ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে রমজানকে স্বাগত জানাল গাজাবাসী

নিউজ ডেক্স
প্রকাশিতঃ ২ মার্চ, ২০২৫
৫:১৭ পূর্বাহ্ণ
8 ভিউ

ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে রমজানকে স্বাগত জানাল গাজাবাসী

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২ মার্চ, ২০২৫ | ৫:১৭ 8 ভিউ
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ফের মাহে রমজানের আগমন ঘটেছে। গোটা বিশ্ব যখন আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে রমজান পালন করবেন, আমরা তখন নানামুখী দুঃখ, কষ্ট আর শত ক্লেশ নিয়ে এ মাস পার করবো। যুদ্ধের বাজনা এখনো পুরোপুরি থামেনি। চলমান যুদ্ধবিরতি যে স্থায়ী হবে তারও বিন্দুমাত্র গ্যারান্টি নেই। কখন কী ঘটে তা নিয়ে মানুষ উদ্বিগ্ন। সবার একটাই ভয়, হয়তো যুদ্ধ আবার ফিরে আসবে! গত বছরের যুদ্ধের ভয়াবহতা এখনো আমাদের স্মৃতিপটে দোলা দেয়। এখনো ট্রমায় আছি। সেই ভয়াল স্মৃতি বিস্মৃত হয়নি। ২০২৪ সালেই শুধু যুদ্ধের মধ্যে আমরা রোজা কাটিয়েছি এমন নয়। এর আগেও রমজান মাসের বহু রাতে আমরা বোমা হামলার মুখে পড়েছি। আমাদের অনেক রাত অতিক্রান্ত হয়েছে ভয় আর বুকভরা কষ্ট নিয়ে। আমার বয়স তখন নয় বছর। আমার এখনো মনে পড়ে, সেই বয়সেও রোজার রাতে কিভাবে আমাদের উপর বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল। সেই স্মৃতি কখনো ভোলার নয়। গতবারের রোজা ছিল তখনকার তুলনায় কয়েক গুণ বেশি ভয়াবহ। চারদিকের প্রায় সবাই ছিল অভুক্ত আর অনাহারী। সেহরি খাওয়ার মতো খাবারও পাননি অনেকে। সারাদিন রোজা রাখার পর আমরা ছয়জন মিলে শুধু একটা ক্যানের বোতল (মটরশুটির পানীয়) ভাগ করে পান করতাম। সারাদিন বিদ্যুৎ থাকতো না। অন্ধকারের মধ্যে টেবিলের নিচে লুকিয়ে আমরা স্বাদহীন কিছু খাবার চিবিয়ে ইফতার করতাম। এমনভাবে আমরা লুকিয়ে থাকতাম একজন আরেকজনের চেহারাও দেখতে পেতাম না। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই পরিবারের কাছ থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছিলাম। আমার দাদি, ফুফু এবং চাচাতো ভাই-বোন সবাই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। সংযোগের মাস যেন বিচ্ছিন্নতার মাসে পরিণত হয়েছিল। রমজানের আলাদা আনন্দ রয়েছে। সারাদিন উপবাসের পর মাগরিবের আযানটা খুব মধুর লাগে। সেহরির সময় ফজরের আযানও বেশ আনন্দের। তবে সেই আযান শোনা থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছিল। কোথাও কোনো আযানের ধ্বনি শোনা যায়নি তখন। প্রায় সব মসজিদ ধসে দিয়েছিল তারা। অনেকে আযান দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তারা ভয়ে আযান দেননি। যদি আযানের সেই ধ্বনির কারণে তাদের উপর আবারও বিমান হামলা হয়! মুয়াজ্জিনের সুললিত কণ্ঠ শুনে রোজা ভাঙার সময় আমরা ক্ষেপণাস্ত্র ও গুলির শব্দ শুনে ইফতার করেছি। যুদ্ধের আগে, সাধারণত পরিবারের সঙ্গে ইফতারের পর মসজিদে যেতাম মাগরিবের নামাজের জন্য। এ সময় প্রতিবেশী অনেকের সঙ্গেই দেখা হতো। গাজার রাস্তায় হাঁটতাম, সবার সঙ্গে আড্ডা দিতাম। তখন রোজার আমেজ ছিল বেশ আনন্দের। তবে গত বছর তারাবির জন্য আমরা কোনদিন কোথায় গিয়েছি তার কোনো ঠিক ছিল না। গাজার সবচেয়ে সুন্দর ও ঐতিহাসিক মসজিদ গ্রেট ওমারি মসজিদও ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আমার বাবা ও ভাই রমজানের শেষ দশদিন সেই মসজিদে ইতিকাফ করতেন, কুরআন পড়তেন। সেই প্রিয় মসজিদটিও রক্ষা পায়নি হামলার কবল থেকে। সেখানে এখন ময়লার স্তূপ জমে আছে। এবার রোজা শুরু হয়েছে যুদ্ধবিরতির মাঝে। তেমন ভয়-ভীতি নেই। বিমান হামলার কারণে রোজা ভাঙার শঙ্কা নেই। ফজরের নিরবতা বিঘ্নিত করার জন্য বিস্ফোরণও নেই। গাজার বিভিন্ন স্থানে এবার রঙ-বেরঙের বাতি জ্বলছে। যেসব দোকানপাট বা মার্কেট যুদ্ধে ধ্বংস হয়নি সেগুলো আবার খুলে দেওয়া হয়েছে। গাজার সড়কগুলোতে ফের রমজানের আমেজ ফিরে আসতে শুরু করেছে। যুদ্ধে ৪৮ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। অনেক পরিবারে হয়তো সবাই-ই এ যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন। এবার আর তারা ইফতার করতে পারবেন না। কেউ পিতা হারিয়েছেন, কেউবা একমাত্র পুত্রকে হারিয়ে সন্তানহারা হয়েছেন। ইফতারের টেবিলে বসলে এবার হয়তো পরিবারের হারানো সেই সদস্যকে মনে পড়বে তাদের। সেই আসন এবার ফাঁকা থাকবে। আগের রমজানে যে মায়ের হাতে বানানো ইফতার খেয়েছেন সন্তান সেই মা হয়তো এবার ইফতার বানাতে পারবেন না। আগ্রাসী হামলায় তিনিও হয়তো নিহত হয়েছেন। আমিও আমার খুব কাছের মানুষ হারিয়েছি। আমার ফুফা। তিনি প্রতি রোজায় আমাদেরকে দাওয়াত করতেন। কিন্তু যুদ্ধে বর্বরভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমার বান্ধবি সায়মা, লিনা, রোয়াকেও হারিয়েছি। প্রতি বছর রমজানে তারাবির পর তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হতো। এবার রমজান এসেছে ঠিকই, কিন্তু সেই আনন্দ আর উৎসবমুখর পরিবেশ নেই। রমজান রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। এখনই সময় আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার। ঈশ্বরের নৈকট্য লাভ এবং আধ্যাত্মিক সম্পর্ক স্থাপনের মোক্ষম সময় রমজান। আমাদের মসজিদগুলো হয়তো তারা ধ্বংস করতে পেরেছে। তবে আমাদের বিশ্বাসকে তারা বিন্দুমাত্র নড়বড়ে করতে পারেনি। ধসে যাওয়া বাড়ির নিচে তাবু গেড়ে এখনো আমরা তারাবিহ পড়ছি, কুরআন পড়ছি, দোয়া ও মুনাজাতে আমাদের সব প্রত্যাশা প্রভুর কাছে দু’হাত তুলে চাইছি। বিশ্বাস করি, আল্লাহ আমাদের নিদারুণ কষ্টের জন্য উত্তম পুরস্কৃত করবেন।

