যেখানে দাঁড়িয়ে ‘উই রিভোল্ট’ বলে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন মেজর জিয়া

যেখানে দাঁড়িয়ে ‘উই রিভোল্ট’ বলে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন মেজর জিয়া

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৫ জুন, ২০২৫ | ১১:১২ 13 ভিউ
চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় দুই একর জায়গার ওপর ১৯৭৯ সালে বিপ্লব উদ্যান গড়ে তোলা হয়। উদ্যানটি মুক্তিযুদ্ধের এক মহান স্মারক। এ উদ্যান থেকেই পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘উই রিভোল্ট’ বলে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান। এখান থেকেই ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে প্রথম প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু হয়। প্রতিরোধযুদ্ধের কথা উল্লেখ করে স্থাপন করা ফলকে থাকা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামই পরবর্তীকালে এ উদ্যানের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে ইতিহাসের এই তীর্থস্থান মুছে ফেলতে নানারকম অপচেষ্টা করা হয়েছিল। সবুজে ঢাকা এই উদ্যানে বারবার আগ্রাসী আঁচড় পড়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়রদের। একের পর এক দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে লিজ দিয়ে উদ্যানকে ইটপাথরের জঞ্জালে পরিণত করা হয়েছিল। তবে বর্তমান সিটি মেয়র বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন এই উদ্যানের প্রাণ ফেরাতে গ্রিন পার্ক করার ঘোষণা দিয়েছেন। এদিকে ৫ জুন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক বিপ্লব উদ্যানের আধুনিকায়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘পাকিস্তানি লেফটেন্যান্ট কর্নেল জানজুয়া যখন নিকৃষ্টভাবে নিরীহ বাংলাদেশিদের দমনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, তখন মেজর জিয়া প্রথম নিজের কমান্ডিং অফিসারকে (জানজুয়াকে) গ্রেফতার এবং পরবর্তী সময়ে হত্যার মধ্য দিয়ে বিদ্রোহের সূচনা করেন। এরপর ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ড গ্রহণ করেন জিয়া। তারপর তিনি ষোলশহর এলাকায় (বর্তমানে যেটি বিপ্লব উদ্যান) একটি ড্রামের ওপর দাঁড়িয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম শহরে যে গ্রুপগুলো হয়েছিল, সেখানে আমি মেজর জিয়ার অধীনে কমান্ডার হিসাবে যুদ্ধ করেছি। পরবর্তী সময়ে বিএলএফে যোগ দিয়েছিলাম। ইতিহাস সংরক্ষণ করতে বিপ্লব উদ্যানে শহীদ জিয়ার স্মৃতি রয়েছে। এটি শহীদ জিয়ার নামেই সংরক্ষণ করা উচিত।’ জানা যায়, ২০১৮ সালে সবুজের সমারোহ থাকা উদ্যানে আধুনিকতার নামে প্রথম আঘাত করেন চসিকের সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। সৌন্দর্যবর্ধনের নামে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর রিফর্ম ও স্টাইল লিভিং আর্কিটেক্টস লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২০ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি সম্পাদন করেন তিনি। এর আওতায় উদ্যানের একপাশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি ২০টি দোকান নির্মাণ করে। দোকানগুলো নাছিরের পছন্দের লোকদের কাছেই বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপরও কিছু সবুজ অবশিষ্ট ছিল উদ্যানে। পরের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে ২০২৩ সালের ২২ আগস্ট নতুন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। চুক্তির অংশ হিসাবে উদ্যানের অবশিষ্ট জায়গায় ২০০ ফুট দীর্ঘ স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর নগর পরিকল্পনাবিদ, প্রকৌশলী, সুশীল সমাজ এবং সাধারণ মানুষ বিপ্লব উদ্যানে বাণিজ্যিক স্থাপনা বন্ধ করতে নানা কর্মসূচি পালন শুরু করেন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিপ্লব উদ্যান থেকে সব ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার দাবি ওঠে। এমনকি পৃথক যে দুই চুক্তির আলোকে বিপ্লব উদ্যানে বাণিজ্যিক