কৃষিপ্রধান রংপুর বিভাগে এবারে সরকারি ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান মুখ থুবড়ে পড়েছে

কৃষিপ্রধান রংপুর বিভাগে এবারে সরকারি ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান মুখ থুবড়ে পড়েছে

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২১ এপ্রিল, ২০২৫ | ১০:৫৬ 11 ভিউ
কৃষিপ্রধান রংপুর বিভাগে এবারে সরকারি ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান মুখ থুবড়ে পড়েছে। চাল সংগ্রহ হলেও তা ছিল শুভংকরের ফাঁকি। ধান সংগ্রহ হয়েছে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সিকি ভাগেরও কম। আট জেলায় আমন ধান ও চাল সংগ্রহের অভিযান শুরু হয় ১৭ নভেম্বর। শেষ হয়েছে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি। এ অবস্থায় চালচক্রের হাতে বন্দি খাদ্যশস্য সংগ্রহ অভিযান মুখ থুবড়ে পড়েছে। ফলে রংপুর বিভাগের ৮ জেলা ও উপজেলার খাদ্যগুদামে ধানের মজুত আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। রংপুর বিভাগে আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৫ হাজার ৯৪০ টন। তবে সংগ্রহ হয়েছে ৬ হাজার ৩২৩ দশমিক ৩৬০ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ৭ শতাংশেরও কম। অবশ্য চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে ৯৬ শতাংশ। এ নিয়ে অনুসন্ধানে চাল সংগ্রহ অভিযানের চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে, যা ছিল খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও মিল মালিকদের যোগসাজশে শুভংকরের ফাঁকির মারপ্যাঁচ। অনুসন্ধানে দেখা যায়, যারা মিল মালিক, তাদের অনেকেরই মিল বন্ধ রয়েছে। বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন যাদের, তাদের অনেকের সঙ্গে চাল সরবরাহের চুক্তি করেছেন খাদ্য বিভাগের উপজেলা ও জেলা কর্মকর্তারা। তাদের মধ্যে প্রায় ৬০ ভাগ মিল মালিকের কোনো চাতাল ও মিল চালু নেই। তবুও তাদের সঙ্গে চাল সরবরাহের চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করা হয়েছে স্থানীয় খাদ্য বিভাগের পক্ষ থেকে। তারাও চাল সরবরাহ করেছেন সরকারি খাদ্যগুদামে। জানা যায়, সরকারিভাবে যেসব চাল বিভিন্ন প্রকল্পের নামে কম দামে সরবরাহ করা হয়, যার অধিকাংশই ভুয়া প্রকল্পের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকে; সেগুলোর বরাদ্দের চাল প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে গোপনে মিল মালিকরা এজেন্টের মাধ্যমে ক্রয় করেন। এছাড়াও বিভিন্ন নামে সরকারিভাবে যেসব চাল দুস্থ ও অচ্ছল পরিবারগুলোর মাঝে সরকার অনুদান দেয় এবং খোলাবাজারে কম দামে বিক্রি করে থাকে, সেসব চাল একটি চক্রের মাধ্যমে মিল মালিকরা কম দামে ক্রয় করে থাকেন। শুধু তাই নয়, পুরোনো চাল কম দামে ক্রয় করে মজুত করা হয়। পরে তা বিভিন্ন অটো রাইস মিলে বিশেষ পদ্ধতিতে ছাঁটাই করে নতুন চাল হিসাবে সরকারি খাদ্যগুদামে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এটি স্বীকার করেছেন খাদ্য বিভাগের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিভাগীয় কর্মকর্তা। এভাবে ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা মুখ থুবড়ে পড়লেও চাল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পূরণ হয়েছে। রংপুর বিভাগে প্রতিবছর চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা মোটামুটি সন্তোষজনক। সেখানে ধান সংগ্রহে করতে বারবারই ব্যর্থ হচ্ছে খাদ্য বিভাগ। কারণ হিসাবে কৃষকরা বলছেন, ধান-চাল সংগ্রহে বিদ্যমান পদ্ধতিতে কিছু অসংগতির কারণে কৃষক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। গুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তবে ব্যবসায়ীদের কাছে ধান বিক্রিতে তেমন কোনো অসুবিধা হয় না। শুধু তাই নয়, হাটে প্রকাশ্যে ধান ব্যাসায়ীরা উন্মুক্তভাবে ধান ক্রয় করে থাকেন। কৃষকের বাড়ি থেকে মৌসুমি ধান ব্যবসায়ীরা ধান মাড়াই মৌসুমের শুরুতেই ধান ক্রয় করেন। এতে কৃষকের পরিবহণ খরচ যেমন বেঁচে যায়, তেমনই আগাম ধান বিক্রি করে পরবর্তী ফসল উৎপাদনে ওই টাকা লগ্নি করেন। এদিকে সরকারি গুদামে ধান ক্রয় শুরু হয় অনেক বিলম্বে। আর সেখানে ধান বিক্রি করতে গেলে অনেক সময় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। এ কারণে রংপুর বিভাগের খাদ্য গুদামে ধানের মজুত আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলা দক্ষিণ রামখানা ইউনিয়নের কৃষক চন্দ্রিকা রবিদাস বলেন, আমি সরকারি খাদ্যগুদামের বিড়ম্বনা এড়িয়ে মৌসুমের শুরুতেই বাড়িতে গ্রামের ব্যবসায়ীর কাছে ধান বিক্রি করেছি। নীলফামারীর জলঢাকার কৃষক আজিজার শেখ জানান, আমন মৌসুমে ১৫ বিঘা জমিতে ব্রি-৯৩ জাতের ধান আবাদ করেছেন তিনি। প্রতি বিঘায় ধান পেয়েছেন গড়ে ১৬ থেকে ১৮ মন। বিঘাপ্রতি জমিতে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা করে। প্রতি মন ধান বিক্রি করেছেন ১ হাজার ৪৪০ টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি ধানের দাম পড়ে ৩৬ টাকা। অথচ সরকার প্রতি কেজি ধানের দাম বেঁধে দিয়েছে ৩৩ টাকা। খোলাবাজারের চেয়ে ৩ টাকা কেজিতে কম। রংপুর সদরের তপোধন ইউনিয়নের মহব্বত খাঁ গ্রামের কৃষক ফজলুল মিয়া জানান, তিনি ২০ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছেন। সব ধান তিনি খোলাবাজারে বিক্রি করেছেন। রংপুরের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক জহিরুল ইসলাম বলেন, চেষ্টা করেও ধান সংগ্রহ হচ্ছে না। চাল পাওয়া যায়। কৃষকরা ধান পরিবহণের ব্যয় কমাতে এবং ধানের গুণগত মান নিয়ে সংশয় থাকে-এসব কারণে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী নন। এতে ধানের স্টকে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে, যা পরোক্ষভাবে চালের ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তবে সরকরিভাবে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে তাতে কোনো সমস্যা হবে না। রংপুর মহানগর মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় মিল মালিক সমিতির যুগ্মসম্পাদক মো. সামসুল আলম বাবু বলেন, রংপুর বিভাগ যেহেতু কৃষিপ্রধান এলাকা, অধিকাংশ কৃষক ধানের কী ধরনের গুণগতমান সংগ্রহ করা হয়, এ বিষয়টি ভালোভাবে জানেন না। কৃষকদের কাছ থেকে ধান নিতে হলে অবশ্যই তাদের ভালোমন্দ লক্ষ রাখতে হবে এবং আগে আলোচনা করা যেতে পারে। কৃষক যাতে হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য খাদ্য অফিস থেকে মিটারের মাধ্যমে আগে ধানের আর্দ্রতা পরিমাপ করতে হবে। তাহলে অযথা ধান নিয়ে খাদ্যগুদামে যাওয়া আসার ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতি থেকে কৃষক রক্ষা পাবেন। তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, কোনো জায়গায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা উল্লেখ করা আছে। কিন্তু কৃষকের সংখ্যা যদি বেশি হয়, তখন তারা তা নিতে পারেন না। সেক্ষেত্রে লটারি করা হয়। এ অবস্থান থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে।

