
নিউজ ডেক্স
আরও খবর

৩১ দফাই দেশের মানুষের মুক্তির সনদ: দুলু

চট্টগ্রামে চামড়া বিক্রি শুরু, লাভ নিয়ে শঙ্কায় আড়তদাররা

যমুনা সেতু এলাকায় ৩৫ কিলোমিটার যানজট

সীতাকুণ্ডে ঝরনায় নেমে পর্যটকের মৃত্যু

সুন্দরগঞ্জে শ্বশুরবাড়ি থেকে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার

যেখানে দাঁড়িয়ে ‘উই রিভোল্ট’ বলে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন মেজর জিয়া

কুমিল্লায় ৪ জনের করোনা শনাক্ত
গোপালগঞ্জ পৌরসভা এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহ নিয়ে দুশ্চিন্তা

পানির প্লান্টের সক্ষমতা হ্রাস এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে গোপালগঞ্জ পৌরসভা এলাকায় নিরবচ্ছিন্নভাবে সুপেয় পানি সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছে খোদ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বিষয়টি মারত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলেও মনে করছে তারা।
গোপালগঞ্জ পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে পৌর এলাকায় পানির গ্রাহক সংখ্যা ৯ হাজার ৯০০ জন। এসব গ্রাহকদের প্রতিদিনের পানির চাহিদা ৬০ এমএলডি (মিলিনিয়াম লিটার পার ডে)। কিন্ত বর্তমানে পৌরসভা প্রতিদিন পানি সরবরাহ করতে পারছে মাত্র ১৩-১৪ এমএলডি, যা চাহিদার কেবল শতকরা ২৫ ভাগ পূরণ করছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, গোপালগঞ্জ পৌরসভার শিশুবন এলাকায় প্রধান পানি সরবরাহ ও শোধনাগারের অবস্থান। এটি আবার দু’টি অংশে বিভক্ত। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০০০-২০০১ সালে প্রথম প্লান্ট ও ২০১৯-২০২০ সালে দ্বিতীয় প্লান্টটি স্থাপন করে। শুরুতে প্রথম প্লান্টের পানি ফিল্টারিং ক্যাপাসিটি ছিল ৫৪০ ঘন মিটার/ঘন্টা।বর্তমানে ওই প্লান্টের পানি ফিল্টারিং ক্যাপাসিটি ৩০০ঘন মিটার/ঘন্টায় নেমে এসেছে। দ্বিতীয় প্লান্টটির ফিল্টারিং ক্যাপাসিটি স্বাভাবিক থাকায় এর উপর লোড বেশি পড়ছে। এছাড়া পৌর এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য একটি আয়রন রিমুভাল প্লান্ট, সদর উপজেলার কাজুলিয়ার বিলে ভূগর্ভস্থ পানি সরবরাহ প্লান্ট ও মানিকহার এলাকায় মধুমতি নদী থেকে ভূ-পৃষ্ঠের পানি সরবরাহ প্লান্ট রয়েছে। প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে এসব প্লান্ট থেকে চাহিদা অনুযায়ী পারফরমেন্স পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে, ২০২৪ সালে প্রধান পানি সরবরাহ প্লান্টের মেরামত ও সংস্কারে গোপালগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি ডিপিপি জমা দেওয়া হয়। যা বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশন থেকে অনুমোদন লাভ করলেও অদৃশ্য কারনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ফাইলবন্দি হয়ে আছে। এছাড়া, দুই বছর আগে একটি নতুন প্লান্ট স্থাপনের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে একটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি দেশি-বিদেশি প্রতিনিধি দল টুঙ্গিপাড়ার বর্ণির বাওরে সমীক্ষা যাচাই করে। কিন্তু পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তা আর আলোর মুখ দেখেনি বলে অনুসন্ধানে জানা যায়।
অপরদিকে, ২০২৪ সালে পৌরসভার এলাকা বর্ধিতকরণ করা হয়। আগে পৌর এলাকার সীমানা ছিল ১৩.৮২ বর্গ কি.মি, বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৩০.৭০ বর্গ. কি.মি। পৌর এলাকার পাওয়ার হাউজ রোড, আরাম বাগ, মাস্টারপাড়া, পুলিশ লাইন্স এলাকা, তেঘুরিয়া, মন্দারতলা, হেমাঙ্গণ, মুন্সিপাড়া, রসুলপাড়া ও শান্তিবাগ এলাকায় পানি সরবরাহের জন্য পাইপলাইন রয়েছে। কিন্তু চাহিদা মতো ওইসব এলাকার মানুষ পানি পাচ্ছে না।
শহরের পাওয়ার হাউজ রোডের মনি মিয়া, আরামবাগের কিটু বিশ্বাস ও মাস্টারপাড়ার গৃহবধূ সেলিনা অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চাহিদা মতো তারা পানি পান না। মাত্র ১-২ ঘন্টার জন্য তারা পানি পান। সামন্য পানি দিয়ে তাদের দৈনান্দিন প্রয়োজন মেটেনা। নিরবিচ্ছন্নভাবে পানি সরবরাহে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ওইসব ভুক্তভোগী পৌর এলাকার বাসিন্দারা।
গোপালগঞ্জ পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ ও পানি) স্বরূপ বোস বলেন, পৌর এলাকায় বর্তমানে যে পরিমানে পানির চাহিদা রয়েছে পুরাতন প্লান্টটি ২৪ ঘন্টা ব্যাপি বিরামহীনভাবে পরিচালনা করে শতকরা ২৫ ভাগ গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। সংস্কার না করে এভাবে চললে প্লান্টটি যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যাবে। প্লান্টটি সংস্কার, নতুন প্লান্ট এবং বর্ধিত এলাকার জন্য পাইপ লাইন স্থাপন করে পানির সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পৌর এলাকায় পানি সরবরাহ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
গোপালগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন, বর্তমানে পৌরসভার পানি সরবরাহ প্লন্টের যে ক্যাপাসিটি রয়েছে তা দিয়ে ৫-৬ হাজার গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। কিন্তু কাগজ-কলমে এসংখ্যা ১২ হাজার। এছাড়া প্রতিদিন নতুন নতুন সংযোগের জন্য আবেদন বাড়ছে। এর আগে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে পুরাতন পানি সরবরাহ প্লান্টের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং বর্ধিত এলাকায় নতুন পাইপ লাইন সংযোগের লক্ষে একটি ডিপিপি জমা দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন অনুমোদন দেওয়ার পর ওই ডিপিপি-টি এখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।