স্থাপনাগুলো নির্মাণ করা হয়, ওই চুক্তি দুটিও বাতিল এবং পূর্বে যে প্রাকৃতিক পরিবেশে বিপ্লব উদ্যান ছিল, সেই অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দাবি করা হয়। এছাড়া দ্বিতীয় দফায় চলা স্থাপনা নির্মাণ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর চসিককে অনুরোধ করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নেটওয়ার্ক মেম্বার আলিউর রহমান বলেন, ‘চট্টগ্রামের বিপ্লব উদ্যান বিগত সময়ের মেয়ররা নানাভাবে ধ্বংস করেছেন। ইট-পাথরের জঞ্জালে পরিণত করেছে। এ উদ্যানকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষায় মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি এবং মেয়র বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছিল। এরপরও চসিক মেয়রকে বিরত রাখা যায়নি। প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর আগের কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে ঠিকই; কিন্তু উদ্যানটিকে নগ্ন অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। আমাদের দাবি, ঐতিহ্যবাহী এ উদ্যানটিতে চুয়েটের গবেষণা অনুযায়ী যতটুকু সবুজ গাছপালা রাখা প্রয়োজন, ততটুকুই রাখতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলে আবারও কর্মসূচি পালন করা হবে।’ এদিকে গত ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে বিপ্লব উদ্যানের স্মৃতিফলকে পুষ্পমাল্য অর্পণ করতে গিয়ে ঝঞ্জালমুক্ত করার ঘোষণা দেন বর্তমান চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিগত সরকার শহীদ জিয়ার স্মৃতি মুছে দিতে বিপ্লব উদ্যানকে ক্ষতবিক্ষত করেছে।’ সোমবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র ডা. শাহাদাত হেসেন বলেন, ‘বিপ্লব উদ্যানকে গ্রিন পার্ক করতে একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। সবুজের সমারোহে পার্কটি করা হবে। শহীদ জিয়ার ‘উই রিভোল্ট’ কথাটি বিশাল করে লেখা থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস সংরক্ষণ করা হবে।’ মেয়র আরও বলেন, ‘বিপ্লব উদ্যান নিয়ে আগের সময়ের সব চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। বর্তমানে যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে, তারা কাজ শুরু করার দুই বছরের মধ্যে বুঝিয়ে দেবে। ২-৩ দিনের মধ্যে কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা রয়েছে।’ ৫ জুন পরিদর্শন শেষে বিপ্লব উদ্যানের আধুনিকায়ন কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। প্ল্যান বি- ইউএএ অ্যাসোসিয়েটসের পরামর্শে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। নির্মাণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে নূর হাফীজ প্রপার্টিজ লিমিটেড।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
১৩ ছক্কায় যুক্তরাষ্ট্রে ম্যাক্সওয়েলের ‘তাণ্ডব’ সব ছেড়ে আধ্যাত্মিকতায় জ্যাকুলিন, কে দেখালেন আলোর দিশা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম কোন কাজটি করেন আমির ‘হুঁশিয়ারির সময় শেষ, এবার শাস্তির পালা’: ইরানি সেনাপ্রধানের হুঁশিয়ারি নেতানিয়াহুকে চুরি হয়ে যাচ্ছে নতুন ভবনের মালামাল সুনামগঞ্জে পুকুরে ডুবে ২ বোনের মৃত্যু বিদেশে গেল না আম, হতাশ ব্যবসায়ীরা ভিন্নমত প্রকাশকে ‘নিরাপত্তা হুমকি’ দেখত হাসিনার সরকার সন্ধ্যায় হাসপাতালে যাবেন খালেদা জিয়া ইসরাইলের আকাশসীমা দখলে নেওয়ার দাবি ইরানের এআই যুদ্ধের সূচনা, কতটা সফল হবে ডিপসিক? শান্ত-মুশফিকের সেঞ্চুরিতে প্রথম দিনটা বাংলাদেশের ধ্বংসযজ্ঞে অনড় ইরান-ইসরায়েল তবু আপন কর্তব্যে অবিচল সেনাবাহিনী ঘাটতি বাজেটের অর্থায়নই প্রধান সমস্যা ঢাকাসহ দেশের ১৭টি অঞ্চলে ঝড়ের সম্ভাবনা শপথ ছাড়াই ‘নির্দেশনা’ দিচ্ছেন ইশরাক, সরকার নীরব তেহরান থেকে বাংলাদেশিদের সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ ঢাকায় পাকিস্তানের নতুন হাইকমিশনার ইমরান হায়দার টেকনাফে বিজিবির অভিযানে ১ লাখ ১০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার