
নিউজ ডেক্স
আরও খবর

কাশ্মীর হলো সলতে, হিন্দুত্ব আগুন

শতবর্ষের অভিজাত অবকাশকেন্দ্র কুমিল্লার ‘রানীর কুঠি’

মধ্যরাতে সরিয়ে দেওয়া হলো খালেদা জিয়ার ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে

টিকাদানে রোল মডেল বাংলাদেশ ; এক ডলারে ফেরত আসে ২৫ ডলার

ডায়েরিতে বাবার ছবি আঁকতেন লামিয়া, লিখেছেন নিজের স্বপ্নের কথা

আমলাতন্ত্রের জালে বন্দি জনস্বার্থ এনবিআরের দুই সচিবের পদ কি ‘সোনার হরিণ’

চলে গেলেন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দার
‘আমি কষ্ট পাচ্ছি, আমাকে বাঁচান’

‘আল্লাহ আমি জানি, আমার বুদ্ধি বেশি তাই তুমি আমাকে এমন রোগ দিয়েছো। আল্লাহ্, আমার রোগ সারিয়ে দাও। আমি কষ্ট পাচ্ছি। আমি বাঁচতে চাই। আল্লাহ্, আমাকে বাঁচাও’-প্রতিদিন অন্তত দশ বার আজান দিতে দিতে এভাবেই নিজের জীবন ভিক্ষা চেয়ে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানায় ছয় বছর বয়সি ইয়াফি।
একমাত্র সন্তানের এমন বাঁচার আকুতি দেখে কান্না ধরে রাখতে পারেন না বাবা-মা ও বোন।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের বালুদিয়ার গ্রামের দরিদ্র ময়ান আলী ও শিফা খাতুন দম্পতির একমাত্র সন্তান ছয় বছরের ইয়াফির চোখে এখনো অনেক স্বপ্ন- স্কুলে যাবার, খেলাধুলা করার, মায়ের হাত ধরে রাস্তা পার হওয়ার। কিন্তু সেই স্বপ্নগুলো এক নির্মম বাস্তবতায় থমকে গেছে।
কারণ, ক্যানসার নামক মারণ রোগে আক্রান্ত শিশুটি। এর আগে মাস ছয়েক আগে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয় শিশুটি। অপারেশনের পর এখন ব্রেন ক্যানসারে আক্রান্ত ইয়াফি। যে বয়সে সমবয়সীদের সঙ্গে খেলার মাঠে হুই-হুল্লোড়ে মেতে থাকার কথা সেই বয়সে ইয়াফিকে মৃত্যুর প্রহর গুণতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
সরেজমিনে দেখা যায়, মায়ের কোলে বসে থেকে আজান দিচ্ছে ইয়াফি। হাত তুলে আল্লাহর কাছে নিজের জীবন ভিক্ষা চেয়ে ফরিয়াদ জানাচ্ছে সে। বাঁকা হয়ে গেছে দুই চোখ। দাঁড়াতে বা বসতেও পারে না শিশুটি। একমাত্র ছেলের এমন কষ্ট দেখে ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন মা শিফা খাতুন। আর বাড়ির বাইরে দিনের বেশির ভাগ সময় কাটান বাবা ময়ান আলী।
জানা গেছে, গত ডিসেম্বরে হঠাৎ করেই দুই চোখ বাঁকা হয়ে যায় ইয়াফির। অনর্গল বমি করতে থাকে সে। বাবা ময়ান আলী পাবনার একটি ক্লিনিকে ছেলেকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যান। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষায় ইয়াফির ব্রেন টিউমার আক্রান্ত বলে জানান চিকিৎসক। এরপর বাড়ির গরু বিক্রি, ধারদেনা ও মানুষের সহযোগিতায় ঢাকার একটি হাসপাতালে প্রায় ৬লাখ টাকা ব্যয় করে ইয়াফিকে অপারেশন করানো হয়। এতে একেবারেই নিঃস্ব হয়ে পড়ে পরিবারটি।
অপারেশনের পর বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয় ইয়াফিরকে। কিন্তু সপ্তাহ পার না হতেই আবারো অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশুটি। এবার ইয়াফিরকে ঢাকার ডেলটা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ডাক্তার দেখানোর পর পরীক্ষা-নীরিক্ষায় ক্যানসার ধরা পড়ে। দ্রুত অপারেশন এবং কেমোথেরাপি না দিলে ইয়াফিকে বাঁচানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
অপারেশন ও কেমোথেরাপি দিতে প্রায় সাড়ে ৪লাখ টাকার মতো খরচ হবে। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের কাছে টাকা না থাকায় ইয়াফিকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। বিনা চিকিৎসায় এখন মৃত্যুর প্রহর গুণছে ছোট্ট ইয়াফি। দরিদ্র এই পরিবার এখন তাকিয়ে আছে সমাজের মানুষের দিকে।
সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ইয়াফির মা শিফা খাতুন বলেন, আমার বাচ্চাটা খেলতে পারেনি, স্কুলে যেতে পারেনি। ওর (ইয়াফি) যে বাঁচার কতোটা আকুতি না দেখলে বোঝা যাবে না। প্রতিদিন অন্তত দশ বার আজান দেয়। আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে ফরিয়াদ জানায় বাঁচার জন্য।
তিনি বলেন, আমার ছেলেটা শুধু বাঁচতে চায়। এখন যদি বিনা চিকিৎসায় পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়, তাহলে তাহলে আমরা কী নিয়ে বেঁচে থাকব?
ইয়াফির ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরীকে জানালে তিনি বলেন, বিষয়টি খুবই কষ্টকর। আমি খোঁজ নিয়ে সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তবে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান ইউএনও।
ইয়াফির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন এই নাম্বারে- ০১৭৭৭৪৮৫১৮২