
নিউজ ডেক্স
আরও খবর

সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে সিটি ব্যাংক

২০২৫-২৬ অর্থবছরের এডিপি প্রাথমিক শিক্ষায় কমছে ২ হাজার কোটি টাকা

ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি বাতিল করায় বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে কোনো প্রভাব পড়েনি

২০২৫-২৬ অর্থবছরের এডিপি লাগাম টানছে হচ্ছে নতুন প্রকল্পে

সংশোধিত বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদন ব্যাংক ঋণে নির্ভরতা কমেছে, বেড়েছে বিদেশি ঋণে

বাংলাদেশ হতে আম ও ইলিশ মাছ আমদানির আগ্রহ প্রকাশ চীনের

কৃষিপ্রধান রংপুর বিভাগে এবারে সরকারি ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান মুখ থুবড়ে পড়েছে
বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার বিপরীতে ডলারের দুই ধরনের দাম বা বিনিময় হার এখন উলটো স্রোত বয়ে চলেছে

বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার বিপরীতে ডলারের দুই ধরনের দাম বা বিনিময় হার এখন উলটো স্রোত বয়ে চলেছে। বাংলাদেশের মতো অর্থনীতির দেশগুলোর মুদ্রার প্রকৃত বিনিময় হারের চেয়ে বাজারে প্রচলিত বিনিময় হার বেশি থাকার কথা। এর মাধ্যমে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানিকারকদের আনা রপ্তানি আয়ের বিপরীতে মুদ্রার বিনিময় হারের সুবিধা দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে বেশ কয়েক বছর ধরে ডলারের প্রকৃত বিনিময় হারের চেয়ে বাজারে প্রচলিত দর কম। ফলে প্রবাসী ও রপ্তানিকারকরা বিনিময় হারের বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন না। এদিকে প্রকৃত বিনিময় হার কেন বেশি বা বাজার দর কেন কম এর যথাযথ ব্যাখ্যা খুঁজে পেতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গবেষণা করেছে। এতে অর্থনৈতিক সূচকগুলোতে ভারসাম্যহীনতা পেয়েছে। একটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্য সূচকের সাদৃশ্য নেই।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সূচকগুলোকে কৃত্রিমভাবে বাড়ানো বা কমানো হয়েছে। যে কারণে বাস্তবতার সঙ্গে সার্বিক অর্থনৈতিক সূচকগুলো একটির সঙ্গে অন্যটি মিলছে না। জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে, কিন্তু সে অনুপাতে বিনিয়োগ ও ঋণ প্রবাহ বাড়েনি। যেটুকু ঋণ প্রবাহ বেড়েছে, সে তুলনায় বাড়েনি বিনিয়োগ। শিল্পের যন্ত্রপাতি যে হারে আমদানি বেড়েছে, ওই হারে শিল্পের বিকাশ হয়নি। যে হারে উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে, সেই হারে বাজারে সরবরাহ বাড়েনি। এছাড়াও কখনো কখনো রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমলেও সেগুলো বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারিতে ডলারের বিপরীতে টাকার প্রকৃত বিনিময় হার ছিল ১২৪ টাকা ২৭ পয়সা। বাজারে বিনিময় হার ছিল ১২২ টাকা। অর্থাৎ বাজার দরের চেয়ে টাকার মান ২ টাকা ২৭ পয়সা বা ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ অতি মূল্যায়িত।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বৈশ্বিক মন্দা শুরু হলে ডলারের দাম বাড়তে থাকে। ওই সময়ে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২২ টাকায়। আলোচ্য সময়ে টাকার মান কমেছে ৩৬ টাকা বা ৪১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। বাজারে যখন তীব্র সংকটে টাকার মান কমেছে ও ডলারের দাম বেড়েছে তখন টাকাকে অতি মূল্যায়িত রাখার সুযোগ নেই। কিন্তু ডলারের বিপরীতে টাকার মান অতি মূল্যায়িত রয়েছে। তবে অতি মূল্যায়নের হার এখন কমতে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে, ধীরে ধীরে ডলারের দূটি দরে ভারসাম্যহীনতা কমে যাবে। ডলারের দাম প্রতিযোগী দেশগুলোর মুদ্রার সঙ্গে সমন্বয় রেখে ওঠানামা করবে। এখনকার মতো ডলারের দাম একতরফাভাবে শুধু বাড়বেই না, মাঝেমধ্যে কমবেও।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক বাণিজ্য রয়েছে এমন ১৮টি দেশের মুদ্রার সঙ্গে সমন্বয় রেখে ডলারের বিপরীতে টাকার মান নিরূপণের জন্য একটি ঝুড়ি তৈরি হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আমদানি-রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের তথ্যের সমন্বয়ে টাকার প্রকৃত বিনিময় হার নিরূপণ করা হয়। সার্বিকভাবে অর্থনীতির অবস্থা ভালো হলে প্রকৃত বিনিময় হার বেশি হতো এবং বাজার দর কম হতো। কিন্তু ২০২৮ সালে বৈশ্বিক মন্দার পর থেকে দেশের সার্বিক অর্থনীতির অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। তারপরও প্রকৃত বিনিময় হার বেশি, বাজার দর কম।
এদিকে ডলার সংকটের পুরো সময়টাতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকার মান ধরে রাখতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেছে। তারপরও টাকার মান ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। তবে ডলার বিক্রি না করলে টাকার মান কমে যেত সেটা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের জুলাই-ডিসেম্বরে ৬২ কোটি ৮৪ লাখ ডলার নিট বিক্রি করেছে। যা ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় ৫০৫ কোটি ৮৭ লাখ ডলার কম। গত অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে ৭৫৭ কোটি ডলার এবং চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বিক্রি করেছে ৭২ লাখ ডলার। বাজারে ডলারের প্রবাহ বাড়ায় রিজার্ভ থেকে এর বিক্রি কমেছে। ফলে রিজার্ভের ক্ষয় রোধ হয়েছে।
এদিকে বাজার দরের চেয়ে ডলারের প্রকৃত দর বেশি হওয়ায় আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) মনে করছে ডলারের তুলনায় টাকা অতি মূল্যায়িত। ডলার ও টাকার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিলেই টাকার মান কমে যাবে, ডলারের দাম বেড়ে যাবে। এ কারণে আইএমএফ ঋণের অন্যতম শর্ত দিয়েছে বিনিময় হারকে পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া এবং বাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব ধরনের হস্তক্ষেপ বন্ধ করা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, এটি করলে ডলারের দাম বেশি মাত্রায় উঠানামা করবে। এতে বাজার আরও অস্থিতিশীল হয়ে ওঠবে। যে কারণে বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছাড়তে চাচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে কিছু বিধিনিষেধ জারি করে ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে একটি সীমার মধ্যে থেকে ডলারের দাম ওঠানামা করার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু তা কমছে না। ডলার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে সর্বোচ্চ ১২২ টাকা দরে স্থির হয়ে আছে। আইএমএফ চাচ্ছে এটি স্থির না থেকে অর্থনীতির চাহিদা ও সরবরাহ অনুযায়ী ওঠানামা করুক।
বর্ণমালা টেলিভিশন এর সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।