
নিউজ ডেক্স
আরও খবর

ফেনী সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত, আহত-১

শিবগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ২ বাংলাদেশি যুবক আহত

নাটোরে সড়কে ৮ জন নিহত ১২ ঘণ্টার মধ্যে ঘাতক ট্রাকচালক গ্রেপ্তার

চলাচল শুরুর আগেই খালে ভেঙে পড়ল ৬ কোটি টাকার সেতু

রূপগঞ্জে কলেজছাত্রীকে অপহরণের পর সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ

যান্ত্রিক ত্রুটি, চট্টগ্রামে ফিরে গেল বিমান

ফরিদপুরে বাস দুর্ঘটনায় নিহত ৩
টানা বৃষ্টিতে ডুবছে ফেনী শহর

টানা বৃষ্টিতে ডুবেছে ফেনী শহরের আবাসিক এলাকা ও রাস্তাঘাট। ভারি বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দশটি স্থান ভেঙে ফেনীর লোকালয়ে পানি ঢুকছে। ভোলার লালমোহনে বাড়ির পাশের ডোবায় ডুবে মারা গেছে দুই বছরের শিশু। এছাড়া ভোলা-লক্ষ্মীপুর ও মনপুরা-ঢাকাসহ ৬ রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বারিশাল, নোয়াখালী, পটুয়াখালী ও শরীয়তপুরের ডামুড্যায়। পিরোজপুরে নদী ভাঙনে ১০ গ্রামের মানুষের যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বরগুনার আমতলীতে পানির নিচে আউশের খেত ও আমনের বীজতলা। পাথরঘাটা উপকূলে বন্ধ রয়েছে হাজারো মাছ ধরার ট্রলার। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ফেনী : হাসিনা সরকারের সময় ফেনী শহরের একের পর এক খাল-নালা দখল করে মার্কেট নির্মাণের কারণে টানা বৃষ্টিতে ডুবেছে ফেনী শহরের আবাসিক এলাকা ও রাস্তাঘাট। শহরের জিরো পয়েন্টে পিটিআই খাল দখল করে পৌরসভার ব্যানারে মার্কেট নির্মাণ, একই সঙ্গে খাজা আহমদ লেক দখল করে পাঁচ শতাধিক দোকান নির্মাণ, শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক ও তৎসংলগ্ন এলাকার পানি নিষ্কাশনের অন্যতম পাগলিরছড়া খাল দখল করে পৌরসভার ব্যানারে মার্কেট নির্মাণ করে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করা হয়। শহরের জলাবদ্ধতা দেখে অনেকেই বন্যা আতঙ্কে রয়েছেন। এটি বন্যার পানি নয়, বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতায় জমা পানি। ফেনী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাময়িক এ জলাবদ্ধতায় আতঙ্কিত না হতে শহরবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন পৌর প্রশাসক গোলাম মো. বাতেন।
এদিকে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত দশটি স্থান ভেঙে গেছে। এতে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। ভোগান্তিতে পড়েছে হাজারো মানুষ। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় মঙ্গলবার রাত থেকে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের মধ্যম ধনীকুন্ডা, নোয়াপুর, শালধর এলাকায় তিনটি, ফুলগাজী উপজেলার দেড়পাড়ায় দুটি, নাপিত কোনায় একটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সিলোনিয়া নদীর মির্জানগর ইউনিয়নের পশ্চিম গদানগর, জঙ্গলঘোনা, উত্তর মনিপুর দাসপাড়া ও মেলাঘর কবরস্থানের পাশে চারটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে অন্তত ১৫ গ্রামের হাজারো মানুষ। এদিকে, রাতে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলা পরিদর্শন করেছেন। এসব এলাকার ৪৩টি স্কুল-মাদ্রাসাকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে ঘোষণা করেছেন।
