ভাইরাসে কাবু নগরবাসী

ভাইরাসে কাবু নগরবাসী

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৫ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৭:০৯ 83 ভিউ
দেশের বিভিন্ন জেলায় গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৯ রোগের ৩০টি প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এদের মধ্যে ১১টি ভাইরাসের প্রকোপ ছিল শুধু রাজধানীতেই। এ ছাড়া রাজশাহীতে দুটি ভাইরাসের প্রকোপ বেশি ছিল। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর ও খুলনার বেশ কিছু এলাকায় ঘুরেফিরে কয়েকটি ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) রোগের প্রাদুর্ভাব-সংক্রান্ত বার্ষিক রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। মূলত মৌসুমি রোগ বা ভাইরাসের হঠাৎ বৃদ্ধিকে প্রাদুর্ভাব বলা হয়। এ ছাড়া ২০২৪ সালে ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যু বছরজুড়ে থাকায় এ ভাইরাসকে প্রাদুর্ভাবের মধ্যে গণনা করা হয়নি। এদিকে ২০২৫ সালে করোনার মতো নতুন একটি ভাইরাস বিশ্বে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। যদিও দেশে এখনও দ্য হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) শনাক্ত হয়নি। তবুও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বসবাসের অনুপযোগী পরিবেশ, ভেজাল খাদ্য, জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি থাকায় ঢাকাতে ভাইরাসের প্রকোপ বেশি। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের মতো বাংলাদেশও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া বেড়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবন-জীবিকা ও স্বাস্থ্যের ওপর। শুধু ভাইরাস নয়, কয়েক বছর ধরে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে ঢাকাতে। তবে করোনা মহামারির মধ্যে মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বাইরের খোলা খাবার না খাওয়া, হাত ধোয়ার অভ্যাস বাড়ায় রোগের প্রাদুর্ভাব কম ছিল। নতুন করে আগের ভাইরাসগুলো আবার ফিরছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, ঢাকায় ভাইরাসের প্রকোপ বেশি হওয়ার বড় কারণ জনসংখ্যা বেশি। দেশ-বিদেশ থেকে কাজের প্রয়োজনে মানুষ ঢাকায় আসে। অনেক ভাইরাস আছে হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। ঢাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি থাকায় এসব ভাইরাসের প্রকোপ বেশি থাকে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, জীবনযাত্রা মান বদলে যাওয়া, ভেজাল খাদ্য, বসবাসের অনুপযোগী পরিবেশ, এডিস মশা বেশি থাকায় অন্য রোগের প্রকোপও ঢাকায় বেশি। তিনি আরও বলেন, এসব ভাইরাসপ্রতিরোধী টিকার বাইরে থাকে নিম্ন আয়ের মানুষ। বস্তি ও ভাসমান লোকদের টিকা নেওয়ার আগ্রহ কম। পরবর্তী সময়ে এই ভাইরাসগুলো যাতে আর না ছড়ায়, সে জন্য এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। বায়ুদূষণে কারও কারও অনেক রোগ দেখা দেয়। তাই বায়ুকে দূষণমুক্ত করতে হবে। এডিস মশার নিধন সম্ভব হলে জিকা-চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে অনেক ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। আইইডিসিআরের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বছরজুড়ে সর্বোচ্চ প্রাদুর্ভাব ছিল তড়কা (অ্যানথ্রাক্স) ভাইরাসের। গত ১২ মাসে এর প্রকোপ দেখা দেয় আটবার। এই ভাইরাস প্রাণী থেকে ছড়ায়। দেশের ১৬টি জেলায় তড়কার রোগী বেশি মেলে। এই রোগে আক্রান্তের ৯৫ শতাংশ বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রাদুর্ভাব ছিল ডায়রিয়ার। গত এক বছরে এ রোগের দাপট চারবার দেখা যায়। প্রায় ১১ লাখ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত এবং দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। একই সঙ্গে ফিরেছে জিকা-চিকুনগুনিয়া। দেশে ২০১৪ সালে প্রথম জিকা ভাইরাস শনাক্ত হয়। ১০ বছর পর আবার এ ভাইরাস আবার ফিরেছে। জিকার সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, এর চিকিৎসা উপসর্গভিত্তিক। সর্বশেষ ২০২১ সালে চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের প্রকোপ ছিল বেশি। গত বছর এই ভাইরাস ফের সক্রিয় হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া আরও ছিল টাইফয়েড জ্বর, চিকেন পক্স, মেনিনজাইটিস, চোখের ভাইরাস, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডিপথেরিয়া, নবজাতক শিশুদের শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা, প্যানডেমিক ইনফ্লুয়েঞ্জা, জলাতঙ্ক, লেপ্টোস্পাইরোসিস ও ইবোলা। এদিকে ২০২১ সালে ডায়রিয়া, করোনা, খাদ্যে বিষক্রিয়া ও মস্তিষ্কের প্রদাহ বেশি দেখা যায়। পরের বছর ১২টি রোগের ২৪ বার প্রাদুর্ভাব ঘটে। ২০২৩ সালে ১৪টি রোগের ২৬টি প্রকোপ দেখা দেয়। আইইডিসিআর দেশের প্রতিটি প্রাদুর্ভাবের তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) কাছে জমা দেয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা দুটি রোগের প্রাদুর্ভাব পর্যালোচনা করে নানা সুপারিশ করে থাকে। তাদের দেওয়া সুপারিশের ভিত্তিতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে সরকার। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ডা. আহমেদ নওশের আলম বলেন, পুরোনো ভাইরাসগুলো নতুন করে কয়েক বছর পর পর ফিরে আসে। যেমন জিকা ও চিকুনগুনিয়া ফের দেখা দিচ্ছে। এসব ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিতে পারে। মানুষের জীবনযাত্রার মান ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনটি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের ভাইরাস শনাক্তের পরিধি বাড়ায় বেশি ভাইরাস শনাক্ত হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ঘুমিয়ে যাওয়া জীবাণুকে জাগিয়ে দিচ্ছে। সারা বছরই ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া, জিকা, নিপাহ ভাইরাস দেখা দিচ্ছে। মানুষের জীবনধারার পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, খাদ্যে ভেজালের কারণেও এটি দেখা দিতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, পুষ্টিহীনতাসহ তাপমাত্রাজনিত শারীরিক জটিলতায় ২০৩০ সালের পর থেকে বিশ্বে প্রতিবছর ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে। ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুসারে, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া বাড়ায় মানুষের স্বাস্থ্যে নানাভাবে প্রভাব পড়ছে। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, জিকাসহ মশাবাহিত বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস নতুন করে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়াচ্ছে। সম্প্রতি নতুন আতঙ্ক এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাব বেড়েছে চীন ও জাপানে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ধাঁচের এ ভাইরাসে এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। ভাইরাসটি করোনার মতোই ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন ২০২৫ সালে আবার করোনার মতো নতুন কোনো মহামারির উদ্ভব হতে পারে। এরই মধ্যে চীন সরকার তাদের দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। অন্য দেশের নতুন ভাইরাস নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। নতুন ধরন মোকাবিলার প্রস্তুতি সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হোসেন বলেন, বিদেশ থেকে বাংলাদেশে ঢোকার নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। সেসব স্থানে পরীক্ষা জোরদার করার মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশ এলে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ছাড়া আইইডিসিআরের নমুনা পরীক্ষা চলমান রয়েছে। সেসব নমুনা থেকে নিয়মিতভাবে জিন বিশ্লেষণ করা হয়। আশা করি, নতুন ভাইরাস এলে আমরা দ্রুততম সময়ে শনাক্ত করতে পারব। আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, প্রতি বছরই রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ে আমরা জরিপ করে থাকি। জরিপে যে পরিস্থিতি উঠে আসে, এটি আমলে নিয়ে প্রতিরোধে মহাপরিকল্পনা করা প্রয়োজন। সমস্যাগুলোকে জরুরি বিষয় হিসেবে না দেখলে আগামীতে অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়বে।

