বিচিত্র ভালোলাগা

স্মৃতির মালিকায় রং তুলিতে আঁকা নাই,কল্পনার কাল্পনিক স্বপ্নের আদলে হুদয়ের অন্তরালে লিখা রহিয়াছে মনের কালিমায় যাহা মুছিবার নয়। সে
সোজুগ পাইলেই ইকি ঝুকি দিয়া আমার মনটাকে বেকুল করিয়া দিয়া থাকে, আজ আমি তাহারি কথা বলিতে বসিয়াছি সত্যের আদলে একটু রং চং মাখাইয়া।
আমাদের গ্রামের পাস দিয়া এক খানা নদী বহিয়া গিয়াছে, বর্ষা কালে নদী খানা কানাই কানাই ভরিয়া গেলেও, শীত,বসন্ত কালে তাহা আবার শুখাইয়া গিয়া হাটু জল থাকিত। নদীর দুই ধার দিয়া মাইলের পর মাইল বেত,আর নাটাই বোন, সারি-সারি হিজোল গাছ, কোথাও আবার নাইবার ঘাট রহিয়াছে। বসন্ত কালে হিজোল গাছের নিচে বসিয়া আমরা তিন বন্ধু, চুরি করিয়া বিড়ি খাইতাম আর গল্প করিয়া সময় কাটাইতাম।
আমি, আমার বাবার আর্থিক অবস্তা ভালো থাকাই গ্রামের ডানপিটে ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিলাম,আমার বন্ধু শতিস সন্মানীয় ঘরের শান্ত ছেলে, কমলতার বাবা দিন মুজুর, নদীর কুলে সরকারির জায়গায় এক খানা ঘর তুলিয়া বাস করিত।
আমরা তিন বন্ধু এক সঙ্গে লেখা পড়া করিতাম,তখন আমাদের বয়স ছিল ১৬/১৭ বছর, কমলতা বয়েসে একটু কম হইলেও চালাক চুতুরে কম ছিল না,আমারা তিন বন্ধু এক জন আরেক জনকে না দেখিয়া এক ডন্ড থাকিতে পারিতাম না।
কমলতা মেয়ে মানুষ হইলেও আমাদের কখনো তাহা মনে হয় নাই,আমরা সর্বদায় কমলতার বাড়ীর পাসে হিজোল গাছের তলাই বসিতাম। কমলতা ও কখনো আমরা পুরুষ মানুষ এমনটি ভাবিত না। এয়ারকি আড্ডায় মারা-মারি, পাড়া-পাড়ি কোনো কিছুতেই সে পাছ পড়িত না। এমনি করিয়াই আমাদের দিন কাল চলিতে ছিল।
বছর দুয়েক পরে এক দিন বিকেল বেলাই হিজোল তলাই গিয়া দেখিলাম, কমলতা একাই বসিয়া রহিয়াছে, শতিস আসে নাই, এমনটি কখনো হয়না, আমি কমলতাকে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা না করিয়া, তাহার মুখের দিকে তাকাইয়া দেখিলাম,সে সব সময় হাসি খুসি থাকিত, আজও তেমনটিই রহিয়াছে।
কমলতা মেয়ে মানুষ এমন ভাবনা কখনোই আমার মনে আসে নাই,আজ আমার মনে হইল কমলতা মেয়ে, তাহার চেহারাই প্রতিটা অঙ্গ-প্রতঙ্গে তাহা প্রমান দিতেছে, সে বেশ বড় হইয়াছে।
আমার মনের ভাব খানা তাহার সামনে প্রকাশ করিতে না পারিয়া, একটু ঘুরাইয়া ফিরাইয়া কহিলাম।
কমলতা! তুই মেয়ে মানুষ ঠিকই,কিন্তু দেখতে মটেও ভালো নয় রে...।তুই দেখতে একটু কালো, নাক টাও ভালো না,চোখ দুই খানা কেমন যেনো।
কমলতা অত্যন্ত চতুরতার সহিদ এক গাল হাসিয়া কহিল,বন্ধু! তবুও তো আমি তোর বন্ধু, বন্ধুর কোনো ভালো মন্দ হয় না,আর তাহা ছাড়া, এই কথা গুলি যে তোর মনের কথা নয় তাহা আমি বুঝিতে পারিয়াছি।
তাহার পরে কমলতা অন্য দিকে তাকাইয়া কি যেনো দেখিতে লাগিল না কি ভাবিতে লাগিল তাহা আমি বুঝিতে না পারিয়া
একটু খুলা মেলা ভাবেই কহিলাম, কমলতা!তোকে আমার খুব ভালো লাগে।
সে যে দিকে তাকাইয়া ছিল, সে দিকে তাকাইয়াই কহিল, জানি!