ভোলা লালমোহন ও চরফ্যাশন : বন্ধ রয়েছে ভোলা-লক্ষ্মীপুর ও মনপুরা-ঢাকা রুটসহ অভ্যন্তরীণ ছয় রুটে লঞ্চ ও সি-ট্রাক চলাচল। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন চট্টগ্রামগামী যাত্রীদের। এদিকে বৈরী আবহাওয়ায় সাগরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত অব্যাহত থাকায় গেল ২০ দিনে ১৫ দিনই ওই ৬ রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে এ অবস্থায় মাছ ধরতে যেতে পারেননি জেলেরা। জেলেদের নৌকা ও ট্রলার নিয়ে পাড়ের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে। ভোলার নদীবন্দর কর্মকর্তা মো. রিয়াদ হোসেন জানান, আবহাওয়া দফর থেকে ৩ নম্বর সংকেত দেখিয়ে যেতে বলায় বন্ধ রয়েছে নৌরুটগুলো। লালমোহনে ঘরের পাশের ডোবায় ডুবে মারা গেছে ২ বছরের এক শিশু। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় পৌরশহরের ৪নং ওয়ার্ড নয়ানীগ্রামে জাহিদ নামের ওই শিশু মারা যায়। শিশুর বাবা মিজান জানান, অব্যাহত বৃষ্টির কারণে ঘরের চারপাশ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে পুকুরের সঙ্গে মিশে গেছে। তার শিশুসন্তান ওই ডোবায় পরে মারা যায়। মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর পানি বেড়ে গেছে। এতে করে উত্তাল হয়ে ওঠেছে মেঘনা-তেঁতুলিয়া। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন চরফ্যাশনের নিম্নাঞ্চলের মানুষ। মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির কারণে নিম্নআয়ের ও খেটে খাওয়া মানুষদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। বেড়িবাঁধের ভেতরে ও বাইরে হাজারও ঘর-বাড়ি ডুবে গেছে।
বরিশাল : নগরীর অধিকাংশ নিম্নাঞ্চলে পানি উঠে গেছে। অন্যদিকে নগরীর গুরুত্বপূর্ণসহ কিছু সড়কে অতীতের মতো জলাবদ্ধতা দেখা না দিলেও শহরতলির নিচু এলাকার অধিকাংশে পানি উঠে ভোগান্তি বাড়িয়েছে জনসাধারণের। আবহওয়া অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল ৬টার আগের ২৪ ঘণ্টায় ৮২.৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বরিশাল নদীবন্দরকে ১ নম্বর ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
নোয়াখালী ও কোম্পানীগঞ্জ : জেলা শহরের সড়ক বিভাগের ফোর লেন সড়ক ছাড়া সব সড়ক ও অলিগলির রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। বৃষ্টিতে অলিগলি ছাড়াও কিছু কিছু প্রধান সড়কে এবং বাসাবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে ১২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ও চরএলাহী ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী লোকজন। বেড়িবাঁধের বাইরের বেশিরভাগ বাড়িঘর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
পটুয়াখালী ও দুমকি দক্ষিণ : পটুয়াখালী জেলা শহরসহ জেলার অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সাগর উত্তাল থাকায় শতশত মাছধরা ট্রলার উপকূলে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিস। দুমকিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
পিরোজপুর : পিরোজপুরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রমত্তা কালিগঙ্গা ও বলেশ্বর নদীর তীব্র স্রোত, ভারী বর্ষণ এবং জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে অন্তত দশ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের শাঁখারীকাঠী-দিঘীরজান সড়কটির ৯০ ভাগেরও বেশি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
আমতলী ও পাথরঘাটা (বরগুনা) : আমতলী উপজেলায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। জলকপাটগুলো থেকে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় এমন জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে বলে জানান কৃষকরা। পানির নিচে তলিয়ে গেছে আউশের খেত ও আমনের বীজতলা। দুচিন্তায় উপজেলার ৩০ হাজার কৃষক পরিবার। পাথরঘাটা উপকূলীয় ট্রলারগুলো সাগরে যাওয়ার রসদসামগ্রী নিয়ে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাগরে যেতে পারেনি।
ডামুড্যা (শরীয়তপুর) : ডামুড্যায় বেশিরভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন ঘরের বাইরে যাননি তেমন একটা। গত ৩৬ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ১৪৫ মিলিমিটার।