বর্ণমালা টেলিভিশন এর সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
শ্বশুরবাড়িতে মদপানে জামাইয়ের মৃত্যু ‘প্রযুক্তি সরঞ্জাম সংকট, আইন প্রয়োগে ধীরগতি’ মোমেনকে নিয়ে হজম করতে চেয়েছিলেন ডিসি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে নতুন উদ্যোগ ঋণপ্রবাহের গতি সর্বনিম্ন নিরাপদ ক্যাম্পাসের প্রতিশ্রুতি প্রার্থীদের লাগামহীন খেলাপি ঋণ, কমছে সম্পদের পরিমাণ রাজধানীতে নামে-বেনামে অর্ধশতাধিক ‘সিসা বার’ আজকের মুদ্রার রেট: ২৩ আগস্ট ২০২৫ আজকের স্বর্ণের দাম: ২৩ আগস্ট ২০২৫ বর্ষায় ভ্রমণে মাথায় রাখুন এসব বিষয় থানা ব্যারাকে নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণ, তিনজন ক্লোজড নির্বাচন নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন-সংশয় এখনো অধরা সুউচ্চ ভবন ঠাঁই জীর্ণ কুটিরেই ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে আবারও দুর্ঘটনা, নিহত আরও ৩ নির্বাচনে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে নানা চেষ্টা চলছে : তারেক রহমান ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে ৫৮ শতাংশ মার্কিনি : রয়টার্স ইতালির প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর বাতিল দুবাইয়ে যাওয়ার ৪ মাস পরই ৩ কোটির লটারি জিতলেন প্রবাসী হাসারাঙ্গাকে ছাড়াই শ্রীলঙ্কা দল ঘোষণা