
নিউজ ডেক্স
আরও খবর

কাশ্মীর হলো সলতে, হিন্দুত্ব আগুন

‘আমি কষ্ট পাচ্ছি, আমাকে বাঁচান’

মধ্যরাতে সরিয়ে দেওয়া হলো খালেদা জিয়ার ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে

টিকাদানে রোল মডেল বাংলাদেশ ; এক ডলারে ফেরত আসে ২৫ ডলার

ডায়েরিতে বাবার ছবি আঁকতেন লামিয়া, লিখেছেন নিজের স্বপ্নের কথা

আমলাতন্ত্রের জালে বন্দি জনস্বার্থ এনবিআরের দুই সচিবের পদ কি ‘সোনার হরিণ’

চলে গেলেন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দার
শতবর্ষের অভিজাত অবকাশকেন্দ্র কুমিল্লার ‘রানীর কুঠি’

কুমিল্লায় কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহ্যবাহী রানীর কুঠি। এটি অবিভক্ত ভারতবর্ষের জমিদারদের জন্য ছিল অভিজাত এক অবকাশকেন্দ্র। রানীর কুঠি নিয়ে এখনো মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। অনেকেই চেষ্টা করেন তার স্বপ্নের রানীকে নিয়ে এই অবকাশকেন্দ্রে রাত্রিযাপন করতে। কিন্তু সরকারি প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা, জাতীয়ভাবে স্বীকৃত কোনো শিল্পী অথবা বহুল জনপ্রিয় কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি ছাড়া এই কুঠিতে রাত্রিযাপন অথবা অবস্থান করার সুযোগ নেই। প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বার্ডের অধীন একটি অবকাশকেন্দ্র। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির নাম ড. আখতার হামিদ খান স্মারক বাসভবন। কুমিল্লা প্রাচীন নিদর্শনগুলোর মধ্যে রানীর কুঠি অন্যতম।
এ রানী কুঠিতে তৎকালীন ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আনন্দ চন্দ্র রায়, কুমিল্লা টাউন হলের প্রতিষ্ঠাতা ধর্ম মানিক্য রায় বাহাদুর, ধর্মসাগর খননের নেপথ্যের নায়ক রাজা ধর্ম নারায়ণ রায়সহ ত্রিপুরার বিভিন্ন জমিদার অবকাশ যাপনের জন্য আসতেন। রাজকার্যের ভারী বোঝা থেকে একটু অবকাশ নিতে প্রায়ই রানীদের নিয়ে তারা কুমিল্লায় অভিসারে আসতেন। তখন রানীদের অস্থায়ী মহল হতো আজকের এই রানীর কুঠি। মূলত ত্রিপুরার রানীদের অবকাশকালীন বাসস্থান ছিল বলেই কালক্রমে এ প্রাচীন মহলটি লোকমুখে রানীর কুঠি নামে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতিদিনই শত শত তরুণ-তরুণী এখানে এসে ছবি তোলেন। তাছাড়া ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এটি একটি অন্যতম স্থান। পর্যটকরা কুমিল্লায় এলে রানীর কুঠি না দেখলে যেন ষোলোকলা পূরণ হয় না। ধর্মসাগরের উত্তর পাড় ঘেঁষে ১ দশমিক ২৩ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয় রানীর কুঠি। এটির পূর্বে স্টেডিয়াম ও কুমিল্লা জিলা স্কুল এবং উত্তরে নগর উদ্যান ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়।
রানীর কুঠির ভেতরে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) ইংরেজিতে একটি ধারণাপত্র টানিয়েছে। সেখানে উল্লেখ আছে, ‘জনশ্রুতি অনুসারে, ধর্মসাগরের উত্তর তীরে দাঁড়িয়ে থাকা ঘরটি ধর্মমাণিক্য কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। তবে প্রমাণ আছে, বাড়িটি মহারাজা উদয় মাণিক্যের নির্দেশে নির্মিত হয়। বাড়িটি এখন রানীর কুঠি নামেই পরিচিত।’
কুমিল্লার ইতিহাসবিদ ও গবেষক অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক বলেন, রানীর কুঠি ত্রিপুরার রাজদরবারের শাসকরা নির্মাণ করেছেন। তবে এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিষ্ঠার সাল গবেষণার বিষয়। এর নির্মাণশৈলী দেখে তা শতাধিক বছরের প্রাচীন বলে ধারণা করা হয়। এখানে ইতিহাসভিত্তিক একটি জাদুঘর স্থাপন করা যেতে পারে। কুমিল্লার মানুষ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন। জাদুঘরে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস স্থান পেতে পারে বলে জানান তিনি। ২০০৯ সালের ২২ এপ্রিল রানীর কুঠিকে সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ হিসাবে ঘোষণা করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। তবে বার্ড এটি অতিথিশালা হিসাবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করছে। এখানে বাংলাদেশের কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধান ও বিশিষ্টজন বিশ্রাম নিয়েছেন। ধর্মসাগরপাড়ে নির্মল বাতাসে এখানে থাকা অতিথিদের মনে ভালো লাগার পরশ বুলিয়ে যেত। রানীর কুঠিরের সামনে শান-বাঁধানো ঘাট রয়েছে। বড় গাছের ডালে পাখির কিচিরমিচির শব্দ অন্যরকম পরিবেশ সৃষ্টি করে।
কুমিল্লা বার্ডের মহাপরিচালক সাইফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, রানী কুঠি কুমিল্লার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী। এটি বার্ডের আওতাধীন একটি অতিথিশালা। কালের সাক্ষী রানী কুঠির স্মৃতি ধরে রাখার জন্য আমরা সমন্বিত ভাবে চেষ্টা করছি।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক (কুমিল্লা কার্যালয়) ড. মোছা. নাহিদ সুলতানা জানান, রানীর কুঠিটি সংরক্ষণের জন্য পুরাকীর্তি হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে বার্ড রানীর কুঠিকে অতিথিশালা হিসাবে ব্যবহার করছে। আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এটাকে জাদুঘরে রূপান্তর করার জন্য কাজ করছি। এটা আমাদের ডিসপ্লে সেন্টার হবে।
বর্ণমালা টেলিভিশন এর সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।