ্গায় তেলবাহী ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ৩, আহত ৫ গোলকিপারের ভুলে চারে দুই হলো না ব্রাজিলের