আমি তাহার এক কথার উত্তর আশা করি নাই,তাই আবার কহিলাম, আমি সর্বদাই তোকে কাছে পাইতে চাই!
এবারও সে আমার দিকে না তাকাইয়া তেমন করিয়াই কহিল,জানি!
এবার আমি কন্ঠ স্বর বাড়াইয়া,একটু রাগ মিসাইয়া কহিলাম, তোকে ছাড়া আমি যে বড় একা! তাহা তুই বুঝিস না?
এবার সে আমার দিকে তাকাইয়া একটু মিষ্টি-মিষ্টি হাসিয়া কহিল,এমন কথা কিছু ক্ষন আগে শতিসও আমাকে বলিয়াছে। তাহারও আমাকে ছাড়া একা মনে হয়।
এই কথা গুলি বলিয়া সে কি যেনো ভাবিতে লাগিল,দেখিলাম তাহার মুখ খানা ধীরে ধীরে সুখাইয়া আসিল,তাহার চোখের কনাই জলের ফোটা আস্তে আস্তে বড় হইতে লাগিল, সে এমনিই অবস্তাই অবিচল থাকিয়া শুধু মাত্র ঠোট দুই খানা একটু খানি নড়াইয়া উত্যান্ত করুণ কন্ঠে কহিল, এতো দিনে বুঝিলাম আমি মেয়ে মানুষ আর তোরা ছেলে মানুষ।
আমি অনেক খানি চিন্তা ভাবনা করিয়া ঠান্ডা মাথাই শান্ত স্বরে কহিলাম, কমলতা! তুই শতিসের কাছেই থাক,তবুও তো তোকে রোজ দেখতে পাইবো,আমার মনটাকেও বুঝাইতে পারিবো, ইহায় যে আমার বড় পাওযা।
ইহার মধ্যে হঠাৎ করিয়া শতিস আমিয়া আমাদের মাঝে বসিয়া পড়িল।আমাদের কিছু কথা শতিস হয় তো বা দুর থেকেই শুনিয়াছিল।
কমলতা বিষন্ন মনে এক বার আমার দিকে আর এক বার শতিসের দিকে তাকায়া কি যেনো ভাবিয়া, ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে কহিতে লাগিল, তোরা দুই জন আমার ছট্ট বেলার বন্ধু,কে মেয়ে কে ছেলে তাহা কখনো বুঝি নাই কেই কখনো ভাবি নাই, আমি নিজেকে কখনো মেয়ে মানুষ ভাবি নাই,আজ আমি বুঝিতে পারিতেছি, তোরা দুই জন ছেলে আর আমি মেয়ে।
আমি খেয়াল করিয়া দেখিলাম কমলতার দুই চোখ দিয়া জল গড়িয়া পড়িতেছে, সে তাহার দুই হাত দিয়া চক্ষু দুই খানা মুছিয়া, নিজেকে সংযতো করিয়া শান্ত কন্ঠে কহিল,আমাকে ছড়িয়া শতিস থাকিতে পারিবে না, আমাকে ছাড়া তুই বড় একা।
আমার কথা তো কখনো তোরা ভাবিয়া দেখিস নাই।
আমার এই দেহ খানার অর্ধেক খানি শতিসের আর অর্ধক খানি তোর, আমাকে তোরা দুই জন ভাগ করিয়া লইয়া যা।
আমি অনেক ভাবিয়া দেখিয়াছি, তোদের দুই জনই আমার! আমি এক জনকে চাইনা......
বলিয়াই সে দুই জনকে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে কাঁদিতে লাগিল
দৈনিক ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।