
নিউজ ডেক্স
আরও খবর

বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ফুল দেওয়া নিয়ে আ.লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ, এলাকা রণক্ষেত্র

২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু: জয়

আলো নিভিয়ে একাত্তরের কালরাত স্মরণ করল বাংলাদেশ

স্বাধীনতা আমাদের স্বাধীনতা

আইনি বাধায় আটকে আছে রাজাকারের তালিকা

ইউক্রেনের পক্ষে ভোট দিল বাংলাদেশ

বাংলাদেশের ভারসাম্যপূর্ণ আচরণের প্রশংসায় রাশিয়া
সুগন্ধার ভাঙনে হুমকির মুখে বরিশাল বিমানবন্দর

সুগন্ধা নদীর ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়তে যাচ্ছে বরিশাল বিমানবন্দর। ইতোমধ্যে রানওয়ের উত্তরপ্রান্তে ৭৫ মিটারের ভেতরে চলে এসেছে নদী।
চলমান ভাঙন অব্যাহত থাকলে বিমানের উঠানামা ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ১২ হাজার জিওব্যাগ নদী তীরে ফেলা হলেও লাভ হয়নি।
নদী ভাঙনসহ অন্যান্য সমস্যা দেখতে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা থেকে উচ্চপর্যায়ের একটি টিম আসে বরিশালে। তাদের প্রতিবেদনে ভাঙনের কারণে বিমানবন্দরের ‘মারাত্মক ঝুঁকি’র মুখে পড়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এরপরও উল্লেখ করার মতো কোনো উদ্যোগ নেয়নি সিভিল এভিয়েশন।
ওই প্রতিবেদনে নদী ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দেওয়ার সুপারিশ করে দায় সেরেছে কমিটি।
এদিকে কেবল নদী ভাঙনই নয়, টার্মিনাল ভবনের নাজুক দশা, অরক্ষিত রানওয়ে, অ্যাপ্রোনের জটিলতা এবং ক্ষতিগ্রস্ত অ্যাফল্ট সারফেসের উল্লেখসহ বিমানবন্দরের নানা দুরবস্থার চিত্র উঠে এসেছে উচ্চপর্যায়ের টিমের দেওয়া সুপারিশে।
বরিশাল নগর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুরে অবস্থিত বরিশাল বিমানবন্দর। ব্রিটিশ আমলে আকাশ থেকে ফসলের জমিতে কীটনাশক ছিটানোর জন্য তৈরি করা এয়ার স্ট্রিপ থেকে আজকের এ বিমানবন্দরে পৌঁছানো পর্যন্ত স্রেফ কিছু পরিবর্ধন পরিমার্জন ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি।
প্রায় ৩০ বছর আগে নির্মিত ছোট আয়তনের একটি টার্মিনাল ভবন ব্যবহার করে চলছে যাত্রীদের উঠানামা। এ বিমানবন্দরের তেমন কোনো উন্নয়নও হয়নি গত ১২-১৫ বছরে। কেবল হয়েছে সংস্কার ও মেরামত।
গত ৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহম্মেদ কায়কাউস বরিশাল সফরে এলে বিমানবন্দরের নানা অসঙ্গতি তার চোখে পড়ে। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি বন্দরের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন তিনি।
এরপর গত ৩ জানুয়ারি বরিশালে আসে উচ্চপর্যায়ের একটি টিম। বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুকেশ কুমার সরকারের (পরিকল্পনা) নেতৃত্বে টিমে ছিলেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আরিফুজ্জামান। পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী দিপক রঞ্জন দাসসহ বরিশাল বিমানবন্দরের কর্মকর্তারাও ছিলেন তাদের সঙ্গে। বিরাজমান নানা সমস্যার পাশাপাশি তাদেরও চোখে পড়ে নদী ভাঙনের কারণে রানওয়ে হুমকির মুখে পড়ার বিষয়টি।
সরেজমিন বিমানবন্দর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, রানওয়ের উত্তরপ্রান্তে মাত্র ১০০ গজের মধ্যে চলে এসেছে সুগন্ধা নদীর ভাঙন। চলতি শীত মৌসুমেও অব্যাহত রয়েছে ভাঙনের তীব্রতা। যে হারে নদী ভাঙছে তাতে বড়জোড় দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে রানওয়ে ছুঁয়ে ফেলবে সুগন্ধা।
