
নিউজ ডেক্স
১৪ জুলাই স্মরণে মধ্যরাতে রাজপথে ঢাবি নারী শিক্ষার্থীরা

গণঅভ্যুত্থানের ১৪ জুলাই স্মরণে মিছিল নিয়ে রাজপথে নেমেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১৪ জুলাই) রাত ১২টার দিকে রোকেয়া হল থেকে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এতে অন্য হলের ছাত্রীদেরও উপস্থিতি দেখা যায়।
২০২৪ সালের ১৪ জুলাই হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে একজন টিভি সংবাদিক প্রশ্ন না করে তার মতামত তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ভুল বুঝিয়ে যুক্তিযুদ্ধের মুখোমুখি করা হয়েছে। এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আরেকটা খুবই ভুল ধারা তৈরি করা হয়েছে যে, কোটা ও মেধা। মনে হতে পারে যারা কোটায় চাকরি করেন, তাদের কোনো মেধা নেই। কিন্তু আবেদন করার ক্ষেত্রে কোটা লাগে না, প্রিলিমিনারিতে কোটা লাগে না। লিখিত পরীক্ষায় কোটা লাগে না। একদম শেষ মুহূর্তে গিয়ে কোটা লাগে। তখন আসলে মেধায় সবাই সমান। তখন আমার সামনে যদি দুইটি অপশন থাকে, দুজনই সমান মেধাবী। একজন যুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও আরেকজন রাজাকারের সন্তান। আমি অবশ্যই যুক্তিযুদ্ধের সন্তানকে চাকরি দেব।’ ওই সংবাদিক এ কথা শেষ না করতেই প্রধানমন্ত্রী জোরের সঙ্গে বলেন, ‘অবশ্যই’। এরপর প্রধানমন্ত্রী থেমে যান। তিনি ওই সংবাদিককে আরও কথা বলার সুযোগ করে দেন। তখন ওই সাংবাদিক আরও বলেন, ‘তবে মেধা ও কোটা দিয়ে খুব সহজে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাচ্ছে। সব মেধাবীর চাকরিতে না নিয়ে কোটাতে নিচ্ছে। আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) খুবই ধন্যবাদ যে, গত ১০-১২ দিন ধরে আন্দোলন হচ্ছে, আপনারা অসীম ধৈর্যের সঙ্গে আন্দোলন মোকাবিলা করছেন। যারা আন্দোলন করছেন, তারা সংক্ষুব্ধ, চাকরি না পেয়ে বঞ্চিত। তাদের ক্ষোভের সঙ্গে আমরা খুবই একমত। তাদের পেছনে কেউ ইন্ধন জুগিয়ে, ভুল বুঝিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মুখোমুখি করছে কি না?’ এরপর তিনি আরও কিছু কথা বলেন। তার কথা শেষ হলে প্রধানমন্ত্রী জবাবে কোটা নিয়ে কিছু কথা বলেন। একপর্যায়ে তিনি বলে ওঠেন, ‘যুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এত ক্ষোভ কেন? তার মানে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা মেধাবী না। যত রাজাকারের বাচ্চারা, নাতি-পুতিরা হলো মেধাবী।’
বিকালে সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাংবাদিকের প্রশ্ন ও প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য ভাইরাল হয়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীসহ সচেতন মহল প্রধানমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় নানা ধরনের কার্টুনও প্রকাশ পেতে থাকে। সমালোচনা চলতে থাকে সর্বত্র। এমনকি সরকারি মহলেও এ বক্তব্য সমালোচিত হয়। সন্ধ্যার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা একত্রিত হতে থাকেন। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ছাত্রলীগও হলে হলে অবস্থান নিয়ে কোটাবিরোধীদের ধাওয়া করে। একপর্যায়ে কোটাবিরোধীরা হল এলাকা ছেড়ে সংগঠিত হয়ে টিএসসিতে সমবেত হয়। শুরু হয় স্লোগান, ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার-রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার-স্বৈরাচার’। ‘চাইতে এলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’ প্রভৃতি স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। বিভিন্ন হল ও আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যোগ দেন। ছাত্রীরাও হল গেটের তালা ভেঙে আন্দোলনে যোগ দেন। সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। সেদিন থেকে কোটাবিরোধী আন্দোলন জ্বলে ওঠে।
যে আন্দোলন আদালতের মাধ্যমে বা সরকারের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়ার প্রক্রিয়ায় ছিল, আন্দোলনের তীব্রতাও কমে আসছিল; কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ওই মন্তব্যে আন্দোলন আবার দানা বেঁধে ওঠে। ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। এটিই ছিল কোটাবিরোধী আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট। এরপর থেকে সরকার ও আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগও দমন-পীড়নে নামে। ছাত্ররাও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন, যা ধীরে ধীরে তীব্র হতে থাকে।
এক বছর পর, ওই স্মৃতিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা আবারও রাজপথে নেমেছেন। রোকেয়া হল থেকে মিছিল শুরু করে ছাত্রীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে জড়ো হন। এ সময় ‘তুমি কে, আমি কে – রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগানে মুখর হয়ে উঠে ঢবি ক্যাম্পাস। রোকেয়া হল ছাড়াও সুফিয়া কামাল হলসহ অন্য নারী হলের শিক্ষার্থীরাও এই কর্মসূচিতে যোগ দেন।
শিক্ষার্থীদের জন্য রাজু ভাস্কর্যের সামনে কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে। মিছিল ও সমাবেশে অংশ নিতে সারারাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী হলগুলোর গেট খোলা রাখা হয়েছে।
বর্ণমালা টেলিভিশন এর সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।