বর্ণমালা টেলিভিশন এর সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
সংসার বুঝে ওঠার আগেই স্বামী হারা সেতু আরব আমিরাতে আ.লীগ নেতাদের সম্পদের পাহাড়, টাকা ফেরত দিতে ইতিবাচক সাড়া ইসরাইলের হামলায় একদিনে নিহত আরও ১১৫ ফিলিস্তিনি আমিরাতে দুটি লক্ষ্যে তাকিয়ে লিটন ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে লিবিয়ায় পাঠাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ রাজধানীর বৈধ বারে অভিযানের নামে বেপরোয়া চাঁদাবাজি শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা: হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ড, খালাস ৩ বাংলাদেশের সীমান্তে কাদের ঠেলে দিচ্ছে ভারত, কেন দিচ্ছে? বাড্ডায় গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, একই পরিবারের ৫ জন দগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবল ঝড়ে নিহত অন্তত ৪ কুরবানির আগে অস্থির মসলার বাজার নির্বাচনের পথেই সমাধান হুন্ডি-অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় আজ বজ্রপাতে ১০ জনের মৃত্যু সিসা লাউঞ্জে অভিযান ঘিরে লঙ্কাকাণ্ড আরব আমিরাতে ছয় শিল্প গ্রুপের সম্পদের সন্ধান ভয় দেখিয়ে নারীকে দফায় দফায় ধর্ষণ, আটক ১ ঝুলে আছে পদোন্নতি, ডিসি নিয়োগ ও প্রত্যাহার