
নিউজ ডেক্স
আরও খবর

ভাঙা সড়কে ধানের চারা রোপণ, সিটি করপোরেশনকে ‘লাল কার্ড’

প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় যুবকের কাণ্ড

বাঁশের সঙ্গে ‘নৌকা’ ঝুলিয়ে আ.লীগ কর্মী গ্রেপ্তার

ইচ্ছে পূরণে হেলিকপ্টারে বউ আনলেন প্রবাসী আতিক

২১ ঘণ্টা পর লিটনের মরদেহ ফেরত দিল ভারত

মেঘনায় ডুবে গেল ৭ বাল্কহেড, ১৩ জনকে উদ্ধার

র্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমনের বাবাকে মারধর
আলোচনায় মুরাদনগরের নৃশংসতা, জনমনে আতঙ্ক

কুমিল্লায় ব্যাপক আলোচনায় মুরাদনগরের চলমান নৃশংসতা। সাম্প্রতিক সময়ে চাঞ্চল্যকর চার খুন এবং আলোচিত ধর্ষণকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে শুধু জেলার ভেতরে নয় দেশব্যাপী আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এসব ঘটনায় সেখানে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকায় এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে অপরাধীচক্র। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক বিভাজনের দিকে নজর রাখতে গিয়ে অপরাধে মনোযোগ হারাচ্ছে। এতে অশান্ত জনপদে পরিণত হয়েছে কুমিল্লার এই উপজেলাটি। সামাজিক অস্থিরতা এবং নৃশংসতা কমাতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, কুমিল্লার মুরাদনগরে ৫ আগস্টের পর থেকে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বিএনপির মধ্যে একটি টানাপোড়েন চলছে। এতে গত ৮-৯ মাস যাবত ওই এলাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতা চরম আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দুর্বৃত্ত এবং অপরাধীচক্র।
গত ২৮ জুন উপজেলার বাহেরচর গ্রামে এক সংখ্যালঘু নারীকে ধর্ষণের পর বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে দেশ এবং দেশের বাহিরে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এই নৃশংসতার রেশ না কাটতেই বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার কড়ইবাড়ী গ্রামে গণপিটুনিতে একই পরিবারের তিনজনকে হত্যা করা হয়।
এদিন বিকেলে উপজেলার ইউসুফ নগর গ্রাম থেকে এক নির্মাণ শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর পরকীয়া এবং অন্তরঙ্গ মুহূর্ত দেখে ফেলায় পরিকল্পিতভাবে মনির হোসেন নামের ওই নির্মাণ শ্রমিককে হত্যার পর ঘরের মেঝেতে লাশ পুতে রাখা হয়।
মুরাদনগর উপজেলাব্যাপী এসব নৃশংসতাকে পরিকল্পিত মনে করছে কেউ কেউ। সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি এবং আইন-শৃঙ্খলার অবনতি করার জন্যই নেপথ্যে থেকে কোন চক্র এসব ঘটনার ইন্ধন দিতে পারে বলে অনেকের ধারণা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, রাজনৈতিক বিভাজনের সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। এখানে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনায় রাজনৈতিক পক্ষ-বিপক্ষ সৃষ্টি হচ্ছে। যেকোনো ঘটনায় রাজনৈতিক নেতারা পক্ষ-বিপক্ষ অবলম্বন করায় প্রকৃত অপরাধীরা আড়াল হয়ে যাচ্ছে। এতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথভাবে ফাংশন করতে পারছে না।
কোম্পানীগঞ্জ বাজার বনিক সমিতির সাবেক সভাপতি চন্দন বণিক বলেন, মুরাদনগরের রাজনৈতিক অস্থিরতা, নৃশংসতা জনমনে আতঙ্ক ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। চুরি-ছিনতাই এর ঘটনা বেড়েছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া সামাজিক উন্নয়ন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য গতিশীল রাখা কঠিন।
তিনি বলেন, আমার মনে হয় এসব ঘটনার নেপথ্যে কোন অপরাধী চক্র ইন্ধন যোগাচ্ছে। গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে এসব চক্রের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সামাজিক সংগঠক ইমতিয়াজ আহমেদ জিতু বলেন, মুরাদনগরে রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে অপরাধীচক্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। প্রতিটি অপরাধের নেপথ্যে রাজনৈতিক পক্ষপাতীত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। রাজনৈতিক বিভাজনের সুযোগ নিয়ে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এতে মুরাদনগরে নৃশংসতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে জাতীয় হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খান বলেন, রাজনৈতিক বিভাজনের মধ্যেই চরমপন্থার উত্থান ঘটে। মুরাদনগরে সম্প্রতি আমরা এনসিপি এবং বিএনপির মধ্যে একটা চরম দূরত্ব দেখতে পাচ্ছি। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজনৈতিক এসব অস্থিরতার দিকে বেশি নজর রাখতে হচ্ছে। আর এই সুযোগে একশ্রেণীর অপরাধীরা নৃশংসতা চালাচ্ছে। মুরাদনগরে আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ন এবং সামাজিক অস্থিরতা দূর করতে রাজনৈতিক ঐক্য খুব বেশি জরুরী।
মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান বলেন, এখানে বিএনপি এবং এনসিপির মধ্যে আধিপত্যের লড়াই রয়েছে। প্রতিটি ঘটনাতেই এখানে রাজনৈতিক বিভাজনের একটা প্রভাব পড়ছে। এতে আমরা আইন-শৃঙ্খলা কর্মকাণ্ড স্বাভাবিকভাবে ফাংশন করতে পারছি না। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে অপরাধীচক্র আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান বলেন, মুরাদনগরের সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে আমরা অনেক পরিশ্রম করছি। ধর্ষণকাণ্ডের ঘটনা অনেকটাই ডিটেক্ট হয়ে গেছে। চারটি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ডিটেক্ট হয়েছে। সবকটি ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশ কাজ করছে। আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়নে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। এক্ষেত্রে সমাজের সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।