
নিউজ ডেক্স
আরও খবর

ভিন্নমত প্রকাশকে ‘নিরাপত্তা হুমকি’ দেখত হাসিনার সরকার

তবু আপন কর্তব্যে অবিচল সেনাবাহিনী

ঢাকাসহ দেশের ১৭টি অঞ্চলে ঝড়ের সম্ভাবনা

তেহরান থেকে বাংলাদেশিদের সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ

ঢাকায় পাকিস্তানের নতুন হাইকমিশনার ইমরান হায়দার

শহীদ ওমরের লাশ উত্তোলনের নির্দেশ আদালতের

বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগমের মৃত্যু: যিনি রাজাকার, দেশদ্রোহী, বেঈমানদের ছাড় দেননি
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ জাতীয় চক্ষু হাসপাতাল

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসক-কর্মচারীদের সঙ্গে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের মারামারি-সংঘর্ষের জেরে শনিবারও চিকিৎসাসেবা বন্ধ ছিল হাসপাতালটিতে। গত বুধবার সকাল থেকে হাসপাতালে এই অচলাবস্থা চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিরাপত্তার অভাবে চিকিৎসকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে ফিরছেন না। তাছাড়া আহতরা বাসা-বাড়িতে হামলার পরিকল্পনা করছেন এমন গুঞ্জনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন হাসপাতালটির চিকিৎসকরা। টানা চার দিন ধরে চক্ষু চিকিৎসায় দেশের প্রধান হাসপাতালটি বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। জরুরি সেবা বন্ধ থাকায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই এসে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। হাসপাতালটি কবে চালু হবে এ বিষয়ে কেউ বলতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে শনিবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রোগীদের বিকল্প হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চক্ষু রোগীরা নিকটস্থ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করবেন।
এর আগে গত বুধবার (২৮ মে) সকাল ১১টার দিকে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরীর কক্ষে ভাঙচুরের পর চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর হামলা করেন আহতদের একাংশ। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী চিকিৎসকরা কর্মবিরতি শুরু করলে সেখানেও হামলা করা হয়। এতে ৯ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী আহত হন। বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেক সাধারণ রোগী ইতোমধ্যে অন্যত্র চলে গেছেন। কিছুসংখ্যক রোগী এখনো রয়ে গেছেন। তারা বলছেন, চিকিৎসার মাঝপথে কোথায় যাবেন? তাই হাসপাতালে রয়ে গেছেন। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের কেউ হাসপাতাল ছেড়ে যাননি।
শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক ও নার্স নেই। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নতুন রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন।
আগে যেসব রোগী এখান থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের অনেকে ফলোআপের জন্য এসে তা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। হাসপাতালে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবারের পর আর কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। নির্দেশনা অনুযায়ী তারা হাসপাতালে অবস্থান করবেন।
শনিবার সকালে হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগীরা আসছেন। কিন্তু ফটক বন্ধ থাকায় ভেতরে যেতে পারছেন না। রাজবাড়ী থেকে সত্তরোর্ধ্ব কালা চাঁনকে নিয়ে এসেছেন তার মেয়ে হালিমা বেগম। সঙ্গে তার এক চাচা। হালিমা বলেন, রাত তিনটায় রাজবাড়ী থেকে রওনা হয়ে সকাল নয়টায় হাসপাতালের সামনে এসেছি। ফটক বন্ধ থাকায় বাইরেই অপেক্ষা করছিলেন তারা।
রাজধানীর ভাষানটেক এলাকার আবদুল্লাহ আল নোমান নামে আট বছরের এক শিশুর চোখে বড়শি বিঁধেছে। শিশুটিকে নিয়ে রিকশায় করে হাসপাতালে এসেছিলেন তার স্বজনরা। তবে বন্ধ থাকায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে চলে যান তারা।
চোখের ডাক্তার দেখাতে ময়মনসিংহ থেকে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, এখানে আসার পর শুনি চার দিন ধরে হাসপাতাল বন্ধ। অনেক টাকা খরচ করে ডাক্তার দেখানোর জন্য এলেও ফিরে যেতে হচ্ছে। নাটোরের নলডাঙ্গা থেকে আসা হাফিজুর রহমান বলেন, তার ১২ বছর বয়সি মেয়ের চোখের অস্ত্রোপচারের জন্য তারিখ দেওয়া ছিল। শনিবার তারা এসে দেখেন হাসপাতাল বন্ধ। তিনি বলেন, চিকিৎসক নেই, আমার মেয়ের চোখের কোনো ক্ষতি হলে সেই দায় কে নেবে?
জুলাই ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আকবর কামাল বলেন, সেদিনের ঘটনায় চিকিৎসক, কর্মচারীদের সঙ্গে জুলাইযোদ্ধাদের কয়েকজনও আহত হয়েছেন। দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন তারা। জুলাইযোদ্ধারা হাসপাতালের আট থেকে ১০ জন কর্মচারীর একটি তালিকা দিয়েছেন। তারা বলছেন, ওই কয়েকজন বাদে বাকিদের হাসপাতালে এসে সেবা দিতে কোনো বাধা নেই। আমরাও তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি যে, হাসপাতালটি বন্ধ থাকায় মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। একটা ভালো সমাধান হবে আশা করি।
এর আগে উন্নত চিকিৎসা বা পুনর্বাসনের বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ তুলে গত রোববার চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চার জুলাইযোদ্ধা বিষপান করেন। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তারা সহযোদ্ধাদের নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালের পরিচালককে অবরুদ্ধ করেন।
হাসপাতাল কবে চালু হচ্ছে এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, আমরা আলাদাভাবে কিছু বলতে চাচ্ছি না। এ মুহূর্তে করণীয় প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি আকারে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শনিবার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকার জন্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ‘চরম নিরাপত্তাহীনতা’কে দায়ী করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আহতদের প্রতি সম্মান রেখে সীমিত পর্যায়ে সেবাদান অব্যাহত থাকলেও সার্বিক চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বলে জানানো হয়। এমন পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ইতোমধ্যে আলোচনায় বসেছে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদল।
বর্ণমালা টেলিভিশন এর সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।