
নিউজ ডেক্স
আরও খবর

বাজছে লানা ডেল রের গান, রোজার কাঁধে হাত রেখে বৃষ্টিতে তাহসান

বলিউড সিনেমা থেকে বাদ পড়লেন পাকিস্তানের অভিনেত্রী মাওরা

কার্গিল যুদ্ধ কতটা ভয়াবহ ছিল, জানালেন আনুশকা শর্মা

মা দিবসে অভিনেত্রীর আবেগপ্রবণ চিঠি

‘ইনসাফ’ কায়েম করতে ফুল আর কুড়াল হাতে ফারিণ

ট্রাম্পকে নিয়ে কথা বলতে অপারগ টম ক্রুজ

‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে সিনেমা ইস্যুতে বিতর্ক, প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন নির্মাতা
ধারাবাহিক নাটকে শিল্পীদের অনাগ্রহ কেন

একসময় টেলিভিশনের ধারাবাহিক নাটকগুলো ছিল বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু এখন হাতেগোনা কিছু ধারাবাহিক নির্মিত হলেও, সেগুলোতে প্রথমসারির তারকা শিল্পীদের উপস্থিতি নেই বললেই। হালের জনপ্রিয় প্রায় সব তারকা অনলাইনকেন্দ্রিক কনটেন্টের দিকে মনোযোগী হওয়ায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছে টেলিভিশনের ধারাবাহিক নাটক।
নাটকের জনপ্রিয় তারকা মোশাররফ করিম, জাহিদ হাসান, জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, আব্দুন নূর সজল, মেহজাবীন চৌধুরী, তাসনিয়া ফারিণ, তানজিন তিশা, ফারহান আহমেদ জোভান, নিলয় আলমগীর, জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি, তৌসিফ মাহবুব, কেয়া পায়েল, মুশফিক ফারহান, সাফা কবির, সাবিলা নূর, সামিরা খান মাহি সহ অনেকেই ধারাবাহিকের থেকে খন্ড নাটক ও ওটিটি কনটেন্টকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। এদের মধ্যে দু’একজনকে কয়েকটি ধারাবাহিকে দেখা গেলেও, বাকিদের রয়েছে ধারাবাহিকে অনাগ্রহ। এছাড়াও ধারাবাহিকের নিয়মিত শিল্পীদেরও এখন খন্ড নাটকের দিকে ঝুঁকতে দেখা যাচ্ছে।
দেশের তারকা শিল্পীদের ধারাবাহিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কারণে দেখা দিচ্ছে শিল্পী সংকট, গৌরব হারাচ্ছে ধারাবাহিক নাটক। এদিকে অভিনয়শিল্পীদের দাবি, তারা ধারাবাহিকে কাজ করে মানসিকভাবে ও অর্থনৈতিকভাবে সন্তুষ্ট নন।
জানা গেছে, ধারাবাহিকে কাজ করে প্রতিদিন তারকাদের যে আয় হয়, তার থেকে তিন গুণ বেশি আয় করেন অনলাইনভিত্তিক কাজগুলো থেকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিনয়শিল্পী জানান, টিভি ধারাবাহিকে নানা অজুহাতে বাজেট কমানোর ফন্দি থাকে। নির্মাতারা তিনদিনের কাজ একদিনে করিয়ে নিতে চান। দর্শকদের কাছে একটা নাটক জনপ্রিয়তা পেলে হুট করে পর্ব বাড়ানো শুরু হয়। এজন্য শিল্পীরা ধারাবাহিকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
এদিকে প্রযোজকদের দাবি, শিল্পীদের চাহিদামতো পারিশ্রমিক দিয়েও ধারাবাহিকের জন্য শিডিউল পাওয়া যাচ্ছে না।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক টেলিভিশন প্রযোজক বলেন, ‘দর্শক চাহিদা আছে এমন শিল্পীরা অনেকেই ধারাবাহিকের কথা শুনলেই নাক সিটকান। জনপ্রিয় শিল্পীরা সরাসরি বলে দেন তারা ধারাবাহিক করেন না। এরকমটা চলতে থাকলে ধারাবাহিক নাটক বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।’
ধারাবাহিকের মাধ্যমে একসময় চরিত্র সৃষ্টি হতো। ছোট চরিত্রগুলোতেও প্রতিভা বিকাশের সুযোগ থাকত। এভাবে অনেক শিল্পীও তৈরি হতো। যারা আজ প্রতিষ্ঠিত অভিনয়শিল্পী।