বর্ণমালা টেলিভিশন এর সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
লুঙ্গি পরে হাজির বুবলি আপত্তিকর মন্তব্যকারীর স্ক্রিনশট পোস্ট করে যা বললেন শবনম ফারিয়া ৭২ ঘণ্টার মধ্যে চতুর্থবারের মতো মার্কিন রণতরী এবং অন্যান্য জাহাজের ওপর গোলাবর্ষণ হুথিদের নতুন বাংলাদেশ গড়ার মডেল তুলে ধরে দোয়া চাইলেন জুনায়েদ জাতীয় নির্বাচন এবং বর্তমান সরকারের সংস্কারের বিষয়টিকে আমরা পর্যবেক্ষণ করছি :সেলিমা রহমান হাতিয়ার কুখ্যাত ডাকাত ফখরুল ইসলাম এর প্রধান সহযোগী নাসির উদ্দিন আটক সরকারি শিশু পরিবারে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন ফটিকছড়িতে যুবদলের এক কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীকে হত্যার অভিযোগ জামালগঞ্জে তিন কেজি গাঁজাসহ চারজন গ্রেফতার নগরকান্দা উপজেলার সাবেক সমাজসেবা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা গাজার প্রধানমন্ত্রী ইসাম দা’আলিস ইসরাইলি বোমা হামলায় নিহত হামজাকে নিয়ে সাক্ষাৎকারে কাজী সালাউদ্দিন হামজাকে নিয়ে দীর্ঘ পোস্ট মাশরাফির প্রকাশ পাচ্ছে ইউনাইটেড গ্রুপের কেলেঙ্কারি খিলক্ষেতের মধ্যপাড়া এলাকায় ধর্ষণের অভিযোগে এক কিশোরকে গণপিটুনি দিয়েছে স্থানীয়ার আওয়ামী সিন্ডিকেট এখনো নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে ইঞ্জিনচালিত ভ্যানের সংঘর্ষে নারী-শিশুসহ তিনজন নিহত ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে ৩০ দিনের জন্য হামলা বন্ধ করতে সম্মত হয়েছেন রাশিয়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানসহ সব আসামির খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ ইউসিবি পার্টনার হিসাবে র‌্যাংকিংয়ে উন্নতি চায়