ভাঙনকবলিত ক্ষুদ্রকাঠী গ্রমের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক আ. করিম হাওলাদার জানান, আশির দশক থেকেই চলছে এ ভয়াবহ ভাঙন। নদীর করাল গ্রাসে প্রায় বিলীন হওয়ার পথে ক্ষুদ্রকাঠি গ্রাম। ইতোমধ্যে দুই কিলোমিটারের বেশি পাকা সড়কের পাশাপাশি নদী গিলে খেয়েছে ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামের প্রায় ৫০০ একর জমি, দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন এবং পাঁচটি মসজিদ। নদী ভাঙনের কারণে বসতভিটা হারিয়েছে ছয় শতাধিক পরিবার।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী শাহজাহান খান বলেন, নদী ভাঙনের কারণে আন্তঃজেলা বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের যে রিভার ক্রসিং টাওয়ারটি রয়েছে সেটিও এখন হুমকির মুখে। টাওয়ারের চারদিকে পাইলিং করে রক্ষার চেষ্টা চললেও তা টিকছে না।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা আরাফাত রহমান বলেন, বিমানবন্দরসংলগ্ন নদী তীরেও পাইলিং করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। সেই পাইলিংও এখন নদীগর্ভে। নদী ভাঙনের এ বিষয়টি নিয়ে মিডিয়ায় বহু লেখালেখি এবং আন্দোলন সংগ্রাম হলেও কোনো লাভ হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের এসব বক্তব্যের প্রতিফলনই ফুটে উঠেছে গত ৩ জানুয়ারি ঢাকা থেকে আসা টিমের প্রতিবেদনে।
গত ১৩ জানুয়ারি দাখিল করা ওই প্রতিবেদনে রানওয়ের মাত্র ৭৫ মিটারের ভেতরে চলে আসা নদী ভাঙনের বিষয়টি উল্লেখের পাশাপাশি জরুরি ভিত্তিতে তা প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। এজন্য প্রাথমিকভাবে চার কোটি টাকা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করা হয় সেখানে। রানওয়েসংলগ্ন ৫০০ মিটার এলাকাজুড়ে এখনই কাজ শুরু করা প্রয়োজন বলেও সুপারিশ করা হয়।
এছাড়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা অন্যান্য সমস্যা প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা বেষ্টনীর দুর্বলতা বিষয়ে। অনেক জায়গায় বেষ্টনীর দেয়াল ভেঙে লোক চলাচলের পথ তৈরি, দেয়ালের নিচের মাটি সরে গিয়ে মানুষ ও গবাদি পশুর রানওয়েতে ঢুকে পড়া, অ্যাপ্রোনের দুরবস্থা, স্বল্প আয়তনের অ্যাপ্রোনের কারণে বিমান পার্কিংয়ে জটিলতা, টার্মিনাল ভবনের দুরবস্থা, স্বল্প আয়তনের টার্মিনাল ভবনের কারণে যাত্রী ধারণে জটিলতা এবং অ্যাফল্ট সারফেস ক্ষতিগ্রস্ত থাকার কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন পরিদর্শন টিমের প্রধান অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) সুকেশ কুমার সরকার।
পরিদর্শন টিমের ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিমানবন্দর রক্ষায় কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান পর্যন্ত দফায় দফায় কল দিলেও ধরেননি তারা।
বন্দর পরিদর্শনে সুকেশ কুমার সরকারের সঙ্গে বরিশালে আসা নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আরিফুজ্জামানের মোবাইলে ফোন দিলে কেটে দিয়ে ফিরতি এসএমএসে ‘পরে যোগাযোগ করছি’ বার্তা দিলেও তিনি আর যোগাযোগ করেননি।
তবে বরিশাল বিমানবন্দরের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী মশিউর রহমান বলেন, নিরাপত্তা বেষ্টনীর যেসব দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো দূর করার কাজ শুরু হয়েছে। ঢাকা থেকে আসা টিম যেসব সমস্যা চিহ্নিত করেছে তা নিরসনেও নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের চেয়ারম্যান। নদী ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। সবকিছু মিলিয়ে খুব শিগগিরই সমস্যাগুলোর সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করছি আমরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দিপক রঞ্জন দাস বলেন, সুগন্ধা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে ১২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে বিমানবন্দর রক্ষার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি আমরা। এছাড়া ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ভাঙনস্থলে ফেলা হয়েছে ১২ হাজার জিও ব্যাগ। এসবের পাশাপাশি জরুরিভিত্তিতে আরও তিন কোটি টাকা চেয়েছি আমরা। এ টাকা পাওয়া গেলে ব্লক ফেলাসহ পাইলিং করে প্রাথমিকভাবে নদী ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। আশা করি খুব শিগগিরই এসব কাজ শুরু করতে পারব আমরা।
দৈনিক ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।