এ প্রসঙ্গে অভিনেতা ও নির্মাতা আবুল হায়াত বলেন, ‘একটা সময় ঐতিহ্য ও পারিবারিক গল্পে সমৃদ্ধ ছিল ধারাবাহিক নাটকগুলো। এসব নাটক ঐতিহ্য ও পারিবারিক গল্পে সমৃদ্ধ ছিল। এখন মানুষ নাটকই দেখছে না। শিল্পীরা দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সরে যাচ্ছেন। এখন সবাই অভিনয়কে ব্যবসা হিসেবে নিয়েছে। আগে চিন্তা করছেন কোন কাজ করে কত টাকা পাওয়া যাবে।’
ধারাবাহিক থেকে তারকারা ক্রমশ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কেন? জানতে চাইলে জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম বলেন, ‘অনলাইনের কাজের তুলনায় এখন টিভি নাটকে নির্মাতারা যত্ন কম নিচ্ছেন। ধারাবাহিকে এক দিনে ১৫ থেকে ২০টি দৃশ্যের শুটিং করতে হয়। অনেক সময় চিত্রনাট্য গোছানো থাকে না, অবহেলার ছাপ থাকে।’
একই প্রশ্নের উত্তরে জাহিদ হাসান বলেন, ‘আগে ধারাবাহিক নাটকে সুযোগ পাওয়া অনেক বড় ব্যাপার ছিল। এখন দেখি অনেকেই ধারাবাহিক নাটক করতে চান না, কমিটমেন্টের অভাব। একজন শিল্পীর দায়বদ্ধতা থাকা জরুরি। এখনকার ছেলেমেয়েদের অনেকেই অস্থির। অনেকেরই নাটকের প্রতি ভালোবাসা নেই, বরং টাকাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।’
ধারাবাহিক নাটকের দুর্বল গল্পের কারণেই শিল্পীরা খন্ড নাটকমুখী বলে অনেকে দাবি করছেন। তবে এর সঙ্গে একমত প্রকাশ করতে পারেননি জনপ্রিয় অভিনেত্রী নাদিয়া আহমেদ। একক নাটকের পাশাপাশি নিয়মিত তিনি ধারাবাহিক নাটকে কাজ করছেন। এ অভিনেত্রীর হাতে আছে একাধিক ধারাবাহিক নাটক।
তিনি বলেন, ‘যারা ধারাবাহিকে কাজ করছেন না তারা চান রাতারাতি তারকা হতে। বেশি বেশি লাইক ফলোয়ারের জন্য তারা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এ ধরনের অভিনয়শিল্পীরাই ধারাবাহিক নাটক থেকে দূরে আছেন।’
অভিনেত্রী মেহজাবিন চৌধুরী বলেন, ‘এখন যে ধরনের গল্পের ধারাবাহিক নির্মিত হচ্ছে সেসব নাটকে নিজেকে অভিনেত্রী হিসেবে মেলে ধরার সুযোগ কম থাকে। এক্ষেত্রে খন্ড নাটকে অভিনেত্রী হিসেবে প্রমাণের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। দর্শকরাও আজকাল খন্ড নাটকের প্রতিই বেশি আগ্রহী।’
এখন সময়টা একক নাটকের বলেই মন্তব্য করলেন অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ। তিনি বলেন, ‘আমি যতটুকু পরিচিতি পেয়েছি সেটি খন্ড নাটক থেকেই। তাই এর প্রতি আমার অন্যরকম একটা আগ্রহ আছে। এছাড়া দর্শক এখন খন্ড নাটকের দিকেই বেশি মনোযোগী। অল্প সময়ের মধ্যে এর কাজ শেষ করা যায়। কিন্তু ধারাবাহিকে যেকোনো চরিত্রের জন্য লম্বা সময়ের প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া, সত্যি বলতে ধারাবাহিক নাটকে টানা শিডিউল দেয়ার মতো সময় আমার হাতে নেই।’
অভিনেতা ফারহান আহমেদ জোভান বলেন, ‘আমি শুরুতে ধারাবাহিকে কাজ করেছি। কিন্তু শেষ কয়েক বছরে ধারাবাহিকে কাজ করা হচ্ছে না সেভাবে। একই ধরনের চরিত্রে কাজ করতে করতে বোরিং হয়ে যাই। গৎবাধা চরিত্রে কতদিন কাজ করা যায়। তাই একক নাটকেই কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই।’
টিভি নাটক সংশ্লিষ্টদের মতে, বিভিন্ন চ্যানেল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে টিভি নাটকের খারাপ সময় যাচ্ছে। ভালো বাজেটের সংকটের কারণে নির্মাতারাও বিকল্প পথে হাঁটছেন। একইসঙ্গে শিল্পীরাও অনলাইনের কাজকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
বর্ণমালা টেলিভিশন এর সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।