আওয়ামী সিন্ডিকেট এখনো নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন

আওয়ামী সিন্ডিকেট এখনো নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৯ মার্চ, ২০২৫ | ১০:৫৫ 43 ভিউ
গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সিন্ডিকেট এখনো নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। আওয়ামী লীগের এই সিন্ডিকেটের কাছে অনেকটা অসহায় বিএডিসির ডিলাররা। অভিযোগ উঠেছে, সাবেক মন্ত্রীর সিন্ডিকেটকে বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ করছেন বিএডিসির আওয়ামীপন্থি কয়েকজন কর্মকর্তা। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও ঢাকার কৃষি ভবনের বড় বড় চেয়ারে বসে আছেন তখনকার কর্মকর্তারাই। তারাই নানা কৌশলে ওই সিন্ডিকেটকে সক্রিয় করে রেখেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএডিসির ডিলাররা। বর্তমানে ওই সিন্ডিকেট আরও বেপরোয়া হয়ে ডিলারদের জিম্মি করে ফেলেছে। ৫ আগস্টের পর ওই সিন্ডিকেটের সদস্যদের বাইরে গুদাম থেকে কোনো ডিলার ধানবীজ উত্তোলন করতে পারছেন না। চলতি বোরো মৌসুমে বিএডিসির পুনর্নির্ধারিত দরের ধানবীজ ডিলারদের মধ্যে বরাদ্দ দেয় বিএডিসি। কিন্তু সারা দেশের ওই বীজের নিয়ন্ত্রণ নেয় ফরহাদ সিন্ডিকেট। বিএডিসির আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রায় দুই হাজার টন পুনর্নির্ধারিত দরের বোরো ধানবীজ ওই সিন্ডিকেট উত্তোলন করে কালোবাজারে বিক্রি করেছে। কুষ্টিয়া জেলা বিএডিসির বীজ ও সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্মসম্পাদক মোস্তফা জামান সাঈদী সাগর বলেন, বর্তমানে ডিলাররা চুয়াডাঙ্গা গুদাম থেকে কোনো বীজ উত্তোলন করতে পারছেন না। বিএডিসির কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রীর লোকজন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ডিলারদের হাজার হাজর টন ধানবীজ বিএডিসির কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে তারা উত্তোলন করে নিয়েছেন। সূত্রে জানা যায়, দেশের সর্ববৃহৎ বীজ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র চুয়াডাঙ্গায় অবস্থিত। অন্যদিকে বিএডিসির মুজিবনগর সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের শত শত কোটি টাকার কাজ এ অঞ্চলে চলমান রয়েছে। এছাড়াও বিএডিসির একাধিক প্রকল্প রয়েছে বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলায়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের স্ত্রী সৈয়দা মোনালিসা ও ভাই সরফরাজ হোসেন মৃদুলের সিন্ডিকেট পুরো বিএডিসিকে নিয়ন্ত্রণ করত। আর ওই সিন্ডিকেটের মূল হোতা ছিলেন বিএডিসির একসময়ের লেবার ঠিকাদার চুয়াডাঙ্গা জেলার সালাউদ্দিন মিয়ার ছেলে শামসুর রশিদ দিপু। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ফরহাদ হোসেন, স্ত্রী মোনালিসা ও ভাই সরফরাজ হোসেন মৃদুল কারাগারে রয়েছেন। তবে পুরো পরিবার জেলে থাকলেও থেমে নেই তাদের সিন্ডিকেট। বর্তমানে বিএডিসি সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফরহাদ হোসেনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ লোক বলে পরিচিত শামসুর রশিদ দিপু। বিএডিসির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, আওয়ামী লীগপন্থি বিএডিসির কৃষিবিদ সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির ২০২২-২৩ মেয়াদে নির্বাহী সদস্য ছিলেন বর্তমানে