শেখ ফজলল করিম স্মৃতি পাঠাগারে এখনো ফ্যাসিবাদের তালা

শেখ ফজলল করিম স্মৃতি পাঠাগারে এখনো ফ্যাসিবাদের তালা

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২০ মে, ২০২৫ | ১০:৪৬ 29 ভিউ
লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের কাকিনা বাজার। বাজারটির বাসস্ট্যান্ডেই মহাসড়ক ঘেঁষে তালাবদ্ধ জীর্ণ ফটক। ফটকের দুই পাশের জায়গা দখল করে বসানো হয়েছে দোকান। আর ফটকটির ভেতরে-বাইরে আবর্জনার স্তূপ, ঝোপ। ভেতরে থাকা দ্বিতল ভবনের গায়ে হয়তো অনেকদিন পড়েনি রংয়ের প্রলেপ, ভবনে ঝুলে থাকা সাইনবোর্ডটিও মলিন। এ চিত্র কবি শেখ ফজলল করিম স্মৃতি গণপাঠাগারের। যার অনেক সৃষ্টির মধ্যে অনবদ্য একটি কবিতা ‘কোথায় স্বর্গ? কোথায় নরক?’। কবির স্মৃতি ধরে রাখতে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালে পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু পরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় এক নেতার ‘রোষানলে’ পড়ে পাঠাগারটি। ফলে সেটির দিকে আর কেউ তাকায়নি, দীর্ঘদিন ধরে উদ্যোগের অভাবে পাঠাগারটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। কবির জন্মভিটায় থাকা স্মৃতিচিহ্নগুলোও যেন হারাতে বসেছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র। বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম শেখ ফজলল করিম। যিনি কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনায় ১৮৮৩ সালের ১৪ এপ্রিল জন্মেছিলেন। ১৯৩৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মভিটায়ই ইন্তেকাল করেন তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে নানা রচনার জন্য তিনি ‘সাহিত্য বিশারদ’, ‘কাব্যরত্নাকার’ ও ‘নীতি ভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কবি স্মৃতি পাঠাগারের পাশ দিয়ে মহাসড়ক থেকে নেমে যাওয়া সড়ক ধরে ভেতরের দিকে খানিকক্ষণ হাঁটলেই ‘কবিবাড়ি’। বাড়ির উঠানের একপাশে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন শেখ ফজলল করিম। টিনশেডের আধাপাকা বাড়ির একটি কক্ষে এখনো রয়েছে কবির কিছু স্মৃতিচিহ্ন, যেগুলো যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে প্রায় নষ্টের উপক্রম। সেখানে রয়েছে কবির ব্যবহৃত চেয়ার, খাট, ব্যবহৃত টুপি, দোয়াত-কলম, ছোট্ট কুরআন শরিফ, ম্যাগনিফায়িং গ্লাস ও কিছু বোতাম। কবির টানে দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটক এলে বাড়িতে থাকা কবির একজন নাতবউ কিছু সময়ের জন্য ঘরটি খুলে দেন। সেখানে নেই দর্শনার্থীদের জন্য সামান্য বসার ব্যবস্থাটুকুও। কবির স্মৃতি বা বাড়িটি দেখভালের মতো উল্লেখ করার মতো কেউ নেই সেখানে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু শেখ ফজলল করিমের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীর দিনটিতে তার কক্ষের তালা খোলা থাকে, বছরের বাকি সময় তালাবদ্ধ। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় কয়েকজনের উদ্যোগে বেশ কয়েক বছর আগে কবি স্মৃতি পাঠাগারটি বছরখানেক খোলা ছিল। পরে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় সেটি আবারও বন্ধ হয়ে যায়। এখন দখল-দূষণে দিন দিন পাঠাগারটিও যেন পরিত্যক্ত হয়ে পড়ছে। ২০০৫ সালে কবির স্মৃতি রক্ষার্থে তৎকালীন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুর উদ্যোগে জেলা প্রশাসন পাঠাগারটি নির্মাণ করেছিল। অভিযোগ রয়েছে, কাকিনা ইউনিয়ন পরিষদের পলাতক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা তাহির তাহু কবি শেখ ফজলল করিম স্মৃতি গণপাঠাগারের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। গত প্রায় ১৬ বছরে ওই এলাকার সবকিছুতেই ‘দাদাগিরি’ করতেন তিনি। কিন্তু সভাপতি হয়েও পাঠাগার চালু কিংবা কবির স্মৃতি রক্ষায় নেননি কোনো উদ্যোগ। স্থানীয় ‘নাজির’ পরিবারের সন্তান তাহু পূর্বসূরিদের মতোই কখনো কবি পরিবারকে সহ্য করতেন না। ফলে কবি প্রসঙ্গে তিনি ছিলেন উদাসীন। স্থানীয় কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘কবির জন্ম ও মৃত্যুদিবসে মাঝেমধ্যে হয়তো ছোটখাটো কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় স্থানীয়ভাবে। এরপর আর কেউ খোঁজ রাখেন না।’ এসএসসি পরীক্ষার্থী জাকিয়া সুলতানা জুঁইয়ের মন্তব্য, ‘স্মৃতিচিহ্ন রক্ষার অভাবে আমরা আমাদের বাড়ির পাশের কবি সম্পর্কে বলতে গেলে তেমন কিছুই জানি না। তাকে জানার জন্য গড়ে তোলা পাঠাগারটিও কোনোদিন খোলা পাইনি। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো একদিন তার চিহ্ন হারিয়ে যাবে।’ স্থানীয় বাসিন্দা বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির বাবু বলেন, ‘লালমনিরহাট জেলার গর্ব কবি শেখ ফজলল করিমের স্মৃতি রক্ষায় এখনই সরকারি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। পাঠাগারটি যেমন নতুন করে চালু করা দরকার, তেমনি প্রয়োজন একটি জাদুঘর তৈরি করা।’ কথা হয় কাকিনা বাজারের ব্যবসায়ী শেখ ফিরোজের সঙ্গে। যিনি কবির পুতি (নাতির ছেলে)। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত থেকে প্রচুর মানুষ কবি বাড়িতে এখনো আসেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কবির তিন প্রজন্ম শেষ হয়ে গেছে। এখন আমরাও লোকের অভাবে কবির স্মৃতি রক্ষা করতে পারছি না। ফলে এজন্য সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।’ আক্ষেপ করে তিনি আরও বলেন, ‘ফজলল করিমের বিখ্যাত কবিতা কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক এক সময় পাঠ্যবইয়ে ছিল। কিন্তু পরে সেটি তুলে দেওয়া হয়। পুনরায় পাঠ্যবইয়ে কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।’ সার্বিক বিষয় জানতে চাইলে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকিয়া সুলতানা বলেন, আমি নিজেও বইপ্রেমী। কিছুদিন আগে এই উপজেলায় এসেছি। তাই পাঠাগার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে কবির স্মৃতিচিহ্ন রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে সম্প্রতি কবি বাড়ির গেটের বিষয়ে একটি আবেদন পেয়েছিলাম। সেটি বরাদ্দের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
এবার হলিউড সিনেমায় শাকিব খান! দেশ ছাড়ার আগে যা বললেন মাহিয়া মাহি ইসরাইলে কেন এতো ভারতীয়, কী করেন তারা ইসরাইলি হামলায় ইরানের ৫ হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত ভয়েস অব আমেরিকায় সর্বোচ্চ ছাঁটাই হানিমুনে গিয়ে স্ত্রী আটক, একাই ফিরলেন বর আমরা অত্যাচারিত হয়েছি কিন্তু হাসিনার কাছে আত্মসমর্পণ করিনি: রিজভী ভুয়া পরিচয়ে প্রেম, বিয়ে করতে এসে টিকটকার ধরা কাঁচামরিচের কেজি ১০ টাকা যশোর হাসপাতাল টয়লেটে প্রসূতির সন্তান প্রসব ‘আগামীকাল বাঁচব কিনা’ বলার ৩ ঘণ্টা পর যুবকের মৃত্যু মুক্তাগাছায় বৃদ্ধের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার আর্জেন্টিনার বোকাকে হারিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার দাপট থামাল বায়ার্ন এবার ব্রাজিলের ফ্ল্যামেঙ্গো হারিয়ে দিল ইউরোপের চেলসিকেও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন ধরে ঘর গোছাচ্ছে বিএনপি অবশেষে মুক্তি পেলেন ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিল অর্থ পাচারে রাজনীতিক আমলা ব্যবসায়ী নির্বাচনি বছরে বাড়ে টাকা পাচার গাজায় ইসরাইলি হামলায় আরও ৮২ ফিলিস্তিনি নিহত ময়মনসিংহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১১ বিতর্কিত তিন জাতীয় নির্বাচনের নেপথ্যে ছিলেন যে ৩ সিইসি