
নিউজ ডেক্স
আরও খবর

রেলওয়েতে বাড়ছে লোকসান দেড় যুগ বন্ধ ৭০ ট্রেন

কাশ্মীর হলো সলতে, হিন্দুত্ব আগুন

শতবর্ষের অভিজাত অবকাশকেন্দ্র কুমিল্লার ‘রানীর কুঠি’

‘আমি কষ্ট পাচ্ছি, আমাকে বাঁচান’

মধ্যরাতে সরিয়ে দেওয়া হলো খালেদা জিয়ার ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে

টিকাদানে রোল মডেল বাংলাদেশ ; এক ডলারে ফেরত আসে ২৫ ডলার

ডায়েরিতে বাবার ছবি আঁকতেন লামিয়া, লিখেছেন নিজের স্বপ্নের কথা
সংরক্ষণের অভাবে নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে চাকমা রাজের ঐতিহাসিক নিদর্শন রাঙ্গুনিয়ার রাজবাড়ী

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে চাকমা রাজের ঐতিহাসিক নিদর্শন চাকমা রাজবাড়ী। তবে সংরক্ষণের অভাবে জীর্ণশীর্ণ হয়ে বর্তমানে নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে তিনশ বছরের প্রাচীন এ রাজবাড়িটি।
জানা যায়, এককালে চট্টগ্রামের দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়ন ছিল চাকমা রাজাদের রাজধানী। সেখানে সতেরো শতকে স্থাপিত হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী চাকমা রাজার বাড়ি। বর্তমানে এ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়। অথচ এটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে চাকমারাজের ঐতিহ্য। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসাবে এটির সংস্কার ও সংরক্ষণ করা গেলে তা আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে অভিমত স্থানীয়দের।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইট-সুরকি দিয়ে তৈরি প্রাচীন চাকমা রাজবাড়িটি লতা-গুল্মে ভরা ঝোপঝাড়ে আচ্ছাদিত। বাড়িটি নির্মিত হয়েছিল ৫২ একর জায়গা নিয়ে। বর্তমানে বাড়িটির চারপাশের দেওয়ালে জন্মেছে নানা আগাছা ও লতাগুল্ম। খসে পড়ছে ছাদের পলেস্তারা। এটি এখন শুধু কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ধুয়ে প্রত্ন-নিদর্শনটির অবস্থা বর্তমানে নড়বড়ে। সবশেষ ১৮৭৩ সালে এ প্রাসাদ থেকে রাজ্যশাসন করেছিলেন কিংবদন্তি নারী চাকমা রানি কালিন্দী। তার মৃত্যুর দেড়শ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রাসাদটি প্রত্ন-নিদর্শন হিসাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বাড়িটি দেখাশোনা করে আসছিলেন চাকমা রাজার বংশধর প্রমতোষ দেওয়ান। ২০১৩ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করায় তার ছেলে রুমেল দেওয়ান বাড়িটি দেখভাল করছেন। এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে রাজবাড়িটির দরবার, হাতি-ঘোড়ার পিলখানা, বিখ্যাত সাগরদীঘি, পুরাকীর্তি, বৌদ্ধ বিহারসহ গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। চট্টগ্রাম থেকে কাপ্তাই সড়কপথে ৩৫ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটি ৪৫ কিলোমিটার পেরোলেই রাজবাড়িটির অবস্থান।
ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, ১৭৩৭ সালে রাজানগর ইউনিয়নের রাজাভূবন গ্রামে সর্বপ্রথম রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন চাকমা রাজা শেরমুস্ত খাঁ। ১৭৫৭ সালে তার মৃত্যুর পর রাজ্যভার নেন পোষ্যপুত্র শুকদেব রায়। তিনি তার রাজত্বকালে সেখানে রাজবাড়িটি স্থাপন করেন। এছাড়া গড়ে তোলেন সৈন্যশালা ও বন্দিশালা। তার রাজ্যসীমা ছিল-উত্তরে ফেনী, দক্ষিণে শঙ্খ নদী, পূর্বে লুসাই পাহাড়, পশ্চিমে নিজামপুর (বর্তমানে গ্র্যান্ডট্রাঙ্ক রোড) সড়ক। সেই সময় আরাকানিদের অত্যাচারে মোগল নবাবের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করেন চাকমা রাজা শুকদেব। তখন চট্টগ্রামের নবাব ছিলেন জুলকদর খাঁ। রাজা শুকদেবের কোনো সন্তান ছিল না। তার মৃত্যুর পর চাকমা রাজের রাজধানী রাঙামাটিতে স্থানান্তর করা হলে রাজানগরের রাজবাড়িটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। এর দীর্ঘকাল পর ১৮৩৭ সালে রানি কালিন্দী রাজ্যভার গ্রহণ করলে আবার এই বাড়িটির জৌলুস ফিরে আসে। ওই বাড়ি থেকেই রাজ্য পরিচালনা করতেন তিনি।
বাড়িটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা রুমেল দেওয়ান বলেন, আমরা যতদূর জানি, সবশেষ রানি কালিন্দী এটি থেকে রাজ্য পরিচালনা করতেন। তার মৃত্যুর পর বাড়িটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছিল। তবে তারও আগে ১৭৭৬ সালে রাজা শুকদেব রায়ের মৃত্যুর পর তার বংশধর শের দৌলত খাঁ রাজ্যভার গ্রহণ করলেও রাঙামাটিতে রাজবাড়ী স্থাপন করে রাজত্ব স্থানান্তর করেন তিনি। সেই থেকে দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের রাজাভূবন গ্রামের রাজবাড়িটি অব্যবহৃত হয়ে যায়। স্থানীয়রা জানান, তারা আশা করেছিলেন চাকমা রাজবাড়িটি ঘিরে এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে। অথচ আজও তার কিছুই হয়ে ওঠেনি। ২০০৮ সালে রাজবাড়িটি পরিদর্শনে যান রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। তখন তিনি বাড়িটি সংরক্ষণের কথা বলেছিলেন। কিন্তু পরে আর কোনো সংস্কার করা হয়নি।
রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, পরিত্যক্ত ওই চাকমা রাজবাড়িটি সংস্কার ও সংরক্ষণের চিন্তা আছে। তবে নানা কারণে তা আজও হয়ে ওঠেনি।
বর্ণমালা টেলিভিশন এর সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।