ঢাকা কৃষি ভবনের মহাব্যবস্থাপক (বীজ) আবীর হোসেন। একই কমিটির নির্বাহী সদস্য বর্তমানে অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (বীজ বিতরণ) সেলিম হায়দার। এ দুই কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেনের সিন্ডিকেটকে নানা কৌশলে সহযোগিতা করে সক্রিয় রেখেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএডিসির ডিলাররা। অভিযোগের বিষয়ে কৃষি ভবনের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (বীজ বিতরণ) সেলিম হায়দার বলেন, আমি মিটিংয়ে আছি। এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে পরে কথা বলব। বিএডিসির ডিলাররা জানান, মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সময়ে জিম্মি ছিল বিএডিসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ডিলার ও ঠিকাদাররা। শুধু এ অঞ্চল নয়, দাপুটে মন্ত্রীর নামে সারা দেশে বিএডিসি নিয়ন্ত্রণ করত তিনজনের ওই সিন্ডিকেট। তাদের কথা না শুনলেই রাতারাতি বদলি হয়েছেন অনেক কর্মকর্তা। ঢাকা কৃষি ভবন থেকে শুরু করে সারা দেশে বিএডিসিতে বদলি-নিয়োগ-পদোন্নতির বাণিজ্য করতেন তারা। সারা দেশে বিএডিসির ভবন নির্মাণসহ সব টেন্ডার তাদের বাইরে যেত না। মুজিবনগর প্রকল্পে টেন্ডারের শত শত কোটি টাকার কাজের নিয়ন্ত্রণ করেছেন সাবেক মন্ত্রীর লোকেরা। এমনকি পরিবহণ ও লেবার সেক্টরও ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে। বিএডিসি সূত্রে জানা যায়, বিএডিসির কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্সে (চুক্তিবদ্ধ চাষিদের বীজ উৎপাদনকেন্দ্র) প্রতিবছর প্রায় ১৫ হাজার মেট্রিক টন ধান ও গম বীজ উৎপাদন করা হয়। এসব বীজ বিএডিসির নিজস্ব বীজ প্রসেসিং সেন্টারের (বীপ্রকে) মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেজিং করে সারা দেশের ২২টি আঞ্চলিক বীজ গুদামে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ডিলাররা তাদের নামে বরাদ্দকৃত বীজ উত্তোলন করে কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করেন। ডিলারদের অভিযোগ, ঢাকার আওয়ামীপন্থি বিএডিসির কর্মকর্তারা অঞ্চলের কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি দিয়ে মৌখিকভাবে তাদের সিন্ডিকেটকে বীজ দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে কয়েকজন ডিলার ছাড়া বাকিরা বীজ উত্তোলন করতে পারেননি। ঢাকা কৃষি ভবনের আওয়ামীপন্থি দুই কর্মকর্তা আবীর হোসেন ও সেলিম হায়দারের মৌখিক নির্দেশে এই সিন্ডিকেট বিপুল পরিমাণ ধানবীজ উত্তোলন করে কালোবাজারে বিক্রি করেছে বলে জানান ডিলাররা। কুষ্টিয়া জেলা বিএডিসির বীজ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে হাত মিলিয়ে একটি সিন্ডিকেট বিএডিসি নিয়ন্ত্রণ করছে। এখানে ডিলাররা অসহায় হয়ে পড়েছে। এটা ভালো লক্ষণ নয়। এতে কৃষি সেক্টরে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের দোসর হিসাবে পরিচিত খুলনা বিএডিসির ডিএডি আনোয়ার হোসেন। তিনি একই কর্মস্থলে প্রায় ৭ বছর চাকরি করছেন। খুলনা বিএডিসির কর্মকর্তারা ওই অঞ্চলের স্থানীয় ডিলারদের নামে মেমো কেটে প্রায় ১২০০ মেট্রিক টন বীজ সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দিয়েছেন। খুলনা অঞ্চলের অধিকাংশ ডিলার পুনর্নির্ধারিত দরের বোরো ধান বীজ উত্তোলন করেননি বলে জানান। অথচ নির্ধারিত ১০ মার্চের মধ্যে সমুদয় বীজ ডিলাররা উত্তোলন করেছেন