ভোলার পাঁচ কূপে পড়ে আছে বিপুল গ্যাস

ভোলার পাঁচ কূপে পড়ে আছে বিপুল গ্যাস

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২ মার্চ, ২০২৫ | ৫:২৬ 33 ভিউ
দেশে গ্যাস সংকটের কারণে শিল্পকারখানা সচল রাখা নিয়ে যখন উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীরা, তখন ভোলার খননকৃত ৯টি কূপের ৫টিতে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা মূল্যের গ্যাসের মজুত অলস পড়ে আছে। প্রস্তাবিত আরও ১৯টি কূপে ৫ লাখ কোটি টাকার গ্যাসের মজুতের কথা বলছেন ভূতাত্ত্বিকরা। গেল ১৫ বছরে নতুন নতুন পরিকল্পনার ঘোষণা ছিল আওয়ামী লীগ মন্ত্রীদের রাজনৈতিক আশ্বাস। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি কিছুই। গড়ে ওঠেনি অর্থনৈতিক জোন। স্থবির পড়ে আছে শিল্পপার্কের উদ্যোগ। গত ১ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গ্যাসফিল্ড পরিদর্শনে এসে এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যানকে ভোলা পরিদর্শনের কথা বলেন। কিন্তু গত চার মাসে নতুন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। সবশেষ জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ভোলার মজুত গ্যাসে একটি সারকারখানা স্থাপনসহ শিল্পায়নের সম্ভাবনা নিয়ে বেশ কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান। বিশেষ বিবেচনায় জেলায় আবাসিক গ্যাস সংযোগ, ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণ ও একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের শর্তে ভোলার মজুত গ্যাস দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পায়নের দাবি সবার। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)সহ রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনি এজেন্ডায় রয়েছে এই দাবি। একই আহ্বানে সোচ্চার ভোলার গ্যাসরক্ষা দক্ষিণাঞ্চল নাগরিক কমিটি ও ভোলা স্বার্থরক্ষা উন্নয়ন কমিটি। অভিযোগ রয়েছে বিগত সরকারের সঠিক পদক্ষেপ না থাকায় জেলার মজুত গ্যাসের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হয়নি দীর্ঘকাল। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালের ৪ অক্টোবর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার শাহবাজপুর-১ কূপে উত্তোলিত গ্যাসে আগুন প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে প্রথম গ্যাসের মজুত নিশ্চিত করেন। বাপেক্সের নিজস্ব প্রযুক্তিতে প্রথম খননকৃত কূপ এটি। দীর্ঘ ১৩ বছর পর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খনন করা হয় দ্বিতীয় কূপ। ১২ বছরে খনন করা হয় আরও ৭টি কূপ। ৯টি কূপে গ্যাসের মজুত রয়েছে প্রায় ২ দশমিক ১৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। নতুন করে আরও ১৯টি কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি কূপের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। বাপেক্স ভূতাত্ত্বিক জরিপে পরিকল্পনা নেওয়া ৫টি কূপেও আরও এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জেলাব্যাপী ৫ ট্রিলিয়ন গ্যাসের মজুদের সম্ভাবনার কথা জানান গ্যাসকূপ বিশেষজ্ঞ বাপেক্সের সাবেক জিএম মো. আলমগীর হোসেন। ৯টি কূপের মধ্যে বর্তমানে কেবল ৪টি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন করে ২টি বিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্ট, একটি সিরামিক ফ্যাক্টরি, কাজী ফার্মের ফ্যাক্টরিসহ ৫টি ছোট ও মাঝারি শিল্পে ব্যয় করা হচ্ছে দৈনিক মাত্র ৬০ এমএমসিএফ (মিলিয়ন হিসেবে) গ্যাস। অপর ৫টি কূপের গ্যাস অলস পড়ে আছে। বিগত সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার কারণেই এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম শুরু হয়নি। পাশাপাশি সার কারখানাসহ শিল্পকারখানা গড়ে না ওঠায় বছরের পর বছর মাটির নিচেই থেকে যাচ্ছে ৫ লাখ কোটি টাকার গ্যাসের মজুত। এমনটা জানান নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি মোবাশ্বের উল্লাহ চৌধুরী। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের সর্ব দক্ষিণের দ্বীপ জেলা ভোলায় ৫ ট্রিলিয়নের অধিক গ্যাসের মজুত রয়েছে। নতুন ১৯টি কূপ খননের পর তা নিশ্চিত হবে। বাপেক্স ও সুন্দরবন গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সূত্রে বর্তমানে ৯টি কূপ থেকে গড়ে প্রতিদিন ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনযোগ্য। ব্যয় হচ্ছে মাত্র ৬০ থেকে ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। ১৩০ মিলয়ন ঘনফুট গ্যাস অব্যবহৃত ও অলস পড়ে আছে। ভোলা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম নবী আলমগীর বলেন, খুলনা ও চট্টগ্রাম পোর্টের মধ্যস্থলে অবস্থিত দ্বীপ জেলা ভোলা। এ জেলার সঙ্গে নৌ ও সড়কপথে বাণিজ্যিক সুবিধা রয়েছে। এখানে শিল্পকারখানা গড়ে তোলার অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। উৎপাদিত পণ্য সহজে নৌ ও স্থলপথে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সহজে নেওয়া সম্ভব। বর্তমানে এই সুবিধা পাচ্ছে সেলটেক সিরামিক লিমিটেড (টাইলস ফ্যাক্টরি) ও কাজী ফার্মের পোলট্রিখাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গ্যাসফিল্ড ও গ্যাসকূপ পরিদর্শনকালে বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে গ্যাসের ব্যবহার নিশ্চিত হবে। এটা ভোলার জন্য সঠিক পদক্ষেপ হবে। শিক্ষিত ও বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে ও বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান এখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। অনেকে জমিও নিয়েছেন। আমরা আশাবাদী এখানে গ্যাসের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হবে। দেশব্যাপী গ্যাস সংকটের মধ্যে আশার আলো ভোলার গ্যাসসম্পদ। এই সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হবে-এমনটাই আশা করছেন ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ।

বর্ণমালা টেলিভিশন এর সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
কেন ডিসেম্বর-জানুয়ারিই যুক্তিযুক্ত আগামী ৫ দিন যেসব অঞ্চলে বজ্রবৃষ্টি ও ভারী বর্ষণ ভারতের ২০টি যুদ্ধবিমান টার্গেট করেছিল পাকিস্তান গ্রেটা থুনবার্গের সঙ্গে কেমন আচরণ করল ইসরায়েলি সেনারা যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে কারফিউ জারি কারফিউ ভেঙে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ যাদের ফের টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে ইসলাম ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা আরও ১০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত দেশেও করোনার নতুন ধরন সড়কে আবেদনময়ী পোস্টার, ভারতে ৪০টি দুর্ঘটনা কালো জাদুর শিকার হয়েছিলাম : মিষ্টি জান্নাত থাকতে থাকতে নাই, অথবা একটু থেকেও নাই : চঞ্চল চৌধুরী শাকিব-অপুর নতুন গুঞ্জনে যা বললেন বুবলী ত্রাণের নামে মরণ ফাঁদ, ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৭০ ফিলিস্তিনি প্রতিরাতে শতাধিক ট্রাক বালু লুট, সশস্ত্র মহড়া পিছিয়ে পড়ে আলমাদার গোলে ড্র করল ১০ জনের আর্জেন্টিনা শতকোটি টাকার পাথর ১৭ কোটি শার্শায় বিএনপির কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা অসুস্থ ও আহত যুদ্ধবন্দিদের বিনিময় করল রাশিয়া ও ইউক্রেন