
নিউজ ডেক্স
আরও খবর

আমরা অত্যাচারিত হয়েছি কিন্তু হাসিনার কাছে আত্মসমর্পণ করিনি: রিজভী

ভুয়া পরিচয়ে প্রেম, বিয়ে করতে এসে টিকটকার ধরা

কাঁচামরিচের কেজি ১০ টাকা

যশোর হাসপাতাল টয়লেটে প্রসূতির সন্তান প্রসব

‘আগামীকাল বাঁচব কিনা’ বলার ৩ ঘণ্টা পর যুবকের মৃত্যু

মুক্তাগাছায় বৃদ্ধের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

ময়মনসিংহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১১
চট্টগ্রাম বন্দরে লতিফের প্রভাবেই নবায়ন, কাজের অনুমতি

চট্টগ্রাম বন্দরে শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর লাইসেন্স নবায়ন বা অনুমতির ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি এমএ লতিফের প্রভাব একটুও কমেনি! তিনি অংশীদারত্ব নেওয়ার পর ২০ বছরের পুরোনো একটি লাইসেন্স বেআইনিভাবে নবায়ন করার পর ওই লাইসেন্সের বিপরীতে কাজ দেওয়ার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে চিঠি দিয়েছে। অন্যদিকে অপর একটি লাইসেন্স বিধিবহির্ভূতভাবে হস্তান্তরের নামে মালিকানা নিয়ে সেই লাইসেন্সের বিপরীতেও কাজ দেওয়া হচ্ছে। এই লাইসেন্সের মালিকও এমপি লতিফের আশ্রয়দাতা বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এর মধ্যে একটি লাইসেন্স রয়েছে ডিভি হাজি আবদুল আজিজ অ্যান্ড কোং-এর নামে। অন্যটি কেএম এজেন্সির নামে। ‘পরিত্যক্ত’ দুটি লাইসেন্সই নবায়ন ও মালিকানা পাওয়ার ক্ষেত্রে লতিফের প্রভাব রয়েছে বলে শিপ হ্যান্ডলিং অ্যান্ড বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন সূত্র অভিযোগ করেছে।
এদিকে এই দুটি লাইসেন্সের বিপরীতে কাজ দেওয়ার ঘটনায় বিদ্যমান অন্য লাইসেন্সধারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, এর আগে বিগত সরকারের শেষদিকে এসে বিনা টেন্ডারে ২৩টি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এমনকি হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে পতিত সরকারের মন্ত্রী, এমপি রাজনৈতিক নেতাদের নিজেদের নামে, স্ত্রী-সন্তান এমনকি আত্মীয়স্বজনের নামে এসব লাইসেন্স দিয়েছিল। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সেসব লাইসেন্স বাতিল করা হয়। পক্ষান্তরে এমএ লতিফের প্রভাবে বিতর্কিত দুটি লাইসেন্স নবায়ন ও শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর হিসাবে কাজ দেওয়ার ঘটনায় বন্দরে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
জানা গেছে, ডিভি হাজি আবদুল আজিজ অ্যান্ড কোং-এর নামে স্টিভিডোরিং লাইসেন্স ছিল। ২০০৭ সালে স্টিভিডোরিং প্রথা বাতিল হয়। ২০১৫ সালে এসে স্টিভিডোরিংদের শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর হিসাবে পারফরম্যান্স এবং টেন্ডারের মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়। বর্তমানে সে ধরনের ৩২টি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। কিন্তু ডিভি হাজি আবদুল আজিজ অ্যান্ড কোং টেন্ডারে অযোগ্য ঘোষণা হয়। প্রায় ২০ বছর পর এসে ওই লাইসেন্সে এমএ লতিফ নিজের অংশীদারত্ব নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষকে চাপ প্রয়োগ করেন শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর হিসাবে ওই লাইসেন্স নবায়নের জন্য। মূলত তার প্রভাবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বিনা টেন্ডারে এই লাইসেন্সটি নবায়ন করে স্টিভিডোরিং লাইসেন্স থেকে শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর লাইসেন্স শ্রেণিভুক্ত করে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ওই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার জন্য শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে চিঠি দেয়। কিন্তু সংস্থাগুলো বিনা টেন্ডারে এবং বেআইনিভাবে নবায়ন করা ওই লাইসেন্সের বিপরীতে কাজ দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। একইভাবে কেএম এজেন্সির মালিকের মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরির মধ্যে একজনই একটি সাদা প্যাডের মাধ্যমে মালিকানা হস্তান্তর করে নেন। অন্য উত্তরসূরিরা এতে আপত্তি দিলে বন্দর কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে বিষয়টি সুরাহা করে আসার জন্য চিঠি দেন মালিক দাবিদার ব্যক্তিকে।
সূত্র জানায়, এই চিঠি বা মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন না হওয়া সত্ত্বেও কেএম এজেন্সিকে রহস্যজনকভাবে জাহাজ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। বন্দর-পতেঙ্গা আসনের সাবেক এমএ লতিফের ঘনিষ্ঠ ও আশ্রয়দাতা হিসাবে পরিচিত মশিউল আলম এই এজেন্সির মালিকানা দাবি করে কাজ নিচ্ছেন বলে সূত্র অভিযোগ করেছে। যদিও এমএ লতিফ বর্তমানে জেলে রয়েছেন।
নতুন করে টেন্ডারবিহীনভাবে একটি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়া এবং আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে যে প্রতিষ্ঠানকে অপারেটিংয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সেটি চট্টগ্রাম বন্দরে আগে কাজ করত। নানা কারণে তাদের লাইসেন্স বাতিল বা স্থগিত হয়েছিল। ফি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পুনরায় লাইসেন্স নবায়ন করছে মাত্র। এখন বাতিল হওয়া কোনো প্রতিষ্ঠান যদি নতুন করে জরিমানা বা ফি দিয়ে কাজ করতে চায়, তাহলে বন্দর তো না করতে পারে না।’
চট্টগ্রাম বন্দর ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে বন্দরের তালিকাভুক্ত ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৩২টি প্রতিষ্ঠান শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর হিসাবে কাজ করছে। এক সময় সব ধরনের আমদানি পণ্যের শতভাগ হ্যান্ডলিং অপারেটররা করলেও বর্তমানে বড় বড় গ্রুপ নিজেরাই আমদানি পণ্য হ্যান্ডলিং (জাহাজ থেকে নামানো) করে থাকে। এজন্য বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ অনেক কমে যায়। তার ওপর বেআইনিভাবে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রভাবে লাইসেন্স নবায়ন বা কাজের অনুমতির বিষয়টি যৌক্তিক হতে পারে না। এতে করে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আইন ও বিধিবিধানেরও ব্যত্যয় ঘটছে।