বলে দাবি করেন বিএডিসির খুলনা অঞ্চলের উপপরিচালক দীপঙ্কর। তিনি বলেন, আমরা ডিলারদের মেমো কেটে দিয়েছি। ডিলাররা কোথায় বা কার কাছে বিক্রি করেছে, তা আমাদের জানা নেই। যদি অফিস থেকে কোনো অনিয়ম হয়, সেটি আমি দেখব। খুলনা বিএডিসির বীজ ও সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, আমি কোনো বীজ পাইনি। তবে আমাকে অফিস থেকে অল্পকিছু টাকা দিয়েছে। খুলনার কয়রা উপজেলার ডিলার মনিরুল ইসলাম বলেন, পুনর্নির্ধারিত দরের কোনো ধানবীজ আমি পাইনি। কুষ্টিয়া অঞ্চল থেকে দেড়শ টনসহ সারা দেশের সর্বমোট দুই হাজার মেট্রিক টন ধানবীজ এই সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছে। অনুসন্ধানেও মিলেছে, বিপুল পরিমাণ ধানবীজ সিন্ডিকেটের হোতা দিপু উত্তোলন করে কুষ্টিয়ার খাজানগর ও জীবননগরের কয়েকটি মিলে বিক্রি করেছেন। কুষ্টিয়ার খাজানগর এলাকার সুবর্ণা রাইস মিলের মালিক জিন্নাহ বলেন, আমার কাছ থেকে বেশি ধান কিনেছে স্বর্ণা রাইস মিল। তিনি জানান, চুয়াডাঙ্গার একজন ব্যক্তি সব ধান বিক্রি করেছেন।মেহেরপুর জেলার প্রবীণ বীজ ডিলার আরমান আলী বলেন, চুয়াডাঙ্গা গুদাম থেকে ডিলাররা কোনো ধানবীজ উত্তোলন করতে পারছেন না। আমি নিজে বীজ উত্তোলন করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছি। ডিলাররা গেলেই হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। এখানে সাধারণ ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার পরিবেশ নেই। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে শামসুর রশিদ দিপু বলেন, আমরা ব্যবসা করি। সবার সঙ্গেই আমার সম্পর্ক আছে। আমি ডিলারদের মাল বিক্রি করি। চুয়াডাঙ্গা বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রের (বীপ্রকে) যুগ্ম পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, বাইরে কী হচ্ছে আমি জানি না। আঞ্চলিক বীজ বিপণন দপ্তর থেকে যারা মেমো নিয়ে আসছেন, তাদেরই বীজ দেওয়া হচ্ছে।

বর্ণমালা টেলিভিশন এর সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
জরায়ু ক্যান্সার কী, কেন হয় ও চিকিৎসা রোগব্যাধি থেকে আশ্রয় চেয়ে কী দোয়া পড়বেন শান্তির হ্যাটট্রিকে দুই ভেন্যুর ম্যাচে বাংলাদেশের দুর্দান্ত জয় ফিফার নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আরও এক ক্লাব নতুন মিশনে সন্দীপ্তা যে তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন ফাতিমা সৌদিতে পতিতাবৃত্তির দায়ে ১২ প্রবাসী গ্রেপ্তার সৌদিতে নারী চালকদের রাইড শেয়ারের সুযোগ দিতে যাচ্ছে উবার বৃষ্টি যেন সবজিচাষিদের কান্না হয়ে ঝরছে চুরি করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যের স্ত্রীকে ধর্ষণ দুম্বার সংকর প্রজাতি উদ্ভাবন করলেন মেহেরপুরের খামারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যেন মরণফাঁদ ব্যবসা সম্প্রসারণে কমলো নীতি সুদহার পাল্টা শুল্ক নিয়ে তৃতীয় ধাপের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার যশোরে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সেনাবাহিনীর সহায়তা সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক সম্পত্তি মেরামতে সহযোগিতা দেবে ভার‍ত ওসি পদায়নে ২২ দফা নীতিমালা সোনালি মুরগিতে ক্ষতিকর ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়া প্রধান উপদেষ্টা মালয়েশিয়া যাচ্ছেন ১১ আগস্ট আবু সাঈদের আত্মত্যাগ দিয়ে গেল অনেক